রোজ ভ্যালি মামলায় ওড়িশা হাইকোর্টে CBI গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডু’র জামিনের আর্জির কড়া বিরোধিতা করেছে ৷ চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি রোজ ভ্যালি কেলেঙ্কারিতে CBI গ্রেফতার করে শুভ্রা কুণ্ডুকে৷ CBI যেহেতু রোজ ভ্যালি- কাণ্ডের FIR ভুবনেশ্বরে করেছে, তাই এই মামলায় গ্রেফতারের পর সবাইকেই নিয়ে যায় ভুবনেশ্বরে৷ জানুয়ারি থেকে ভুবনেশ্বরেই CBI হেফাজতে রয়েছেন রোজ ভ্যালি কর্ণধার গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডু৷ রোজ ভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুন্ডুকে CBI আগেই গ্রেফতার করেছে৷ ২০১৫ থেকে জেলে তিনি।

ওড়িশা হাইকোর্টে শুভ্রার জামিনের আর্জির বিরোধিতা করে CBI বলেছে, গৌতম কুণ্ডুর স্ত্রী শুভ্রা কুণ্ডুর বিরুদ্ধে রোজভ্যালির বহু কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। CBI-এর দাবি, প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার হদিশ নেই। একা শুভ্রার পক্ষে এত টাকা সরানো সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এই মামলার প্রাক্তন তদন্তকারী ইডি অফিসার মনোজ কুমার এবং অন্যান্যদের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হয়েছে এবং প্রমান মিলেছে৷ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার পর জেল থেকে যাঁদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলতেন গৌতম, তাঁদের মধ্যে অন্যতম শুভ্রা। কী করা উচিত আর কী নয়, কাকে সংস্থার কোন পদে রাখা উচিত, কাকে কোথায় সরানো উচিত, ফোনে এ নিয়ে তাঁকে পরামর্শ দিতেন গৌতম। টাকাপয়সা কোথায় সরিয়ে ফেলতে হবে তা-ও শুভ্রাকে ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।

শুভ্রা কুণ্ডুর জামিনের বিরোধিতা করে CBI বলেছে, তদন্তে আপাতত জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ের ওবেরয় স্প্রিং এবং কলকাতার সাউথ সিটিতে বেশ কয়েক কোটি টাকার ফ্ল্যাট আছে৷ গোয়েন্দাদের অনুমান, শুভ্রা হয়তো বিদেশেও টাকা পাচার করে থাকতে পারেন, বিদেশেও সম্পত্তি রয়েছে৷ রোজভ্যালি অর্থলগ্নি সংস্থার ডিরেক্টর হিসাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলে স্রেফ বিলাসবহুল জীবন কাটাতে ওই টাকা খরচ করেছেন৷

এ ছাড়াও CBI শুভ্রা কুণ্ডু বিরুদ্ধে আদালতে অসত্য তথ্য পেশ করার অভিযোগ এনেছে৷ শুভ্রা তাঁর জামিনের আর্জিতে স্বামী গৌতম কুণ্ডু জামিন পাওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন৷ CBI- এর তরফে বলা হয়েছে, গৌতম কুণ্ডু এখনও পর্যন্ত কোনও আদালতে জামিন পাননা৷ মাঝে একবার ৩-৪ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁর বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য৷

CBI বলেছে, ED-কর্তা তথা রোজভ্যালি কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার মনোজ কুমারের সঙ্গে শুভ্রা কুণ্ডুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো৷ এই অফিসারের সাহায্য নিয়েই শুভ্রা বার বার তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করেছেন, তথ্যপ্রমান গোপন করেছেন৷

শুভ্রা কুণ্ডুকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তদন্তকারীদের হাতে এসেছে৷ তাঁর বয়ানের ভিত্তিতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক তথ্য, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে৷ সেগুলি থেকে আরও তথ্য পাওয়ার পর তার ভিত্তিতে তদন্ত চলছে৷

শুভ্রা এবং তাঁর স্বামী, রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু বেশ কয়েক বছর ধরে এক ED-কর্তা, আয়কর দফতর এবং কিছু পুলিশের সাহায়তায় তাঁরা সাধারণ মানুষের টাকা নয়ছয় করেছেন৷ ঠিক কত টাকা আত্মসাৎ করেছেন, তা এখনও সঠিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি৷ তদন্ত চলছে৷

CBI দাবি করেছে, রোজভ্যালি নিয়ে নানা প্রশ্নের জবাব এখনওএড়িয়ে যাচ্ছেন শুভ্রা। সদুত্তর দিচ্ছেন না। এছাড়াও বিভিন্ন সূত্রে শুভ্রা কুণ্ডুর বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ মিলেছে বলেও দাবি করা হয়েছে৷ এই মুহুর্তে শুভ্রা কুণ্ডুকে জামিন দেওয়া হলে তদন্ত বিঘ্নিত হবে৷ আশঙ্কা রয়েছে, শুভ্রা কুণ্ডু জামিন পেলেই ফেরার হয়ে যাবেন বলে CBI দাবি করেছে ৷
