নন্দীগ্রাম-ভোটে কারচুপি: হাইকোর্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মামলার শুনানি ২৪ জুন থেকে

নন্দীগ্রামের উত্তেজনা এবার কলকাতা হাইকোর্টে।

ওই কেন্দ্রের ভোটের ফলকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে ‘ইলেকশন পিটিশন’ দাখিল করেছেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷

শুক্রবার হাইকোর্টের বিচারপতি কৌশিক চন্দের এজলাশে আবেদনকারী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী গোপাল মুখোপাধ্যায় মামলাটি ‘মেনশন’ বা উল্লেখ করে বলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই ‘ইলেকশন পিটিশন’-এর দ্রুত শুনানি প্রয়োজন৷
এই সময়ে বিচারপতি বলেন, আবেদনকারীকে ভার্চুয়াল শুনানিতে উপস্থিত থাকতে হবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনজীবী গোপাল মুখোপাধ্যায় আদালতকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের কিছু নির্দেশের রেফারেন্স অনুযায়ী আবেদনকারী ভার্চুয়ালি থাকতে পারেন, তবে বাধ্যকতা কিছু নেই৷

বিচারপতি জানান, মেনশনের ভিত্তিতে আগামী ২৪ জুন, বৃহস্পতিবার থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাখিল করা ‘ইলেকশন পিটিশন’- এর শুনানি শুরু হবে৷

হাইকোর্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাখিল করা ‘ইলেকশন- পিটিশন’-এ নন্দীগ্রামের নির্বাচন ও ফলঘোষণা নিয়ে কারচুপি-সহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে৷ আবেদনে বলা হয়েছে,
◾১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮০, ৮০এ, ৮১, ১০০ এবং ১২৩ ধারায় মামলা করা হয়েছে ৷
◾বিজেপি প্রার্থী নির্বাচনী বিধি এড়িয়ে ভোট পেতে টাকা বিলি করেছেন৷
◾এলাকায় বেআইনি উপায়ে বিজেপি প্রার্থী প্রভাব খাটিয়েছেন।

◾নন্দীগ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়িয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।

◾বিজেপি প্রার্থী ধর্মের ভিত্তিতে ভোট চেয়েছেন।

◾বিজেপি প্রার্থী সরকারি আধিকারিকদের সাহায্য নিয়েছেন এবং বুথ দখল করেছেন।

রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা নিয়েও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদনে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে:
◾২ মে গণনার সময় একাধিক গরমিল ও কারচুপি হয়। তৃণমূল তখনই পুনর্গণনার দাবি জানান। কিন্তু কোনও কারণ না জানিয়েই সেই আর্জি খারিজ করে দেন রিটার্নিং অফিসার।

◾আপত্তি জানানো সত্ত্বেও রিটার্নিং অফিসার ২১-সি ফর্মে সই করে বিজেপি প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করে দেন।
◾প্রদত্ত ও প্রাপ্ত ভোট সংক্রান্ত এবং গণনা সংক্রান্ত ১৭-সি ফর্মে কারচুপি ও গরমিল হয়েছে।

◾সংবিধান এবং আইন সম্পূর্ণ লঙ্ঘন করে ভোট হয়েছে নন্দীগ্রামে।

◾জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১০০ ধারা অনুযায়ী, নন্দীগ্রাম কেন্দ্রের ভোটকে বাতিল ঘোষণা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

আইনে বলা আছে, ভোটের ফল নিয়ে অভিযোগ থাকলে ফলপ্রকাশের ৪৫ দিনের মধ্যে ‘ইলেকশন পিটিশন’ দাখিল করতে হয় ৷ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশ হয় ২ মে ৷ সেই হিসাব অনুসারে ৪৫ দিনের মধ্যেই হাইকোর্টে ইলেকশন পিটিশন দাখিল করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

প্রসঙ্গত, গত ২ মে নন্দীগ্রামের ফল ঘোষণার পর একাধিক অভিযোগে সরব হয়েছিলেন মমতা। তখন তিনি বলেছিলেন, “নন্দীগ্রামে কী রকম ভোটগ্রহণ হচ্ছে দেখেছে সবাই। ফলের দিন ৪০ মিনিট লোডশেডিং করে রেখেছিল, সার্ভার ডাউন করে রেখেছিল, EVM পাল্টে দিয়েছে, EVM যেন আলাদা করে রাখা হয়, বিকৃত না করা হয়, EVM-এর ফরেনসিক টেস্ট হোক। দুই পর্যবেক্ষক নিরপেক্ষ ছিলেন না। সব জায়গায় এক ফল, আর নন্দীগ্রামে আলাদা ফল কী করে হয়? ফল ঘোষণার পরের দিন,গত ৩ মে, নন্দীগ্রামের ফলাফল নিয়ে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, একজনের পাঠানো এসএমএস পেয়েছি, তাতে লেখা, পুনর্গণনার নির্দেশ দিলে লাইফ থ্রেট হতো।

তখনই আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী। সেই মতোই হাইকোর্টে এই মামলা।

আরও পড়ুন:বিজেপির বৈঠকে আদি-নব্য লড়াই প্রকাশ্যে, আক্রমণে জেরবার শিব-অরবিন্দি-অমিত