শিকড়ের টানে মার্কিন মুলুক থেকে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর পাঠাচ্ছেন খড়দহের প্রদীপ ঘোষ

সালটা ছিল ১৯৬৮।
উত্তর ২৪ পরগনার খড়দহ থেকে সোজা পাড়ি দিয়েছিলেন মার্কিন মুলুকে। তিনি অর্থনীতিবিদ প্রদীপ কুমার ঘোষ। সেই সময় থেকে আর দেশে ফেরা হয়নি। এতগুলো বছর বিদেশেই থেকেছেন। কিন্তু মনপ্রাণে বাঙালির মন কিন্তু পড়েছিল সেই জন্মভিটার দিকেই। এমনকী এই কোভিড অতিমারির সময়েও নিজের ভিটেমাটির মানুষগুলো কেমন আছে তা ভেবে ভেবেই দিন কাটে তাঁদের। হাভার্ড থেকে পাশ করা এই অর্থনীতিবিদ মার্কিন মুলুকে অনেক পুরনো প্রবাসীদের কাছে বাঙালিবাবু। ১৯৬৮ সালে স্নাতক পড়তে বিদেশযাত্রা। নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোনমিক্সে ডক্টরেট। পড়েছেন হাভার্ডে। তাঁর লেখা বই বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যতালিকার অন্তর্গত। ২২ বছর সেখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। শুধু পড়াশোনাই নয়, একইসঙ্গে বাঙালির সনাতনী ঐতিহ্য-আচারকেও সে দেশে তুলে ধরেছেন। ওয়াশিংটনে কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছেন প্রদীপবাবু।
আসলে এ দেশের সঙ্গে নিজেকে এভাবেই প্রতি নিয়ত বেধে রাখতে চেয়েছেন মানুষটি। স্ত্রীও বাঙালি। দক্ষিণ কলকাতার বিজয়গড়ের মেয়ে। বাংলার প্রতি তাই টানটা একটুও কমেনি ।
প্রদীপবাবুর ইচ্ছা এ দেশে তাঁর একটা স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান গড়া। যে প্রতিষ্ঠান করোনার মতো দুর্দিনে মানুষের কাজ করবে। সে কাজ অবশ্য চলছে। এখনও পর্যন্ত ৩৫০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পাঠিয়েছেন তিনি। প্রচার বিমুখ মানুষটি যেটা প্রয়োজন ঠিক জিনিসটা ঠিক হাতে যাতে পৌঁছতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে চান। ৩৫০টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটরই তিনি স্বাস্থ্য দফতরকে পাঠিয়েছেন। আবার কোনও কোনওটা গিয়েছে নবনির্বাচিত বিধায়কদের কারও কাছে।
অর্থনীতিতে পিএইচডি করা মানুষটি সাত সমুদ্র তেরো নদীর পার থেকে তাই অকপটে বলতে পারেন , আমি রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। স্বামী নিত্যানন্দ মহারাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছেটা বরাবরই ছিল। দেশের মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছেটা বাইরে গিয়ে আরও বেড়েছে বই কমেনি।
এখনও পর্যন্ত ২৫টির মতো বই লিখেছেন খড়দহের সূর্যসেনের এই মানুষটি।
যে গ্রাম এমন গুণীজনের শৈশবের সাক্ষী, সেখানকার মানুষের জন্য লাইব্রেরি, স্কুল করে দিয়েছেন। নিজের উপার্জনের অর্ধেকটাই দিয়ে দেন দেশের মানুষের জন্য। করোনার সময় শুধু অক্সিজেন নয় আরও অনেক সাহায্যের ব্যবস্থা করেছেন । ১০০ জনের বেশি বৈজ্ঞানিক কাজ করছেন জনস্বাস্থ্য নিয়ে তাঁর তৈরি ইনস্টিটিউটে। কী করে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গির মতো রোগ সারানো সম্ভব, তার উপায় খুঁজে বের করা কাজ। সে তালিকায় এখন নবতম সংযোজন করোনা।

Previous articleনেইমারকে বাদ দিয়েই টোকিও অলিম্পিক্সের জন‍্য দল ঘোষণা করল ব্রাজিল
Next articleউচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ কীভাবে হবে ?