নারদ-মামলায় মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি গৃহীত সুপ্রিম কোর্টে, হাইকোর্টে ‘হলফনামা-শুনানি’ ২৯ জুন

দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর দেশের শীর্ষ আদালত গ্রহণ করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবেদন৷

সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার বলেছে, নারদ-মামলায় হলফনামা জমা নেওয়ার জন্য হাইকোর্টে নতুন করে আবেদন জানাতে হবে মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকারকে। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সেই আবেদন খতিয়ে দেখার জন্য কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চকে নির্দেশও দিয়েছে শীর্ষ আদালত ৷

সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের বিচারপতি বিনীত সারিন ও বিচারপতি দীনেশ মাহেশ্বরীর এজলাসে এদিন মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পেশ করা আবেদনের ভিত্তিতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷
নির্দেশে বলা হয়েছে,

(১) হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী এবং রাজ্য সরকার, তিন পক্ষকেই নতুন করে আবেদন পেশ করে জানাতে হবে, ‘ইতিমধ্যেই দাখিল করা আমাদের হলফনামা গ্রহণ করা হোক৷’ এই আবেদন করতে হবে আগামী ২৮ জুন৷

(২) এই আবেদনের কপি আগাম পাঠাতে হবে CBI-সহ সব পক্ষকে৷

(৩) CBI প্রয়োজন মনে করলে এই আবেদনের জবাব দিতে পারবে৷

(৪) হাইকোর্টে বিচারাধীন নারদ- কাণ্ডের মূল মামলা শোনার আগে বৃহত্তর বেঞ্চকে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে পেশ করা নতুন আবেদনের নিষ্পত্তি করতে হবে ২৯ জুন৷

এদিন, শীর্ষ আদালতে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে সওয়ালে বলা হয়, কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে চালু থাকা মামলায় CBI তাঁকে পক্ষভুক্ত করেছে৷ অথচ তাঁর হলফনামা জমা নেয়নি কলকাতা হাইকোর্ট। গত ৯ জুন তাঁর হলফনামা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে হাইকোর্ট। যে বিষয়টি সামনে এনে CBI নারদ- মামলায় তাঁকে পক্ষভুক্ত করেছে, সে বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নিজের বক্তব্য পেশ করতে চান হলফনামার মাধ্যমে৷ নিজের বক্তব্য জানানোর সুযোগ থেকে, তাঁকে বঞ্চিত করেছে বৃহত্তর বেঞ্চ৷ বৃহত্তর বেঞ্চে তাঁকে হলফনামা পেশ করার অনুমতি দেওয়া হোক৷ এই একই আর্জি জানিয়ে শীর্ষ আদালতে আবেদন জানান রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক এবং রাজ্য সরকারও৷ একইসঙ্গে সব আবেদনের শুনানি হয় বিচারপতি বিনীত সারিন ও বিচারপতি দিনেশ মাহেশ্বরীর এজলাসে৷

মুখ্যমন্ত্রী-সহ তিনজনের তরফে সর্বোচ্চ আদালতে সওয়াল করেন বিশিষ্ট আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদি এবং রাকেশ সিং৷ ভার্চুয়াল এই শুনানির একদম শেষভাগে মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষে যোগ দেন আইনজীবী অভিষেক মনু সিংভি’ও৷ CBI-এর তরফে এদিনের সওয়ালে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে দেশের সলিসিটর- জেনারেল তুষার মেহেতা মুখ্যমন্ত্রীর আবেদনের বিরোধিতা করেন৷
দীর্ঘ সওয়াল-জবাবের পর এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মলয় ঘটক এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে পেশ করা আবেদনের মান্যতা দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট৷ যদিও নারদ-কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর হলফনামা জমা না নেওয়ার এই আর্জির শুনানি হবে হাইকোর্টেই৷

প্রসঙ্গত, গত ১৭ মে নারদ-কাণ্ডে গ্রেফতার হন রাজ্যের ৪ নেতা-মন্ত্রী। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে আদালতে CBI অভিযোগ করে, গ্রেফতারির প্রতিবাদে নিজাম প্যালেসের CBI দফতরে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা৷ CBI-এর অভিযোগ,তাঁদের দফতরে এসে ধর্নায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি অভিযোগ, এই মামলার বিচার চলাকালীন আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। এই ঘটনার পরেই CBI নারদ মামলা অন্যত্র সরানোর দাবি করে আদালতে৷ তাদের দাবি, প্রভাবশালীদের উপস্থিতির ফলে নিম্ন আদালতের শুনানি নিরপেক্ষ হয়নি এমন ধারণা তৈরি হবে জনমানসে। ওদিকে গত ২১ মে থেকে মামলা স্থানান্তর নিয়ে হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে চলছে শুনানি। ঘটনাচক্রে CBI এই নারদ -মামলায় পক্ষভুক্ত করে মুখ্যমন্ত্রী এবং আইনমন্ত্রীকে৷ গত ৯ জুন মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর তরফে হলফনামা জমার দেওয়ার আবেদন জানান আইনজীবী রাকেশ দ্বিবেদি। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে জানায়, এই হলফনামা পেশ করতে বাড়তি সময় নেওয়া হয়েছে৷ এই মুহুর্তে নতুন কোনও হলফনামা গ্রহণ করা হবেনা৷ হলফনামার ভিত্তিতে সওয়াল করার অনুমতিও দেওয়া হবেনা৷ কারণ, মূল মামলায় CBI-এর বক্তব্য পেশ করা হয়ে গিয়েছে৷ মামলা দীর্ঘদিন ধরে বিচারাধীন৷ নতুন কোনও হলফনামা গ্রহণ করা হলে, তার শুনানিতে ফের সময় লাগবে৷ তবে মামলার নথি’র সঙ্গে সংযুক্ত রাখা হবে৷ ওদিকে, মুখ্যমন্ত্রী মূলত তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব দিতেই হলফনামা জমা দেওয়ার আবেদন করেছিলেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল জানান, এক পক্ষের সওয়াল শেষে নতুন করে হলফনামা নিলে তার উপর ফের আলোচনা হবে। তাই তখন মুখ্যমন্ত্রীর হলফনামা জমা নেয়নি হাইকোর্ট। হাইকোর্টের ওই দিনের নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করেই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী ও রাজ্য সরকার ৷

এই মামলায় CBI পক্ষভুক্ত করে তৃণমূল সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও৷ যদিও কল্যাণ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাঁর হলফনামা জমা করেছেন এবং বৃহত্তর বেঞ্চ তা গ্রহণও করেছে৷

Previous article‘সেই কালো দিন ভোলার নয়’, এমার্জেন্সির ৪৬ তম বর্ষে মোদি-শাহের নিশানায় কংগ্রেস
Next articleভুয়ো IAS দেবাঞ্জনের অফিসে মোবাইল নিষিদ্ধ, কড়া নজরদারি কর্মীদের ওপর!