স্যান্ডউইচওয়ালা থেকে ট্রাজেডি কিং… ইউসুফ থেকে দিলীপের বর্ণময় উত্থান

ইচ্ছে ছিল খাবারের দোকান খুলবেন। নিজের ক্যান্টিন খুলে স্যান্ডউইচ বানাবেন। শুরুও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ভাগ্যলক্ষী নিজের হাতে যার জন্য বরমাল্য নিয়ে দাঁড়িয়ে, তাঁর কি আর সাধারন খাবারের দোকান নিয়ে মেতে থাকলেই চলে? তাই ঠিক সূত্র মারফত চলে এলেন মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। তারপর একটার পর একটা ছবি করতে করতে হয়ে গেলেন বলিউডের অন্যতম ‘ট্র্যাজেডি কিং ‘। বলিউডের প্রথম সাকসেসফুল ‘ খান ‘ । দীর্ঘ রোগভোগের পর বুধবার তাঁর মৃত্যু হল। ছবি থেকে তিনি বহুদিনই বিদায় নিয়েছিলেন। তবু দিলীপ কুমারের প্রয়াণে বিরাট একটা শূন্যস্থান তৈরি হল বলিউডে। যা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। বলা যায় এই কিংবদন্তীর বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে একটা যুগেরও অবসান হল।

 

তার আসল নাম ইউসুফ খান। নায়ক হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন দিলীপ কুমার নামে। দিলীপ কুমারের ব্যাক্তিগত জীবন ছিল সেলুলয়েডের মতই রঙিন। বহু উত্থানপতন। বহু প্রেম। সফল অ-সফল ভালোবাসা। সবশেষে বলিউডের চিরকালীন গ্ল্যামারগার্ল সায়রা বানুর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা। সেই সম্পর্কই শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রয়ে গেল। মৃত্যু মুহূর্তেও সায়রা বানু তার স্বামীর হাত ছেড়ে যাননি। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯৮। দীর্ঘ দিন ধরেই নানা অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ফুসফুসে ফ্লুইড জমছিল বারবার। গত এক বছর ধরে একরকম শয্যাশায়ীই ছিলেন দিলীপ।

দিলীপ কুমারের বাবা ছিলেন অবিভক্ত ভারতের পেশোয়ারের সম্পন্ন ব্যবসায়ী। তবে বাবা এবং ছেলে দুজনেই জেদি , এককাট্টা , একরোখা। তাই নানা বিষয় নিয়ে প্রতি মুহূর্তে দুজনের মন কষাকষি লেগেই থাকত। কথা কাটাকাটি করে এক দিন বাড়ি ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়লে ইউসুফ। বাড়ি পেশোয়ারে হলেও ইউসুফ পড়তেন নাসিকের বার্নেস বোর্ডিং স্কুলে। বাড়ি ছেড়ে চলে এলেন পুণেতে। সেখানে আলাপ হল এক ক্যাফে মালিকের এবং এক অ্যাংলো ইন্ডিয়ান দম্পতির সঙ্গে। জানালেন তার নিজের ক্যান্টিন খোলার ইচ্ছের কথা।ব্যবস্থা হল। তারাই নিয়ে গেলেন এক ক্যান্টিন কন্ট্রাক্টরের কাছে। সেনাবাহিনীর ক্লাবের কাছে একটি স্যান্ডউইচের দোকান খুললেন ইউসুফ। ইংরেজিতে বেশ সরগরে ছিলেন দিলীপ। কই বোলিয়ে ইউসুফের ব্যবসা দাঁড় করাতে সময় লাগল না। মাত্র কিছুদিনের মধ্যেই জমিয়ে ফেললেন পাঁচ হাজার টাকা। তখনও স্বপ্ন কীভাবে এই ক্যান্টিনকে আরো বড় করবেন । বড় হোটেল খুলবেন। খাবারের ব্যবসা সূত্রেই আলাপ হল জনৈক মাসানি সাহেবের সঙ্গে। জহুরির চোখ ঠিক জহর চেনে নিল।

মাসানি একরকম ধরে বেঁধে, জোর করে ইউসুফকে নিয়ে গেলেন বম্বে টকিজে। প্রথম দিকে ইউসুফ ছবির গল্প বাছাই এবং চিত্রনাট্য লেখার কাজে সাহায্য করতেন। ইউসুফ ইংরেজি ও হিন্দির পাশাপাশি খুব ভালো উর্দু জানতেন। ফলে নিজের কাজে সুনাম অর্জন করতে সমস্যা হল না।

অভিনেত্রী দেবিকারানি তাঁকে ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন। সেটা ১৯৪৪ সাল। মুক্তি পেল অমিয় চক্রবর্তীর পরিচালনায় ‘জোয়ার ভাটা’। দেবিকারানিই ইউসুফ এর নাম পাল্টে দিলীপ কুমার করার পরামর্শ দিলেন। নাম পাল্টে ফেললেন ইউসুফ খান। বলিউড পেয়ে গেল তার ভবিষ্যতের অন্যতম সুপারস্টারকে । ইউসুফ হয়ে গেলেন নায়ক দিলীপ কুমার। এর পর শুধুই পথ চলা। বাকিটা ইতিহাস। যা স্বর্ণাক্ষরে লেখা রইল বলিউডের পাতায়।

প্রায় ছয় দশকের ফিল্ম কেরিয়ারে দিলীপকুমার অভিনয় করেছেন ৬৫টিরও বেশি ছবিতে। হিট ও সুপারহিট ছবির সংখ্যা অসংখ্য। ‘দেবদাস’, ‘কোহিনুর’, ‘মধুমতী’, ‘মুঘলে আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘রাম অউর শ্যাম’, ‘শক্তি’ , ‘মসান’, ‘ক্রান্তি’, ‘সওদাগর’ ইত্যাদি। নিজের অভিনয় গুণে হয়ে গেলেন বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’।

Previous articleপ্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কুমারমঙ্গলমের স্ত্রী খুন দিল্লির বাড়িতে
Next articleমহিলাদের ওয়ান-ডে ব়্যাঙ্কিংয়ে ফের এক নম্বরে মিতালী রাজ