মোদির মুখোশ খুলতেই রাজ্যসভায়, মনোনয়ন পেশ করেই বুঝিয়ে দিলেন জহর

দেশের আমলা মহলে তিনি যে প্রবল মোদি বিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেন্দ্রের মোদি (Narendra Modi) সরকারের কাজের বিরোধিতা করেই মেয়াদ ফুরোনোর আগেই চাকরি ছেড়ে রাজ্যে ফিরেছেন তিনি। সেই আপসহীন জহর সরকারকেই (Johor Sarkar) রাজ্যসভা উপনির্বাচনে (Rajyasabha By Election) এবার প্রার্থী করেছেন তৃণমূল (TMC) নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেইমতো বুধবার বিধানসভায় (Assembly) গিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে নিজের মনোনয়ন (Nomination)  জমা দিলেন প্রাক্তন IAS জহর সরকার। আগামী ৯ অগাস্ট রাজ্যসভার উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ ও গণনা হবে৷ এবং বিধায়ক সংখ্যার বিচারে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার  তাঁর সাংসদ হওয়া এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও সময়ের অপেক্ষা।
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা দীনেশ ত্রিবেদী (Dinesh Trivedi) রাজ্যসভার সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ায় এই রাজ্য থেকে একটি আসন ফাঁকা রয়েছে৷ সেই আসনেই ভোট গ্রহণ হবে৷ মুকুল রায়, যশবন্ত সিনহার মতো হেভিওয়েট নেতাদের নাম চর্চায় থাকলেও জহর সরকারকে প্রার্থী করে চমক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজেই ফোন করে প্রাক্তন আইএএস অফিসারকে এই প্রস্তাব দিয়েছিলেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন জহরবাবু। যা তাঁর কাছে এককথায় অপরিতাসী। বিজেপি এবং নরেন্দ্র মোদির কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত জহর সরকার সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে এদিন মনোনয়ন পেশ করলেন৷ প্রসার ভারতীর প্রাক্তন সিইও দাবি করেছেন, মোদি বিরোধী লড়াই অব্যাহত রাখতেই তৃণমূলের প্রস্তাবে রাজি হয়েছেন তিনি৷
এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভার যা সমীকরণ, তাতে জহর সরকারের জয় কার্যত নিশ্চিত৷ এখনও বিজেপি-র তরফে রাজ্যসভা নির্বাচনের জন্য কারও নাম ঘোষণা করা হয়নি৷ আগামিকাল, বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় আছে৷ কিন্তু প্রার্থী দেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বলেই বিজেপি সূত্রে খবর৷ কারণ বিধায়ক সংখ্যার নিরিখে বিজেপির জয় অসম্ভব৷ তার উপর কোনও ভাবে যদি দলের কোনও বিধায়ক তৃণমূল প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেন, তাহলে আরও বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হবে বিজেপি নেতৃত্বকে৷
এবং সেটা বুঝেই বুধবার রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, শাসকদলের সঙ্গে তাঁদের আসনের অনেকটাই ফারাক। নিজেদের শক্তি কম থাকায় রাজ্যসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি।
এদিন দুপুর ৩টে নাগাদ বিধানসভায় রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছেন জহর সরকার। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বিধানসভায় তৃণমূলের মুখ্য সচেতক তথা পানিহাটির তৃণমূল বিধায়ক নির্মল ঘোষ। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন জহরবাবু। পাশেই ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে জহরবাবু যা বললেন:
(১) রাজ্যসভায় যাওয়ার জন্য অনেক যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন, তবে আমাকে মনোনীত করার জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ।
(২) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনেক লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস আছে।
(৩) আগামীদিনে সংসদে আমার বক্তব্য তুলে ধরতে পারবো। এমন মঞ্চ পাওয়ার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
(৪) কেন্দ্রের নোটবন্দি জিএসটি-এর ত্রুটি নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছি, সেগুলি রাজ্যসভা অধিবেশনে তুলে ধরবো।
(৫) লোকসভা ভোটে বিরোধীদের মুখ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিনা, সেটা এই জায়গায় বসে এখনই বলা সম্ভব নয়। সেই অর্থে রাজনীতির লোক নই।
(৬) দেশের অনেক রাজ্যে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে, তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ অন্যতম।
(৭) ধর্মীয় নিরপেক্ষতার ওপর আঘাত করছে বিজেপি। যা চলছে তা দেখে চুপ করে থাকা যায় না।
(৮) ১৬ বছর দিল্লিতে কাজ করেছি। আর এখানেও বাদুর ঝোলা হয়ে বাসে চড়েছি। এ রাজ্যের কথা যেভাবে দিল্লিতে বলা দরকার, তেমন গভীরে গিয়ে আলোচনা হয় না।
অন্যদিকে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ” রাজ্যসভায় জহরবাবুকে মনোনীত করতে পেরে আমরা খুশি। ওনার মতো যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তির অভিজ্ঞতা আমাদের কাজে লাগবে। আমরা ৪০জন বিধায়ক মিলে তাঁর নাম প্রস্তাবনা করি। ৪টি সেটে ১০জন করে বিধায়ক প্রস্তাবক ছিলেন।  রাজ্যসভার উপনির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের কাছে জহর সরকারের পক্ষে প্রস্তবনা জমা দেওয়া হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। ওনাকে অভিনন্দন।”

Previous articleসাম্বা ম‍্যাজিক টোকিও অলিম্পিক্সে, সৌদি আরবকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিল
Next articleবেলাগাম সংক্রমণ, বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০হাজার ছাড়ালো