চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল ফের শুরু ১ অগস্ট থেকে

খায়রুল আলম , ঢাকা

দীর্ঘ ৬৫ বছর পর ১ আগস্ট থেকে ফের চালু হচ্ছে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল। এ পথে পণ্য পরিবহনে দুই দেশের যাতায়াতে ১৫০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় ভারতীয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের দুটি ইঞ্জিন ভারতের নিউজলপাইগুড়ি থেকে ছেড়ে আসে। পরে হলদিবাড়ি সীমান্ত দিয়ে নীলফামারীর চিলাহাটি সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের চিলাহাটি রেলস্টেশনে পরীক্ষামূলক যাত্রা শেষ করে ফের ফিরে যায়।

এসময় ভারতীয় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ের দুটি ইঞ্জিনের সঙ্গে আসেন ট্রেনের গার্ড ও চালক। তাদের পুষ্পস্তবক দিয়ে বরণ করে নেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে ডেপুটি প্রজেক্ট ম্যানেজার নাজমুল হক রকি, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে সৈয়দপুর অফিসের শফিকুল ইসলাম, নীলফামারীর ডোমার থানার (ওসি) মোস্তাফিজার রহমান, চিলাহাটি রেলস্টেশন মাস্টার আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

ভারতীয় প্রতিনিধিরা জানান, আগামী ১ অগস্ট থেকে এই পথে দুটি পণ্যবাহী ট্রেন চালু হচ্ছে। শুরুতে পণ্যবাহী ট্রেনে ভারত থেকে পাথর ও গম আসবে। এমনকি এই পথে অক্সিজেনবাহী ট্রেনও চলাচল করতে পারে।

এর আগে ২০২০ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশের চিলাহাটি থেকে ভারতের হলদিবাড়ি পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করা হয়েছিল । ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করেছিলেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি।

চলতি বছর বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তী এবং বাংলাদেশ-ভারত কূটনেতিক সম্পর্কের ৫০ বছর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

ওই সময় ২৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এবং মোদি যৌথভাবে ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ‘মিতালী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধন করেন। যাত্রীবাহী ট্রেনটি উদ্বোধন করা হলেও করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী ট্রেনের চাকা গড়াতে পারেনি।

জানা গিয়েছে , বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন রেল সীমান্ত দিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে। সে ক্ষেত্রে এবার চিলাহাটি-হলদিবাড়ি সীমান্ত রুটে বাধা থাকল না পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে।

৬৫ বছর পর ফের ১ অগস্ট ৩০ ওয়াগন পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসবে ভারতীয় ট্রেন। তার আগে বৃহস্পতিবার দুই ইঞ্জিন নিয়ে নিউজলপাইগুড়ি ও হলদিবাড়ি থেকে বাংলাদেশের নীলফামারীর চিলাহাটি পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হয়।

নতুন ট্রেনটির গন্তব্য হবে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীর পর্যন্ত। সৈয়দপুর পার্বতীপুরও পণ্য নামতে পারে বলে জানা গিয়েছে ।

ভারতীয় ইঞ্জিন চিলাহাটি পর্যন্ত এসে থেকে যাবে। চিলাহাটি থেকে বাংলাদেশের ইঞ্জিন ট্রেনটিকে নিয়ে যাবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে। পণ্য খালাস শেষে ফের এসে ওয়াগন নিয়ে যাবে ভারতীয় ইঞ্জিন।

অন্যদিকে উভয় দেশের তরফে যাত্রী ট্রেন চলাচলের সব ব্যবস্থাই ঠিকঠাক রয়েছে। রয়েছে যাত্রী চালানোর গ্রিন সিগন্যাল। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে তা থেমে রয়েছে।

যাত্রীবাহী ট্রেন চালু হলে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসু মানুষের ঢল নামতে পারে ভারতের উত্তরের জনপদ দার্জিলিংসহ অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক মানুষ দার্জিলিং ভ্রমণ করেন। তাদের যেতে হয় অনেক পথ ঘুরে এবং ব্যয়ও হয় বেশি।

চিলাহাটি-হলদিবাড়ি পথে রেল সচল হলে পণ্যবাহী কোনও ট্রেন বাংলাদেশে আসতে ১৫০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে। সেক্ষেত্রে মাত্র ৬০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেই বাংলাদেশে আসা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বিরল-রাধিকাপুর দিয়ে ২১০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে বর্তমানে চারটি রেলপথে প্রতিদিন ভারত থেকে গড়ে চারটি পণ্যবাহী ট্রেন বাংলাদেশে আসছে।

করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতা থেকে উত্তরপূর্ব ভারতের পথে কোনও যাত্রীবাহী ট্রেন দর্শনা কিংবা বেনাপোল দিয়ে প্রবেশ করে তা বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে চিলাহাটি হয়ে হলদিবাড়ি পৌঁছাবে। তাতে কমপক্ষে ২০০ কিলোমিটার পথ সাশ্রয় হবে ভারতের।

 

Previous articleমেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে জম্মু-কাশ্মীর, লাদাখ ও হিমাচলে মৃত ১৭
Next articleপ্রতিবন্ধী মহিলাদের স্বনির্ভর করলেন বিডিও