পুরসভার তৎপরতায় ক্ষণস্থায়ী কলকাতার জলছবি, দ্রুত জলযন্ত্রনা থেকে মুক্তি শহরবাসীর

শ্রাবনের টানা বর্ষণে নাজেহাল শহরবাসী। বছরের পর বছর তিলোত্তমার “জলছবি” দেখতেই অভ্যস্ত সকলে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। তবে সেই জলছবি ক্ষণস্থায়ী। কলকাতা পুরসভার (KMC) তৎপরতায় নিমেষে উধাও শহরের জমা জল।
প্রায় ৪৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে একনাগাড়ে বৃষ্টিতে (Rain) জনজীবন বিপর্যস্ত। আজ, শুক্রবার সকালেও মুখভার আকাশের। যদিও হাওয়া অফিসের খবর, নিম্নচাপের প্রভাব অনেকটাই কেটেছে। তাই এদিন শহরে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হলেও, ভারী বর্ষণের তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে রাজ্যের পশ্চিমের জেলাগুলিতে প্রবল বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দুর্যোগ কাটবে।
বিগত বছরগুলোতে জলমগ্ন শহরের জলযন্ত্রনা থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার অনেক আগে থেকেই সতর্ক ছিল কলকাতা পুরসভা। তাই নিম্নচাপের আশঙ্কা দেখা দেওয়ার পরই কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ড-সহ শহরতলির সবকটি পুরসভাই জল নামানোর সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। তারই সুফল হাতেনাতে পাওয়া গেল। জলমগ্ন কলকাতার জল যন্ত্রনা অনেকটাই কম। নিমেষে উধাও কলকাতার জলছবি।
এবার পুরসভার সর্বত্র রাস্তায় পোর্টেবল পাম্পও লাগানো হয়। ফলে অল্প সময়ে অত‌্যধিক বৃষ্টি হলেও কলকাতা ও সংলগ্ন সব অঞ্চলেই তুলনামূলকভাবে জল জমার পরিমাণ অনেক কম। বিভিন্ন অঞ্চলে জল নামানোর কাজও খুব দ্রুত হয়েছে। উত্তর কলকাতার নিচু এলাকা আমহার্স্ট স্ট্রিটে বিকেলের পর জল বাড়লেও পুরসভার একাধিক পোর্টেবল পাম্প দ্রুত তা সরিয়েছে। ধর্মতলা, সেন্ট্রাল অ‌্যাভিনিউ, ক‌্যামাক স্ট্রিট, মহাত্মা গান্ধী রোড, সায়েন্স সিটি, বেহালা, আলিপুর, রুবি, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট,  ঠনঠনিয়া, আলিপুর, কলেজ স্ট্রিট, আহেরিটোলা, এয়ারপোর্ট, বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, পার্ক সার্কাস, পার্ক স্ট্রিট, টালিগঞ্জ, বাশদ্রোণী,  রাসবিহারী , নাকতলা , ফুলবাগান, বড়বাজার , মানিকতলা- সহ কলকাতার একাধিক রোড জলের তলায় থাকলেও পুরসভার উন্নত নিকাশি ব্যাবস্থার জন্য কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আন্ডার পাস করিয়ে জমা জল বের করে দেওয়া হয়।
সর্বত্রই সক্রিয় ছিল পুরসভার পোর্টেবল পাম্প। ম‌্যানহোল খুলে পোর্টেবল পাম্প দিয়ে পুরকর্মীরা লাগাতার জল নামিয়েছেন। কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কলকাতার অধিকাংশ ওয়ার্ডেই গড়ে ১০০ মিমি’র বেশি বৃষ্টি হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। পার্ক স্ট্রিটে গাছ ভেঙে পড়ায় যানচলাচলে সাময়িক বিঘ্ন ঘটলেও, পুরসভার তৎপরতায় গাছ কেটে রাস্তা সচল করা হয়।
নিকাশির দায়িত্বে থাকা কলকাতা পুরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য তারক সিং (Tarak Singh) আগেই দাবি করেছিলেন, এবার বর্ষায় আগের কলকাতার জলছবি আর দেখা যাবে না। জল কোথাও জমলেও দ্রুততার সঙ্গে তাঁর নিকাশের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কলকাতা অনেক পুরোনো শহর, তাই অতীতের নিকাশি ব্যবস্থায় কিছু সমস্যা ছিল। বর্তমানে আধুনিক পদ্ধতিতে উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা করায় জলমগ্ন হচ্ছে না কলকাতা। এছাড়াও কিছু ইঞ্জিনিয়ারের গাফিলতির জন্য আগে কলকাতায় জল জমতো। এখন কড়া নজরদারিতে সেটা আর সম্ভব নয়।
এদিকে, পুরসভার মুখ্যপ্রশাসক তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) জানিয়েছেন, “রেকর্ড বৃষ্টিপাত হয়েছে, তবে জমা জল সরাতে পুরসভার ৭৬টি পাম্পিং স্টেশনে ৩৮৯টি পাম্প কাজ করছে। এছাড়াও নানা ওয়ার্ডে ৪০০টির মতো পোর্টেবল পাম্প সক্রিয় রয়েছে। চালু হয়েছে পুরসভার কন্ট্রোল রুম।”

Previous articleদিনহাটায় বোমা বিস্ফোরণ, গুরুতর জখম তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের ভাই
Next article‘দানিশ সাংবাদিক’, পরিচয় জানার পরই নৃশংসভাবে তাঁকে খুন করে তালিবানরা