চললাম”, “আলভিদা”, “একগোছা রজনী গন্ধা”! রাজনীতি ছাড়লেন বাবুল?

কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ক্যাবিনেট থেকে ছাঁটাই হওয়ার পরই বেসুরো আসানসোলের সাংসদ তথা বিজেপি নেতা বাবুল সুপ্রিয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় একের পর এক ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা দিয়ে রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাওয়ার কথায় তিনি যেন বলছেন! শনিবার ফের একটি ইঙ্গিত পূর্ণ বার্তা বাবুলের। যেখানে ফেসবুকের লম্বা পোস্টে বাবুল “চললাম”, “আলভিদা”, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের “একগোছা রজনী গন্ধা”! ইত্যাদি একাধিক শব্দগুচ্ছ ব্যবহার করেছেন।

তাহলে কি রাজনীতি থেকে সরে যাবেন বাবুল সুপ্রিয়?

 

বাবুল লিখছেন, “Social Work করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায় – নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর… “। আবার লম্বা পোস্টে কোথাও তাঁর বক্তব্য, “বেশ কিছু সময়ে তো থাকলাম। কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম। কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম, কোথাও নিরাশ হতাশ করলাম | মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন। আমি ‘আমার’ মনে ওঠা সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরই বলছি.. আমার মতো করেই বলছি.. চললাম..”!

 

তবে বাবুল তাঁর রাজনৈতিক অনুগামী ও সমর্থকদের নিশ্চিত করেছেন, তৃণমূল, কংগ্রেস কিংবা সিপিএম কোথাও তিনি যাচ্ছেন না। কোনও জায়গা থেকে তাঁর কাছে যোগদানের প্রস্তাবও আসেনি। তিনি সর্বদা মোহনবাগান ও বিজেপিকেই সমর্থন করে গেছেন। আগামী দিনেও করবেন।

 

প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব যাওয়ার পর থেকেই বাবুল সুপ্রিয়কে নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে তুমুল জল্পনা ছড়ায়। যার অন্যতম কারণ ছিল বাবুলের একের পর এক ফেসবুক পোস্ট। যাতে কার্যত ধরা পরে যায় মন্ত্রিত্ব হারিয়ে কার্যত কাতর বিজেপি সাংসদ। এরইমধ্যে জল্পনা আরও বাড়িয়ে বাবুল সুপ্রিয় নিজের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে বিজেপির প্রাক্তন নেতা মুকুল রায় আর তৃণমূলকে ফলো করা শুরু করেন। বাবুল সুপ্রিয়র এই কাজে রাজ্য রাজনীতি মহলে তুমুল গুঞ্জন ছড়িয়েছিল।

 

এরপরেই কিছুদিন সামাজিক মাধ্যমে আর দেখা যাচ্ছিল না আসানসোলের বিজেপি সাংসদকে। কিন্তু কিছুদিন বিরতির পরে ফের ফেসবুকে পোস্ট করলেন বাবুল সুপ্রিয়। সে বার তাঁর বার্তা সরাসরি ছিল আসানসোলবাসীদের জন্য। কিন্তু এবার বাবুল যা লিখলেন, তাতে গুঞ্জন কয়েকগুণ বেড়ে গেল। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনীতির থেকে গান নিয়ে বেশি ‘মন’ দিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ, কিন্তু তাতেও মাঝেমধ্যেই বেরিয়ে পড়ছে তাঁর হতাশা। সূত্রের খবর আজকালের মধ্যে বিজেপির সদস্য পদ ছাড়তে পারেন বাবুল সুপ্রিয়।

 

 

বাবুল সুপ্রিয়র ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো–

 

“চললাম

 

Alvida…

সবার সব কথা শুনলাম – বাবা, (মা) স্ত্রী, কন্যা, দুএকজন প্রিয় বন্ধুবান্ধব.. সবটুকু শুনে বুঝেই অনুভব করেই বলি, অন্য কোন দলেও যাচ্ছি না – #TMC, #Congress, #CPIM, কোথাও নয় – Confirm করছি, কেউ আমাকে ডাকেওনি, আমিও কোথাও যাচ্ছি না 😊 I am a one Team Player ! Have always supported one team #MohunBagan – Have done only party BJP West Bengal.. That’s it !!

চললাম…

‘বেশ কিছু সময়ে তো থাকলাম’.. কিছু মন রাখলাম কিছু ভাঙলাম.. কোথাও আপনাদের হয়তো আমার কাজে খুশি করলাম, কোথাও নিরাশ হতাশ করলাম | মূল্যায়ন আপনারাই নয় করবেন 😊

আমি ‘আমার’ মনে ওঠা সব প্রশ্নের জবাব দেওয়ার পরই বলছি.. আমার মতো করেই বলছি..

চললাম… 👋

 

Social Work করতে গেলে রাজনীতিতে না থেকেও করা যায় – নিজেকে একটু গুছিয়ে নিই আগে তারপর…

 

বিগত কয়েকদিনে বার বার মাননীয় অমিত শাহ ও মাননীয় নাড্ডাজির কাছে রাজনীতি ছাড়ার সঙ্কল্প নিয়ে গেছি এবং আমি ওঁদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ যে প্রতিবারই ওঁরা আমাকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে ফিরিয়ে দিয়েছেন |

 

আমি তাঁদের এই ভালোবাসা কোনো দিন ভুলবো না আর তাই আবার তাঁদের কাছে গিয়ে সেই একই কথা বলার ধৃষ্টতা আর আমি দেখাতে পারবো না 🙏 বিশেষ করে ‘আমার আমি’ কি করতে চায় তা যখন আমি অনেকদিন আগেই ঠিক করে ফেলেছি || কাজেই আবার একই কথার পুনরাবৃত্তি করতে গেলে কোথাও না কোথাও তাঁরা ভাবতেই পারেন যে আমি কোনো ‘পদের’ জন্য ‘Bargain’ করছি | আর তা যখন একেবারেই সত্য নয় তখন একেবারেই চাইনা যে তাঁদের মনের ঈশান কোণেও সেই ‘সন্দেহের’ উদ্রেক হোক – এক মূহুর্তের জন্য হলেও |

 

প্রার্থনা করি ওঁরা আমায় ভুল না বুঝে, ক্ষমা করবেন |

 

আমি আর বিশেষ কিছু বলবো না – এখন ‘আপনারা বলবেন আমি শুনব’ – দিনেরবেলায়, ‘সন্ধ্যাবেলায়’ 😊

 

কিন্তু একটা প্রশ্নের জবাব আমাকে দিয়ে যেতেই হবে because it’s pertinent ! প্রশ্ন উঠবেই কেনই বা রাজনীতি ছাড়তে গেছিলাম? মন্ত্রিত্ব চলে যাওয়ার সাথে তার কি কোনো সম্পর্ক আছে? হ্যাঁ আছে – কিছুটা তো নিশ্চয় আছে ! তঞ্চকতা করতে চাইনা তাই সে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গেলেই তা সঠিক হবে-আমাকেও তা শান্তি দেবে |

 

2014 আর 2019 -এর মধ্যে অনেক ফারাক |

তখন শুধু BJP-র টিকিটে আমি একাই ছিল (With due respect to Ahluwaliaji – GJM was BJP’s ally in the Darjeeling seat) কিন্তু আজ বাংলায় বিজেপিই প্রধান বিরোধী দল | আজ পার্টিতে অনেক নতুন Bright তরুণ তুর্কী নেতা যেমন আছে তেমনি অনেক প্রবীণ বিদগ্ধ নেতাও আছেন | এঁদের নেতৃত্বে দল এখান থেকে অনেক দূর যাবে এটা বলাই বাহুল্য | বলতে দ্বিধা নেই যে আজ পার্টিতে কোনও একজন ব্যক্তিবিশেষের থাকা না থাকাটা যে কোন বড় ব্যাপার নয় তাও স্পষ্ট হয়েছে এবং এটা মেনে নেওয়াটাই যে সঠীক সিদ্ধান্ত হবে এটাই আমার দৃঢ়, সুদৃঢ় বিশ্বাস !

 

আরেকটা কথা.. ভোটের আগে থেকেই কিছু কিছু ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্বের সাথে মতান্তর হচ্ছিল – তা হতেই পারে কিন্তু তার মধ্যে কিছু বিষয় জনসমক্ষে চলে আসছিলো | তার জন্য কোথাও আমি দায়ী (একটি ফেসবুক পোস্ট করেছিলাম যা পার্টির শৃংখলাভঙ্গের পর্যায়েই পড়ে) আবার কোথাও অন্য নেতারাও ভীষণভাবে দায়ী, যদিও কে কতটা দায়ী সে প্রসঙ্গে আমি আজ আর যেতে চাইনা – কিন্তু Senior নেতাদের মতানৈক্য ও কলহে পার্টির ক্ষতি তো হচ্ছিলই, ‘গ্রাউন্ড জিরো’-তেও পার্টির কর্মীদের মনোবলকে যে তা কোনোভাবেই সাহায্য করছিলো না তা বুঝতে ‘রকেট বিজ্ঞান’-এর জ্ঞানের দরকার হয়না | এই মুহূর্তে তো তা একেবারেই অনভিপ্রেত তাই আসানসোলের মানুষকে অসীম কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা জানিয়ে আমিই সরে যাচ্ছি |

 

কোথাও চলে গিয়েছিলাম এটা আমি মানি না – আমি ‘আমার’ সঙ্গেই ছিলাম – তাই কোথাও ফিরে যাচ্ছি আজ একথাও বলবো না |

 

বহু নতুন মন্ত্রী এখনো সরকারি বাড়ী পাননি তাই আমার বাড়িটি আমি এক মাসের মধ্যে (যত তাড়াতাড়ি সম্ভব – হয়তো তার আগেই) ছেড়ে দেবো |

না, মাইনেও আর নেবোনা |

 

আকাশে, একটি উড়ানে স্বামী রামদেবজীর সঙ্গে একটা ছোট কথোকপথন হয়েছিল | একদমই ভালো লাগেনি যখন বুঝেছিলাম যে বাংলাকে বিজেপি খুব seriously নিচ্ছে, শক্তির সাথে লড়বেও কিন্তু বোধহয় কোনো আসন আশা করছেনা | মনে হয়েছিল, যে বাঙালি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, অটল বিহারী বাজপেয়ীকে এত শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, সেই বাঙালি বিজেপিকে একটাও আসনে জেতাবে না এটা কি করে হতে পারে !!! বিশেষ করে সারা ভারত যখন ভোটের আগেই ঠিক করে ফেলেছিলো যে তাঁদের যোগ্য উত্তরসূরি, মনোনীয় শ্রী নরেন্দ্র মোদিই ভারতের আগামী প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন বাংলা কেন অন্যরকম ভাববে | চ্যালেঞ্জটা একজন বাঙালি হিসেবে তখনই নেওয়া উচিত বলে মনে হয়েছিল তাই সবার কথা শুনেছি কিন্তু নিজের যা মনে হয়েছিল তাই করেছি – অনিশ্চয়তাকে ভয় না পেয়ে নিজে যা ঠিক মনে করেছি, ‘মন-প্রাণ’ দিয়ে করেছি |

 

1992 – তে Standard Chartered Bank-এর চাকরী ছেড়ে মুম্বাইতে পালানোর সময়েও তাই করেছিলাম, আজ তাই করলাম !!!

চললাম..

  • হ্যাঁ, কিছু কথা বাকি রয়ে গেলো..

হয়তো কখনো বলবো..

আজ নাই বা বললাম..

চললাম..”

Previous articleসেমিফাইনালে হার সিন্ধুর, তাই জু-ইং এর কাছে হারলেন তিনি 
Next articleকোভিড আবহেই পঠনপাঠন চালু করার সিদ্ধান্ত নিল পাঞ্জাব সরকার