শুভেন্দুকে “বাচ্চা” বলে কটাক্ষ ফিরহাদের, তুলোধনা বিজেপিকেও

ফের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে একহাত নিলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। রাজ্য সরকার ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এদিন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রণদিত বিতর্কিত মন্তব্য করেন শুভেন্দু। আগামী ১৬ আগস্ট “খেলা হবে দিবস” পালন করবে রাজ্য সরকার। আর তাতেই আপত্তি জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি। অতীতে ওইদিন “গ্রেট কলকাতা কিলিংস-ডে” হয়েছিল। তাঁর এই মন্তব্যকে পাল্টা দিয়ে ফিরহাদ বলেন, ” বাচ্চা ছেলে শুভেন্দুর আগে গুজরাত, উত্তরপ্রদেশ , মুম্বইয়ের গ্রেট কিলিংস বা দাঙ্গা নিয়ে কথা বলা উচিত। তারপর বাংলা নিয়ে কথা বলতে আসবে।”

অতীতে ওইদিন “গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং” হয়েছিল। তাই এদিন রাজ্যপালকে শুভেন্দু নালিশ জানিয়ে বলেন, ওইদিন যেন খেলা হবে দিবস পালন করা না হয়। তারই পরিপ্রেক্ষিতে এদিন ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে দায়িত্ব দিয়েছেন। শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেয়নি। তাই শুভেন্দুর খেলা হবে দিবস নিয়ে বেশি কথা না বলে সাইড লাইনে চলে যাওয়া উচিত। শুভেন্দু কালকের বাচ্চা, তাই বেশি লাফাচ্ছে। আসলে নতুন পাল্টি খেয়েছে। মোদি-শাহরা হেরে বাড়ি পালিয়েছে। আর কে কোথাকার শুভেন্দু!”

এখানেই শেষ নয়। এদিন রাজ্যজুড়ে বিজেপির বাংলার মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠান নিয়েও কটাক্ষ করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “বঙ্গ বিদ্বেষী বিজেপি বাংলার মনীষীদের নিয়ে যত কম কথা বলে ততোই ভালো।

পচা জল নিয়ে ধোয়ার দরকার কী? বর্ষায় ভগবান নিজেই ধুইয়ে দেন মনীষীদের। আর দেখব নাটক করছে বিজেপি। ওরা গতবছর ২২ শ্রাবণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রয়াণ দিবস পালন করেছিল। কারণ তার পরেই এ রাজ্যে ভোট ছিল। ওরা আসলে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে রাজনীতি করেছিল। ওরা ভোটের সময় রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আমাদের। আমরা যুগ যুগ ধরে তাঁকে স্মরণ করে আসবো। তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণে হৃদয়ে রাখবো।”

সর্বভারতীয় ইউপিএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়েও এদিন কেন্দ্রীয় সরকার ও তার শাসকদল বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “শিক্ষাক্ষেত্রেও রাজনীতিকরণ করছে বিজেপি। এরা দেশটাকে ধ্বংসের পথে চালনা করছে। চাকরির প্রশ্ন পত্রেও রাজনীতি। ওদের রাজনৈতিকভাবে এই দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া উচিত।”

রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ খড়গপুরে গিয়ে তাঁর দলেরই মহিলা কাউন্সিলর সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। সে বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ফিরহাদ হাকিম বলেন, “কোনও মহিলা রাজনীতি করতেই পারেন। গণতান্ত্রিক দেশে যে কোনই দল করার স্বাধীনতার তাঁর আছে। তা বলে নিজের দলের মহিলা কাউন্সিলর সম্পর্কে এমন কুরুচিকর মন্তব্য আমাদের দেশের সংস্কৃতি নয়। কেউ ভুল করে থাকলে তাকে অন্যভাবে শাসন করা যায়। আমরা মহিলাদের মা দুর্গার মতো দেখি। তারা এদেশের এ রাজ্যের নারী শক্তি। দীলিপবাবু সেই নারীশক্তি-কে অপমান করলেন।”

রাজ্যের অতিসক্রিয় রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কেও সমালোচনা করতে ছাড়লেন না ফিরহাদ হাকিম। সাংসদ তথা সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ এ রাজ্যের শাসকদলের ছাত্রযুব নেতা-নেত্রীদের উপর গত কয়েকদিন ধরে ত্রিপুরায় যেভাবে আক্রমণ চালিয়েছে বিজেপি আশ্রিত দুষ্কৃতীরা, এদিন তারও তীব্র নিন্দা করেন ফিরহাদ হাকিম। তিনি বলেন, “যে রাজ্যের রাজ্যপাল কথায় কথায় এ রাজ্যের সন্ত্রাস নিয়ে টুইট করেন, দেখব তিনি অদ্ভুতভাবে নিশ্চুপ। আসলে ত্রিপুরা নিয়ে একটিও কথা ব্যয় করতে পারবেন না রাজ্যপাল। কারণ, তিনি যদি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেন, তাহলে তার পরেরদিনই রাজ্যপাল পদে তিনি আর বহাল থাকবেন না। তাই ত্রিপুরায় গণতন্ত্র নেই সেটা বলার সাহস পর্যন্ত নেই এ রাজ্যের রাজ্যপালের।”

করোনা আবহে কেন্দ্রের ভ্যাকসিন বঞ্চনা নিয়েও এদিন সরব ছিলেন কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম। তাঁর কথায়, “যে পরিমাণ ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা ছিল, তা আমরা পাইনি। এখন পুরসভার হাতে কোভিশিল্ড রয়েছে মাত্র à§§à§© হাজার, আর কোভ্যাক্স ৩২ হাজার। স্বাস্থ্য দফতরকে বলেছি à§§ লক্ষ পেলে ভালো হয়। তাহলে প্রতিদিনের ভ্যাকসিন দেওয়ার কর্মসূচি সাজাতে সুবিধা হত। যদিও
কলকাতার মেগা সেন্টারগুলিতে খুব ভালো টিকাকরণ চলছে।”

আরও পড়ুন- SSC চাকরি প্রার্থীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখবে কমিশন