সোমনাথ বিশ্বাস: এ যেন শাপমোচন। দীর্ঘ চার দশকের যন্ত্রনা থেকে মুক্তি। যা এতদিন তাড়া করে বেড়াত। কোথাও থেকে নিজেকে খুব “অপরাধী” বলে মনে হতো। ফুটবল ছাড়ার পরেও খেলাধুলার সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ থাকলেও, ১৬ অগাস্ট দিনটি তিনি এতদিন পর্যন্ত নিজেকে গুটিয়ে রাখতেন। হয়তো সকলের চোখের আড়ালে অশ্রু বিসর্জন দিতেন। কিন্তু এ বছর সব পাল্টে গেলো। সৌজন্যে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অবশেষে IFA-এর আমন্ত্রণে তিনি এলেন। দেখলেন। জয় করলেন। এ যেন “পাপমুক্তি”! “অপরাধ”র শৃঙ্খল থেকে বেরিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস। তিনি বিদেশ বসু। বাংলার প্রাক্তন তারকা ফুটবলার। উলুবেড়িয়া পূর্ব বিধানসভার তৃণমূল বিধায়ক।

কিন্তু এতদিন কেন সেই অপরাধবোধ বহন করে আসছিলেন আপদ-মস্তক বরফ ঠান্ডা মেজাজের মানুষটি? জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৪১ বছর আগের এই দিনটিতে। অৰ্থাৎ, ১৯৮০ সালের ১৬ অগাস্ট। কী ঘটেছিল সেদিন?


১৯৮০ সালের এই দিনে ইডেন গার্ডেন্স IFA পরিচালিতকলকাতা ফুটবল লিগে মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলের ম্যাচে সবুজ-মেরুনের বিদেশ বসু ও লাল-হলুদের দিলীপ পালিতের মধ্যে খেলা সংক্রান্ত একটি গোলমালকে কেন্দ্র করে উত্তেজিত হয়ে পড়ে গ্যালারিতে বসা দর্শককুলের মধ্যে। এরপর সেই উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে গোলমাল ছড়িয়ে গোটা মাঠে। লাঠি উঁচিয়ে গ্যালারিতে উঠে পড়ে পুলিশ। নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে থাকেন দর্শকরা। বর্তমানে ইডেনের ৫ নম্বর গেটের ডি ব্লকে সেদিন ঘটে যায় এক মর্মান্তিক ঘটনা। পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ১৬ জন দর্শক।

এরপর পর থেকে এই বিশেষ দিনটিকে IFA ও তাদের অনুমোদিত সংস্থাগুলি ফুটবল প্রেমী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। আইএএফ-এর তরফে আয়োজন করা হয় রক্তদান শিবিরের। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ব্যতিক্রমী বিদেশ বসু। এই প্রথম IFA-এর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে ফুটবল প্রেমী দিবসে হাজির বিদেশ।


এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ”IFA প্রতিবার আমন্ত্রণ জানালেও কোনও এক অপরাধ বোধ থেকে ইন্ডোর স্টেডিয়ামে ১৬ অগাস্ট রক্তদান শিবির হলেও কোনওদিন যাইনি। ময়দানের দিকে পা-ই বাড়াতাম না। ভারাক্রান্ত মনে সারাদিন কাটাতাম।”

তাহলে দীর্ঘ ৪০ বছর পর এ বছর কেন?

প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই বিদেশ বসুর উত্তর, “এই মনমরা অবস্থা থেকে বের করে আনার জন্য গোটা কৃতিত্বের দাবিদার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, এই দিনটিকে তিনি খেলা হবে দিবস বলে ঘোষণা করেছেন। আর আমার পাপমুক্তি ঘটেছে।”
