দেশ চালাতে ১২ সদস্যের পরিষদ গড়ছে তালিবান

দেশ চালাতে ১২ সদস্যের একটি কাউন্সিল গঠন করছে তালিবান। এই কাউন্সিলে জায়গা পেতে চলেছেন দেশের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রেকন্সিলিয়েশনের প্রধান আব্দুল্লা আব্দুল্লা। যথারীতি এই কাউন্সিলে থাকছেন তালিবান নেতা মোল্লা আবদুল ঘানি বরাদর। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা স্পুটনিক এই খবর জানিয়েছে।

প্রকাশিত খবরে জানা গিয়েছে, কাউন্সিলের ১২ জনের মধ্যে ৭ সদস্যের নাম ঠিক হয়ে গিয়েছে। বাকিদের নাম শীঘ্রই জানিয়ে দেওয়া হবে। যে ৭ জনের নাম ঠিক হয়েছে তারা হলেন হামিদ কারজাই, আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ, মুজাহিদ কমান্ডার গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার, আফগানিস্তানের প্রাক্তন অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী হানিফ আতমার, তালিবান প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা ইয়াকুব, তালিবান নেতা মোল্লা বরাদর, হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতা খলিলুর রহমান হাক্কানি।

এরই মধ্যে মঙ্গলবার বিরোধী জোটের হাত থেকে তিনটি জেলা ছিনিয়ে নিল তালিবান। এই মুহূর্তে জঙ্গিগোষ্ঠী এগোচ্ছে অ্যালায়েন্সের শক্ত ঘাঁটি পঞ্জশিরের দিকে। গত সপ্তাহেই জঙ্গিদের হাত থেকে বাঘলান জেলার দেহ সালেহো, বানু এবং পুল এ হেসার জেলা দখল করে নিয়েছিল নর্দান অ্যালায়েন্স। শেষ পর্যন্ত জঙ্গিরা ওই তিন জেলার পুনর্দখল নিয়েছে।

একই সঙ্গে তারা পঞ্জশির উপত্যকাতেও ঢুকে পড়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্জশিরের বদখশান, তাখার ও আনদারাব অঞ্চল তাদের দখলে এসেছে বলে জানিয়েছেন তালিবানদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। দেশ দখলের সঙ্গে সঙ্গেই তালিবানদের চরম নৃশংসতার সাক্ষী হচ্ছে সে দেশের মানুষ। মহিলাদের উপর চলছে চরম নির্যাতন। পুরুষরা ও বাদ যাচ্ছে না। তাদেরও ইসলামী আইন মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, তালিবানরা শিশুদের অপহরণ করে পঞ্জশিরের যুদ্ধক্ষেত্রে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে।

তালিবানরা আমেরিকাকে ফের স্পষ্ট জানিয়েছে, পূর্বনির্ধারিত ৩১ অগাস্টের মধ্যে সকল নাগরিককে ফেরানো না হলে তারা আর কোনও মার্কিন নাগরিকের দায় নেবে না। যদিও মার্কিন কংগ্রেসের গোয়েন্দা বিভাগের চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ জানালেন, ৩১ অগাস্টের মধ্যে সকল মার্কিন নাগরিককে ফিরিয়ে আনা খুব সম্ভবত সম্ভব নাও হতে পারে। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কড়া হুমকি দিয়েছেন তালিবানরা কোন মার্কিন নাগরিকের গায়ে একটি আঁচড় দিলে কড়া জবাবের জন্য তারা যেন তৈরি থাকে। মঙ্গলবার রাতেই আফগানিস্তান নিয়ে বৈঠকে বসছে জি-৭ গোষ্ঠী। সূত্রের খবর,জি-৭ গোষ্ঠীর বৈঠকে তালিবানদের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তাব পেশ হতে পারে। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্পষ্ট জানিয়েছেন, তালিবানরা যদি মানবাধিকার লংঘন করে এবং তারা যদি সন্ত্রাসবাদীদের ঠাঁই দেয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হবে।

আফগানিস্তানের মহিলাদের অবর্ণনীয় কষ্টের কথা ক্রমশ প্রকাশ্যে আসছে। আফগান মহিলাদের পাশে দাঁড়িয়ে মুখ খুললেন হলিউড অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। মঙ্গলবার জোলি বলেন, এভাবে কখনোই সবকিছু শেষ হয়ে যেতে পারে না। আফগান মহিলাদেরও বেঁচে থাকার পূর্ণ অধিকার আছে। তাঁরা স্বাধীনভাবেই বাঁচবেন। কারও রক্ত চক্ষুকে তাঁরা ভয় পাবেন কেন? গত ২০ বছর ধরে আমেরিকান সেনা আফগানিস্তানকে অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরিয়ে নিয়ে আনার কাজ চালিয়ে ছিল। আফগানিস্তানকে এখন আর কোন মতেই পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। অন্যদিকে মঙ্গলবারই অনলাইন অ্যাপ এয়ারবিএনবি জানিয়েছে, গোটা বিশ্ব জুড়ে তাদের যত হোটেল আছে তার প্রতিটিতেই আফগান শরণার্থীদের থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য তাদের একটি পয়সা খরচা করতে হবে না। মঙ্গলবার থেকেই এই পরিষেবা চালু হবে। তারা কমপক্ষে ২০ হাজার আফগান শরণার্থীর থাকার ব্যবস্থা করবে।

তালিবানদের কব্জায় যাওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে অন্তত ২০ হাজার মানুষ দেশ ছেড়েছেন। আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে আসা মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য বিভিন্ন দেশকে অনুরোধ করেছে রাষ্ট্রসংঘ। আমেরিকার নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী এখনো পর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার আফগান নাগরিককে উদ্ধার করেছে। আফগানিস্থানে চরম খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ভারত-সহ বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে দিয়েছে তালিবান। এই পরিস্থিতিতে আফগান মহিলা ও শিশুদের জন্য গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রসংঘ। ভারত অবশ্য আগেই জানিয়েছে ধর্ম ও জাতপাতের বিচার না করেই আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া হবে। তালিবানের ধর্মীয় গোঁড়ামি যে এতটুকুও বদলায়নি ফের তার প্রমাণ মিলল। মঙ্গলবার গজনী প্রদেশের প্রবেশদ্বার ধুলোয় মিশিয়ে দেয় তালিবানরা। ২০০১ সালে প্রথমবার আফগানের ক্ষমতা দখল করে তৎকালীন তালিবান নেতা মোল্লা ওমরের নির্দেশে বামিয়ানের বুদ্ধমূর্তি গুলি এভাবেই গুঁড়িয়ে দিয়েছিল তালিবান। তালিবানের এই আচরণের তীব্র নিন্দা করেছে বিভিন্ন দেশ। এই গজনী প্রদেশের এই প্রবেশদ্বার তৈরি করেছিল আশরাফ ঘানি সরকার। ইসলামি পরম্পরা ও সংস্কৃতির প্রতীক ছিল এই প্রবেশদ্বার।

আরও পড়ুন- কাবুল থেকে অপহৃত ইউক্রেনের বিমান!

এতদিন বারেবারে অভিযোগ উঠেছে, আফগানিস্তানের তালিবানদের মদত দিয়েছে পাকিস্তান। তালিবানরা আফগানিস্তানের শরিয়াত আইন প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় পাকিস্তানের বইছে আনন্দের বন্যা। সংবাদসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই তালিবানের উচ্চ প্রশংসা করেছে পাকিস্তানের ইসলামি সংগঠনগুলি। শুধু তাই নয়, তালিবানকে সাহায্য করতে ইতিমধ্যেই প্রাক-ইসলামি সংগঠনগুলি অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, তালিবানদের জয়ের জন্য আল্লাহকে ধন্যবাদ জানাতে ২৭ অগাস্ট একটি অনুষ্ঠান হবে লাহোরে। advt 19

 

Previous articleকাবুল থেকে অপহৃত ইউক্রেনের বিমান!
Next articleদায়িত্ব পেয়েই মালদহে যুব তৃণমূলকে মজবুত করতে আসরে চন্দনা