জুলহাজ–তনয় হত্যা মামলায় ছয় জঙ্গিকে মৃত্যুদণ্ড আদালতের

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা:

পাঁচ বছর আগে রাজধানীর কলাবাগানে ইউএসএআইডির কর্তা জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু নাট্যকর্মী মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যা মামলায় ছয় জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিল আদালত। আর দুজনকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকার সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ছয় আসামি হলেন চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক, আকরাম হোসেন, মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন, মো. আরাফাত রহমান, মো. শেখ আবদুল্লাহ জোবায়ের ও আসাদুল্লাহ। আর খালাস পাওয়া দুজন হলেন সাব্বিরুল হক চৌধুরী ও মো. জুনাইদ আহমদ। তাঁরা দুজনই পলাতক। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আসামিদের মধ্যে পলাতক চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন।
খুন হওয়া জুলহাজ সমকামীদের অধিকারবিষয়ক সাময়িকী ‘রূপবান’ সম্পাদনা ও প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নাট্যকর্মী মাহবুব পিটিএ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে ‘শিশু নাট্য প্রশিক্ষক’ হিসেবে কাজ করতেন।২০১৬ সালের ২৫ এপ্রিল বিকেলে কলাবাগানে কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সেজে জুলহাজ মান্নান ও তাঁর বন্ধু তনয়কে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। নৃশংস এই জোড়া খুনের ঘটনা তিন বছর ধরে তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১২ মে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দিয়ে জানায়, এ ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের আট সদস্য। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে চার জঙ্গি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে উঠে আসে, জোড়া খুনের কারণ কী, কারা কীভাবে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করেন এবং কারা খুনে সরাসরি অংশ নেন।

আরও পড়ুন – কাবুল ছাড়তে চাইলে ফেরানো হোক নিরাপদে, প্রস্তাব পাশ রাষ্ট্রপুঞ্জে
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা হলেন আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। আদালত পুলিশের অভিযোগপত্র পেয়ে জিয়াসহ আটজনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯ নভেম্বর বিচার শুরু করেন।
সরকারের তরফে জোড়া খুনের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ২৪ সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা হয়।
তদন্তে উঠে আসে, জুলহাজ ও তনয় হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা ফাঁসির আসামি চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া। তবে জিয়ার পরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন মোজাম্মেল হোসেন ওরফে সায়মন। মোজাম্মেলও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। কলাবাগানে জুলহাজের বাসা রেকি করেন আসেন আরাফাত রহমান। তিনিও অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি।
খুনের পরিকল্পনায় জিয়া জড়িত, তা আদালতে সবিস্তার বলেছিলেন আসামি মোজাম্মেল হোসেন। মোজাম্মেলের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে মেজর জিয়া মোজাম্মেলকে জানিয়েছিলেন, সমকামীরা এ দেশে তাঁদের সংগঠনকে তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
পয়লা বৈশাখের দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে তাঁরা মিছিল বের করতে পারেন। তাঁদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরে জায়েদ ওরফে জুবায়ের নিজেকে সমকামী পরিচয় দিয়ে ‘জায়েদ বিন ইরফান’ নামে একটি ফেসবুক আইডি খোলেন। নিয়মিত সমকামীদের সঙ্গে চ্যাট করে জানতে পারেন, পয়লা বৈশাখে সমকামীরা মিছিল বের করবেন। এই সংগঠনের দায়িত্বে আছেন জুলহাজ মান্নান। জুবায়েরই জুলহাজ মান্নান সম্পর্ক সব তথ্য জিয়াকে জানান। জিয়াই তখন জুলহাজকে কীভাবে খুন করতে হবে, তার নীলনকশা তৈরি করেন। হত্যাকাণ্ডের প্রধান সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করা মোজাম্মেলকে জিয়া জানিয়ে দেন, কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী সেজে জুলহাজের ঘরে লোক পাঠাতে। জিয়ার নির্দেশনা পেয়ে মোজাম্মেল নিজের কম্পিউটারে কুরিয়ার সার্ভিসের তিনটি ভুয়ো পরিচয়পত্র তৈরি করেন। জুলহাজ ও তনয়কে খুন করার দুই দিন আগে জিয়া অন্যদের নির্দেশ দেন, জুলহাজকে তাঁর ঘরে ফেলে খুন করার। মোট পাঁচ জঙ্গি সেদিন জুলহাজ মান্নানের ঘরে গিয়ে জুলহাজ ও তাঁর বন্ধু তনয়কে খুন করে পালিয়ে যায়।

advt 19

 

Previous articleকরোনায় আক্রান্ত সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মা নিরূপা গঙ্গোপাধ্যায়
Next articleশুভ ঘোষকে সই করালো এসসি ইস্টবেঙ্গল