পেগাসাস মামলার অন্তর্বর্তী রায়দান স্থগিত রাখল শীর্ষ আদালত  

পেগাসাস মামলায় অন্তর্বর্তী রায়দান স্থগিত রাখল শীর্ষ আদালত। নির্দেশ সত্ত্বেও পেগাসাস নিয়ে সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা জমা দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। উষ্মা প্রকাশ করলেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “কেন্দ্রকে বারবার সময় দেওয়া হয়েছে। এখন রায় ঘোষণা ছাড়া আমাদের কাছে আর অন্য কোনো রাস্তা নেই”। তবে, রায়দান স্থগিত রাখা হয়েছে। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ সেপ্টেম্বর।

এদিন শুনানির সময় সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা (Tushar Meheta) জানান, “মামলাকারীরা পেগাসাস (Pegasus) নিয়ে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের তরফে আগেই জানানো হয়েছে, দেশে তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, অননুমোদিতভাবে টেলিফোনে আড়িপাতা বেআইনি। আগেই হলফনামা দিয়ে তা স্পষ্ট করা হয়েছে। তবুও যেহেতু বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, সেই কারণে সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের কথা বলেছে”।

পেগাসাস মামলায় সোমবার সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি এন ভি রমনের (N V Raman) বেঞ্চে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে হলফনামা পেশ করার কথা ছিল। পূর্ববর্তী শুনানির দিন হলফনামা পেশ না করে সময় চেয়ে নিয়ে ছিল কেন্দ্র। কিন্তু এদিনও আদালতে হলফনামা জমা দেয়নি তারা। সরকারের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহেতা জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইন অনুযায়ী, অননুমোদিতভাবে টেলিফোনে আড়িপাতা বেআইনি। আগেই হলফনামায় তা স্পষ্ট করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সরকার মনে করছে, এই ধরনের মামলার শুনানি হওয়া উচিত নয়। সন্ত্রাসবাদীদের তহবিল এবং অন্যান্য গোপনীয় বিষয়ে শুনানি হলে তাতে সরকারের ক্ষতি। পাশাপাশি, সরকার আরও মনে করে কোনও বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার হয়েছে কি না তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা হতে পারে না। জাতীয় সুরক্ষা এবং জনহিত বিষয়ক তথ্য হলফনামা দিয়ে জানানো যেতে পারে না।

বিচারপতি সূর্যকান্ত বলেন, “জাতীয় সুরক্ষার বিষয়ে আমরা জানতে চাই না। কিন্তু, সাধারণ নাগরিকের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে কি না সেই তথ্যই হলফনামায় জানতে চাওয়া হয়েছিল”।

প্রধান বিচারপতি এনভি রমন বলেন, “জাতীয় সুরক্ষা বা প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত কোন তথ্য জানার ইচ্ছে আমাদের নেই। আপনাকে বিস্তারিত হলফনামা দিতে বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন আপনি অন্য কথা বলছেন। গুরুতর প্রশ্ন হল, সংবিধানের ২১ নম্বর অনুচ্ছেদ প্রদত্ত অধিকার লংঘন করা হয়েছে কি না। অর্থাৎ, আইন স্বীকৃত কোনও পদ্ধতি ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে রাজনীতিক সাংবাদিক, আইনজীবী, বিচারক এবং অন্যদের টেলিফোনে আড়িপাতা হয়েছে কি?”

এর উত্তরে তুষার মেহেতা বলেন, পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার হলফনামা দিয়ে জানানোর বিষয় হতে পারে না। কারণ এটি জাতীয় সুরক্ষা এবং প্রতিরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একটি বিষয়।

কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এদিন আদালতে প্রাক্তন তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ (Ravi Shankar Prasad) এবং বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের (Aswani Baisnav) সংসদে দেওয়া বিবৃতির উল্লেখ করা হয়। যেখানে তারা বলেছিলেন, “কেন্দ্রের কড়া আইন ও বন্দোবস্ত উপেক্ষা করে কেউ কারও ফোনে আড়ি পাততে পারে না”।

প্রধান বিচারপতি এনভি রমন বলেন, হলফনামা পেশ করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে বারবার সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন রায় ঘোষণা ছাড়া আমাদের কাছে আর অন্য কোনো রাস্তা নেই।

মামলাকারীদের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী কপিল সিব্বাল (Kapil Sibbal) । সিব্বাল জানান, 2011 সালে জেঠমালানি মামলার রায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল নাগরিকের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ক্ষেত্রে সব তথ্য সামনে আসা দরকার। সিব্বাল আরও বলেন, “আমরা জানতে চাই পেগাসাস সফটওয়্যার ব্যবহার করে সরকার নাগরিকের অধিকার হরণ করেছে কি না”।

মামলাকারী এন রামের আইনজীবী কপিল সিবাল আদালতে বলেন, “যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সরকারের দায়িত্ব। দেশের নাগরিকের গোপনীয়তা রক্ষা করাও সরকারের কর্তব্য। পেগাসাস স্পাইওয়্যার সম্পূর্ণরূপে অবৈধ। এখন সরকার যদি বলে তারা। হলফনামা দিতে পারবে না তাহলে সহজেই ধরে নেওয়া যেতে পারে, পেগাসাস-এর ব্যবহার হয়েছে এবং হচ্ছে”। মামলার পরবর্তী শুনানি ২০ সেপ্টেম্বর।

 

advt 19

 

 

Previous articleকরোনা আবহে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ধুনুচি নেচে মনোনয়ন বিজেপি প্রার্থী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়ালের
Next articleভবানীপুর উপনির্বাচন: বিজেপি করোনা বিধি ভাঙলেও বাম প্রার্থীর মনোনয়ন ছিল সাদামাটা