চলতি মেয়াদে ১৯ সাংসদকে হারালো জাতীয় সংসদ

খায়রুল আলম (ঢাকা) : বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ চলতি মেয়াদে পৌনে তিন বছরে ১৯ জন আইনপ্রণেতাকে হারিয়েছে। তাদের মধ্যে ১৭ জন ক্ষমতাসীন সরকারি দল আওয়ামী লীগের, দুজন প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির। দেশের সংসদের ইতিহাসে এত স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এত সংখ্যক সংসদ সদস্যের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দশম সংসদের পুরো পাঁচ বছরে মারা যান ১৫ জন সদস্য।

একাদশ জাতীয় সংসদের এযাবত মৃত সংসদ সদস্যদের চার জন মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে প্রাণ হারান। সর্বশেষ নানা স্বাস্থ্যগত জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার ভোরে মারা যান জাতীয় পার্টির (জাপা) সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী।

তার মৃত্যুতে মঙ্গলবার শোক প্রস্তাবের আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এবার যখন শুরু করলাম দুইজন সংসদ সদস্য হারালাম। আবার এবার মুলতবি অধিবেশনের আগে কালকেই (সোমবার) পেলাম এই মৃত্যুর খবর। সত্যি খুবই হৃদয় ভারাক্রান্ত হলো।”

সংসদ নেতা বলেন, “দুর্ভাগ্য হলো এই সংসদের একের পর এক সদস্য হারাচ্ছি। এই সংসদে আমরা এতজন সংসদ সদস্য হারালাম এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক। এরকম প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে শোক প্রস্তাব নিতে চাই না।”

চলতি একাদশ সংসদের যাত্রাই শুরু হয় সংসদ সদস্যের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের মাত্র তিন দিন পরেই ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

আরও পড়ুন-বড় সাফল্য দিল্লি পুলিশের, বানচাল করল নাশকতার ছক, গ্রেফতার ৬ জঙ্গি

অবশ্য সৈয়দ আশরাফ নির্বাচিত হওয়ার পর গেজেট প্রকাশ হলেও থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন থাকায় তিনি শপথ নিতে পারেননি। সেই হিসেবে তিনি একাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে গণ্য হননি। একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসার আগেই তিনি মানা যান।

চলতি সংসদ বিরোধীদলীয় নেতাকেও হারিয়েছে। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই মারা যান সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, দেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। করোনাভাইরাসের বিস্তার বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার পর সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত দেশে শতাধিক সংসদ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন।

মৃত্যু হয়েছে বর্তমান সংসদের চার জন সদস্যের। সংসদ সদস্যদে মধ্যে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে মারা যান সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি গত বছর ১৩ জুন রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা জানান।

এরপর ওই বছরই ২৭ জুলাই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মারা যান নওগাঁ-৬ আসনের এমপি ইসরাফিল আলম। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নেওয়ার পর আক্রান্ত হয়ে গত ১১ মার্চ মারা যান সিলেট-৩ আসনের সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী। গত ১৪ এপ্রিল মারা যান সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন খসরু।

এ বছর আরও গেছেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের হাসিবুর রহমান স্বপন (২ সেপ্টেম্বর), কুমিল্লা-৭ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক মো. আলী আশরাফ (৩০ জুলাই) এবং ঢাকা-১৪ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক (৪ এপ্রিল)।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি বাগেরহাট-৪ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হোসেন, ১৮ জানুয়ারি বগুড়া-১ আসনের আবদুল মান্নান, ২১ জানুয়ারি সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী যশোর-৬ আসনের ইসমাত আরা সাদেক, ২ এপ্রিল মারা যান সাবেক ভূমিমন্ত্রী পাবনা-৪ আসনের শামসুর রহমান শরীফ, ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং ১০ জুলাই সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা-১৮ আসনের সাহারা খাতুন মারা যান।

একাদশ সংসদের প্রথম বছরে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই মারা যান আওয়ামী লীগের এমপি রুশেমা বেগম (মহিলা আসন-৩৪)। একই বছরের ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি চট্টগ্রাম-৮ মঈন উদ্দীন খান বাদল ও ২৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের এমপি গাইবান্ধা-৩ আসনের মো. ইউনুস আলী সরকার মারা যান।

মঈন উদ্দীন খান বাদল বাংলাদেশ জাসদের নেতা হলেও তার দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত না হওয়ায় তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করেন। সেই হিসেবে তিনি সংসদে আওয়ামী লীগেরই সংসদ সদস্য ছিলেন।

এর আগে দশম সংসদের পুরো পাঁচ বছরের মেয়াদে দুজন মন্ত্রী, একজন প্রতিমন্ত্রী ও একজন বিরোধীদলীয় হুইপসহ ১৫ জন এমপি মারা যান। তাদের মধ্যে ১২ জন আওয়ামী লীগের। তিনজন ছিলেন জাতীয় পার্টির সদস্য।

advt 19

 

Previous articleবড় সাফল্য দিল্লি পুলিশের, বানচাল করল নাশকতার ছক, গ্রেফতার ৬ জঙ্গি
Next articleজঙ্গিপুরে জাকির হোসেনের সমর্থনে ভোট প্রচারে TMCP