গুলিতে মৃত ব্যক্তিকে লাথি-চড়-ঘুষি চিত্র সাংবাদিকের, ভিডিও ভাইরাল হতেই গ্ৰেফতার

পুলিশের গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছেন এক ব্যক্তি। তখনো হয়তো প্রাণ রয়েছে তার শরীরে, ওই অবস্থাতেই তার ওপর লাফিয়ে পড়ে এলোপাথাড়ি লাথি চড়-ঘুসি চালাচ্ছেন কাঁধে ক্যামেরা ঝোলানো আর একজন। পুলিশ তাকে সরিয়ে আনলে ফের চলছে মারধর। মৃতপ্রায় ওই ব্যক্তির উপর লাঠির বাড়ি চালাচ্ছে পুলিশও(Police)। অসম(Assam) রাজ্যে চরম অমানবিক এই ভিডিও প্রকাশ এসেছে বৃহস্পতিবার। ভয়াবহ এই ভিডিও দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। প্রশ্ন উঠছে এতটাও নৃশংস হতে পারে সভ্য সমাজ। এরই মাঝে শুক্রবার প্রকাশ্যে এসেছে মৃতপ্রায় ওই ব্যক্তির উপর হামলা চালানো যুবকের পরিচয়। জানা গেছে, কাঁধে ক্যামেরা ঝুলিয়ে পৈশাচিক ওই হামলা চালানো যুবক একজন চিত্রসাংবাদিক(photojournalist)। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর নিন্দায় সরব হয়েছে সব মহল। রীতিমতো চাপের মুখে পড়ে ইতিমধ্যেই ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। জানা গিয়েছে ওই যুবকের নাম বিজয় শংকর বনিয়া।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বনিয়া একজন চিত্রসাংবাদিক। জেলা প্রশাসনের তরফে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ওই মিশনে ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করতে। সেখানে ঘটে যায় নাটকীয় এই ঘটনা। তবে একজন সাংবাদিকের এহেন আচরণ নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। গোটা দেশ ইতিমধ্যেই নিন্দায় সরব হয়েছে। ওই সাংবাদিক তো বটেই, বিজেপি শাসিত অসম রাজ্যে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ম প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সব মহলে।

ঠিক কী ঘটেছিল সেদিন?
বাংলাদেশি সন্দেহে দরং জেলার ঢলপুরের গরুখুঁটি এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় অসম পুলিশ। জবরদখলকারীদের উচ্ছেদ করতে গিয়েই বাধে বিপত্তি। দখলকারীরা পুলিশকে বাধা দিলে পুলিশ প্রথমে এলোপাথাড়ি লাঠি চালায়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্তে না আসায় পুলিশ গুলি চালাতে শুরু করে। এতে কমপক্ষে ২ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়ে। জখম হন বহু মানুষ।

আরও পড়ুন:শক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণাবত, শনিবার থেকেই ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, দরং জেলার যে জায়গায় এদিন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়, সেই জায়গাটি খাস এলাকা বলে পরিচিত। ওই এলাকাটি মূলত পশুচারণের জন্যই বরাদ্দ ছিল। কিন্তু সেখানেই বেশকিছু বাঙালি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছে। ওই বাঙালি পরিবারগুলিকে বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করা হয়।

বৃহস্পতিবার সকালেই পুলিশ ওই এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। পুলিশ উচ্ছেদ শুরু করলে প্রবল বাধা দিতে শুরু করে ওই এলাকায় বসবাসকারীরা। পুলিশ কয়েকটি বাড়ি ও দোকান ভাঙচুর করতেই জবরদখলকারীরা প্রবলভাবে পুলিশকে বাধা দিতে শুরু করে। দখলকারীরা পুলিশকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ প্রথমে বিক্ষোভকারীদের উপর নির্বিচারে লাঠি চালায়। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে না পেরে এরপর গুলি চালাতে শুরু করে। পুলিশের গুলিতে ২ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। তবে ঘটনাস্থলে পুলিশের নির্মমতা দেখে শিউরে উঠেছে গোটা দেশ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গিয়েছে, গুলি করে মারার পর মাটিতে পড়ে থাকা বিক্ষোভকারীদের উপরেও ব্যাপক লাঠি চালাচ্ছে পুলিশ। এমনকী, মাটিতে পড়ে থাকা ব্যক্তির উপর আঘাত করতে দেখা গিয়েছে।

এই ঘটনায় অসম পুলিশের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছে গোটা দেশ। কংগ্রেস-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল দাবি করেছে, যে সমস্ত পুলিশ অফিসার এ দিনের ঘটনায় জড়িত তাদের বরখাস্ত করতে হবে। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, বিজেপির পুলিশ যে কত নির্মম সেটা আজ দেখল গোটা দেশ। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে এই ঘটনার দায় নিতে হবে। এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বিরোধীরা কড়া সমালোচনা করলেও অসম সরকার পুলিশের গুলিচালনার নিন্দা করেনি।

advt 19

 

Previous articleশক্তি বাড়াচ্ছে ঘূর্ণাবত, শনিবার থেকেই ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
Next articleমিশন গোয়া! জল মাপতে দ্বীপরাজ্যে দুই তৃণমূল সাংসদ ডেরেক-প্রসূন