মায়ের ব্যস্ততায় খাঁচাবন্দি শৈশব 

দূর থেকে ডুয়ার্সের চা বাগান একটানা যতটা সবুজ মনে হোক । দুটো কুড়ি দুটো পাতার প্রেম যতই রোমান্টিক বলে মনে হোক, বাস্তবে কিন্তু চা বাগানের মানুষদের জীবনটা ততটাই কঠিন। রুটি রোজগারের তাগিদে ডুয়ার্সের চা বাগানের খাঁচা বন্ধি দশায় শৈশব কাটছে। যেখানে হাসি-আনন্দে দিন কাটার কথা শৈশবের। সেখানে খাঁচা বন্দিদশায় দিন কাটতে হচ্ছে তাদের।

একদিকে রুটি রোজগারের তাগিদে বাড়ির মায়েদের যেতে হয় চা বাগানে কাজ করতে। অন্য দিকে চা বাগান গুলোতে বাচ্চা চুরি কিংবা শিশুর ওপর বন্য জীবজন্তুর আক্রমণের ভয় থাকে! তাই খাঁচা বন্ধি দশায় শিশু সন্তানকে রেখে মায়েদের চা বাগানে পাতা তোলার কাজ করতে যেতে হয় ডুয়ার্সের বিভিন্ন টি গার্ডেনে।

 

কেমন করে রাখা হয় শিশুদের? চা-পাতা বহনকারী ট্রলারগুলিকে চার দিকে নেট দিয়ে ঘিরে

দেওয়া হয়। যাতে জীবজন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষা

পায় শিশুরা । কারন চা বাগান এলাকাগুলিতে সচরাচর বন্য জীব জন্তু আক্রমণ হয়ে থাকে। ট্রলার গুলিতে মাথার উপর শেড তৈরি করে শিশু রাখার জায়গা তৈরি করা হয়। সেখানে শিশুদের দেখভাল করার জন্য নিযুক্ত থাকে দাইমা। দাইমাই শিশুদের দেখভাল করেন। একটা একটা ট্রলারের ভিতরে ১০-১২ জন শিশুকে থাকতে হয় কয়েক ঘণ্টা ধরে। স্থানীয়ভাবে একে টং ঘর বলা হলেও একে ক্রেজ ভ্যান বলা হয়। তবে শিশুদের দেখাশোনার কোনো খামতি রাখেন না বাগান কর্তৃপক্ষ। এর জন্য চা বাগানের নিযুক্ত আছেন বিভিন্ন ধাপে ওয়েলফেয়ার অফিসার ।সেখানে শিশুদের জন্য জল সহ টয়লেটের ব্যবস্থা রাখা হয়। জানা গেছে, ডুয়ার্সের চা-বাগান শ্রমিক মহল্লাগুলিতে সকাল হলেই কাজে বেরিয়ে যায় সকলে। শিশুদের দেখার মতো কেউ থাকে না। তাই বাধ্য হয়ে মায়েরা “ক্রেজ ভ্যানে” রেখে চা-পাতা তোলার কাজ করেন। এই নিয়ে বাগানের কর্মরত এক মহিলা শ্রমিক, শর্মিলা মহালি,সরিতা মুনডারা বলেন, সকালে উঠে পুরুষরা কাজে যায়। শ্রমিক মহল্লা গুলি মূলত পুরুষ শূন্য হয়ে থাকে ।তাই বাধ্য হয়ে শিশুদের এই রকম করে রেখে কাজ করতে হয় বলে জানালেন তারা। তবে শিশুদের অসুবিধা প্রতি বাগান কর্তৃপক্ষ সর্বদাই নজর রয়েছে।

 

এই বিষয়ে তেলিপাড়া চা বাগানের সিনিয়র ওয়েলফেয়ার ম্যানেজার রিংকু গাঙ্গুলী বলেন “শিশুদের সুরক্ষার জন্য কোনো রকম ত্রুটি রাখা হয় না।

প্রত্যেকটা বাগানের ফুল প্রটেকশনের সাথে শিশুদের রাখা হয়, সন্তান সবার কাছে প্রিয়। তাই শ্রমিক সহ বাগান কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে সদা সতর্ক। শিশুদের সুরক্ষা সহ দেখাশোনার ব্যাপারে কোনোরকম সমঝোতা করা হয় না। সেখানে জল সহ খাবারের সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিছু সময় পর মায়েরা কাজ থেকে এসে সন্তানদের সাথে কিছুটা সময় কাটায়।

 

জানা গেছে, এমন রীতি বেশ পুরনো। সম্পূর্ণ ডুয়ার্স এলাকা জঙ্গলে ঘেরা ছিল। তারপর সেই এলাকায় ইংরেজরা চা বাগানের পত্তন করেন। তার পর বনজন্তুদের হাত থেকে শ্রমিকদের শিশুদের বাঁচাতে ইংরেজরা এই ব্যবস্থা করেন। কিন্ত এই পরমপরা আজও চলে আসছে। যদিও এর বিকল্প হিসেবে কোনো ভাবা হয়নি আজও। প্রতিটা বাগানে যদিও এই সমস্ত দেখভাল করার জন্য ওয়েলফেয়ার অফিসার নিযুক্ত করা হয়। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেও শৈশবের বন্দি দশার বিকল্প হিসেবে সরকারও উদাসীন থেকেছে বলে অভিযোগ।

 

এই বিষয়ে ধূপগুড়ি ব্লকের সিডিপিও সন্দীপ দে জানান শিশুদের দেখভালের সম্পূর্ণ বিষয়টি চা বাগান কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব থাকে এর জন্য চা বাগান কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ওয়েলফেয়ার অফিসার কে নিয়োগ করে থাকে ।

advt 19

Previous articleব্লাড প্রেশারের ওষুধ খাচ্ছেন? অবশ্যই বাড়িতে রাখুন এই জিনিসটি
Next articleমূক-বধির যুবতীকে ধর্ষণ ও খুনের চেষ্টা, অভিযুক্ত পলাতক