দেবীর কৃপায় পাকসেনার কু-নজরে পড়েও রক্ষা পেয়েছে সর্দার পরিবারের পুজো

সীমান্তের পুজো, মানেনি দুই বাংলার ভাগ বাটোয়ারা। পূর্ব পাকিস্তানের(East Pakistan) বিতর্কিত মার্শাল ল-এর(martial Law) জের পড়েছিল এই পুজোতে। সর্দার পরিবারের বিশ্বাস, দেবীর অশেষ কৃপা। তাই সেনার কু-নজরে পরেও রক্ষা পেয়েছে পরিবার এবং পুজো(Puja)।

খুলনা থেকে এপারে পুজো স্থানান্তকরণ ১৯৫৬ সালে। তারপর থেকে নলিনী সরকার স্ট্রিটের ৭ নম্বর বাড়িতে সাড়ম্বরে পালিত হচ্ছে দুর্গাপুজো(DurgaPuja)। বাড়ির নাম ‘সুখতারা’। কলকাতার এক সরু গলিতে এক প্রাসাদের স্বমহিমায় অবস্থান বললেও ভুল হবে না। সেখানেই পূজিতা কাঁটাতারের বেড়াকে বুড়ো আঙুল দেখানো সর্দার পরিবারের দেবী দুর্গা।

পরিবারের প্রবীণ সদস্য সুশান্ত সর্দার বলেন, ‘ওপার বাংলায় আমাদের বাড়ি ছিল শ্রীপুর গ্রামে। পরিবারের অনেকেই আবার কলকাতাতেও থাকতেন। পুজোর সময়ে এপার থেকেই সবাই খুলনায় যেত। কিন্তু ১৯৪২ সালের পর থেকে সমস্যা হতে শুরু করে। দেশভাগের পর খুলনা হল পূর্ব পাকিস্তান। ইছামতীর জলেও ভাগবাটোয়ারা। কিন্তু আমাদের বিশেষ অনুমতি ছিল। ওপারের আমাদের নিজস্ব ঘাট ছিল। সেখানে সহজেই আমাদের পরিবার যেতে পারত। পুজোর সময়েও তাই সমস্যা হত না।’ সময় যত এগিয়েছে ভারত-পাক সমস্যা বেড়েছে। জন্মলগ্ন থেকেই সে দেশ সেক্যুলার নয় বরং মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষে ছিল। পঞ্চাশের দশক থেকে এই দাবি প্রকট হতে শুরু করে। কড়া নজর পড়ে হিন্দুদের পরিবারে। সেই সময় সর্দার পরিবারের জমিদারির পতাকা দেখে পাক সেনার সন্দেহ আরও বেড়ে গিয়েছিল বলে জানালেন সুশান্তবাবু। তিনি বলেন , ‘ওঁরা ভাবত বাড়িতে পাকিস্তান সরকার বিরোধী কোনও কার্যকলাপ হয়। ১৯৫৬ সাল , ‘মার্শাল ল’ লাগু করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে পাক সরকার। সেখানে হিন্দুদের স্থান নেই। পুজোর সময়েই হানা দেয় তৎকালীন সে দেশের আয়ুব খানের সেনারা। বহুক্ষণ বাড়ি তল্লাশি করেও কিছু না পেয়ে শেষে মায়ের প্রসাদ খেয়ে চলে গিয়েছিল।’ এরপরেই পরিবারের তৎকালীন সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেন আর খুলনায় পুজো করা সম্ভব নয়। সুশান্তবাবু বলেন , ‘বিশেষ অনুমতিও তখন আর কাজ করছিল না। বীভৎস রকম পরীক্ষা দিতে হত। পরিবারের মেয়ে বউদের নাকা চেকিং হত। সেটাই স্বাভাবিক। কলকাতায় নতুন জমি কেনা হল। নতুন বাড়ি তৈরি করে শুরু হল পুজো। সেই থেকে আজ পর্যন্ত আর কোনও সমস্যা হয়নি।’

সমস্যা অনেক দূর, কিন্তু আজও বাড়ির প্রবীণদের স্মৃতিতে স্পষ্ট পাক সেনার হানা। মনে মনে বারবারই বলে ওঠেন, ‘যা সব দিন গিয়েছে! ভালোই হয়েছে, তা গিয়েছে।’

সর্দার বাড়ির দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে বৃহন্নন্দিকেশ্বর পুরাণ মতে। মায়ের ঘট এবাড়িতে বসে প্রতিপদেই। চন্ডী ঘরে প্রতিপদে চন্ডীঘট স্থাপন ও চন্ডী পাঠ দিয়েই শুরু হয়ে যায় এ বাড়ির দুর্গাৎসব প্রতিপদ থেকেই চলে মায়ের নিত্য সেবা আরতি এরপর ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় হয় বেলবোধন অনুষ্ঠান। সপ্তমীর সকালে নবপত্রিকা গঙ্গা ঘাটে স্নান করিয়ে তা মায়ের পাশে স্থাপন করে দেবী ঘটস্থাপন, প্রাণপ্রতিষ্ঠা ও চক্ষুদান বিধির পর হয় মায়ের প্রতিষ্ঠা আরতি। সপ্তমীর সন্ধ্যায় বাড়ির বিশেষ নিয়ম মেনে রাখা হয় নবগ্রহের ঘট ও আলাদা আলাদা পতাকা। কুমারী পুজো বা ধুনা পোড়ানোর চলন যদিও সরদার বাড়িতে নেই কিন্তু প্রতিদিন এখানে মাকে দেওয়া হয় ১০৮ পদ্মফুল। মাকে পুজোর সাজে পড়ানো হয়ে থাকে বেনারসি ও বাড়ির গহনা তবে বিদায়বেলায় মাকে সাজানো হয় ডাকের সাজে।

advt 19

 

Previous articleভারতীয় দলের নতুন জার্সি নিয়ে কী বললেন স‍ৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিরাট কোহলি?
Next articleদীর্ঘদিনের বন্ধুকে বিয়ে করলেন ‘জগদম্বা ‘ রোশনি