কেদারনাথে গিয়ে আটকে বাংলার পর্যটকরা, উত্তরাখণ্ড পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ

পুজোর পরেই উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) পথে পা বাড়িয়েছিলেন চুঁচুড়ার (Chinsura) রায় পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে বিপদ যে এভাবে আসবে তা আন্দাজ করতে পারেননি। প্রবল বর্ষণে জায়গায় জায়গায় নেমেছে ধস। ভেসে গিয়েছে একাধিক এলাকা। ভারী বর্ষণে উত্তরাখণ্ডে ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে বেড়াতে গিয়ে সঙ্কটে হুগলির রায় পরিবার। তাঁদের অভিযোগ, পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কোনও সহযোগিতা করছে না।

১৫ অক্টোবর পূর্বা এক্সপ্রেসে রওনা হয়ে ১৭ তারিখ কেদারে পৌঁছন বিশ্বজিত্‍ রায় ও তাঁর স্ত্রী চুমকি ও মেয়ে অন্বেষা। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন অরিজিত্‍ শীল ও সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। এদিকে গোটা উত্তরাখণ্ড জুড়ে শুরু হয়েছে ভারী বর্ষণ। নেমেছে ধসও। ভারী বৃষ্টিপাতের সঙ্গে চলছে ঝড়। বাধাপ্রাপ্ত উদ্ধারকাজ। কেদারনাথে (Kedarnath) যে হেলিকপ্টার সার্ভিস (Helicopter Service) ছিল তাও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে, পাহাড়েই আটকে থাকতে বাধ্য হয়েছে রায় পরিবার।

advt 19

এদিকে তাঁদের সঙ্গী অরিজিত্‍ ও সত্যব্রত ঝুঁকি নিয়ে গৌরীকুণ্ডে পৌঁছতে পারলেও বিশ্বজিতের পরিবার তা পারেনি। কেদার থেকে বদ্রীনাথ, গুপ্তকাশী, লক্ষ্ণৌ হয়ে ২৪ তারিখ ফেরার কথা ছিল তাঁদের। তবে, বাধ সেধেছে আবহাওয়া।

চুমকি রায়ের কথায়, “আমারা বৃষ্টির জন্য আটকে পড়েছি। বাংলায় যেরকম আমফানের ভয়াবহতা দেখেছি এখানেও তেমন ভয়ঙ্কর ঝড়। আমাদের হোটেল ছাড়তে বলা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে কোথায় থাকব সেটাই বুঝতে পারছি না। নীচে না নামা পর্যন্ত সুরক্ষিত রয়েছি এমনটা বলতে পারব না। যে হারে ঝড় হচ্ছে কখন কী হবে তা জানা নেই”। রেল পরিষেবা বন্ধ। পুলিশ কোনও সহযোগিতা করছে না বলে অভিযোগ।

এদিকে, বিশ্বজিৎদের আটকে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন চুঁচুড়ার রায় পরিবার। বিশ্বজিতের দাদা কেদার রায় বলেন, “প্রথমে তো ছবি দিচ্ছিল। কিন্তু আচমকা আটকে পড়েছে। আমরা বুঝতে পারছি না কী করব। ওদের যেভাবে হোক ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। জানি না ফিরতে পারবে  কিনা। ওখানে তো ইলেকট্রিসিটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মোবাইলেও যোগাযোগ করব যে সম্ভব হচ্ছে না। দেখা যাক কী হয়! আমরা এখানে থানাকে জানিয়েছি। রেলেও যোগাযোগ করছি।”

শুধু, চুঁচুড়ার রায় পরিবারই নয়, বেড়াতে গিয়ে আটকে গিয়েছেন হাওড়ার ১৪ জন পর্যটকের একটি দল। সেখানে ৬ জনের খোঁজ মিললেও বাকি ৮ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি। তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে। প্রবল বৃষ্টিতে নদীর জল স্তর এতটাই ফুলে-ফেঁপে উঠতে শুরু করেছে যে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপর্যয়ের ছবি সামনে আসছে। চার ধামের জন্য বিখ্যাত এই রাজ্যে আটকে রয়েছেন প্রায় দেড়হাজার পর্যটক।

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সামনে আসো ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জলের তোড়ে নিমেষের মধ্যে নদীর গ্রাসে চলে যাচ্ছে আস্ত সেতু। নৈনিতালের জল বেড়ে প্রবল গতিতে ঢুকে পড়ছে আশেপাশের এলাকায়। ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামিকে ফোন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে চার ধাম যাত্রা। যে তীর্থযাত্রীরা ইতিমধ্যেই হরিদ্বার বা হৃষিকেশে পৌঁছেছেন, তাঁদের আপাতত পাহাড়ের দিকে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখতে দেরাদুনে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। সেই কন্ট্রোল রুম ইতিমধ্যেই পরিদর্শন করেছেন উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুস্কর সিং ধামি।

কেদারনাথ থেকে ফেরার সময় আটকে পড়েছিলেন ২২ জন তীর্থযাত্রী। এদিন সকালে তাঁদের উদ্ধার করেছে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। যদিও আপাতত চারধাম যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টা ধরে টানা বৃষ্টিপাত হওয়ার ফলে সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বদ্রীনাথ ন্যাশনাল হাইওয়ে। চামোলি জেলার অন্তত সাতটি জায়গায় ধস নেমেছে।

আরও পড়ুন- “নবমীতে কাঁটা বেছে মাছ খেতে হবে”, বিজেপি নেতাকে কটাক্ষ বাংলা পক্ষের

 

 

Previous article“নবমীতে কাঁটা বেছে মাছ খেতে হবে”, বিজেপি নেতাকে কটাক্ষ বাংলা পক্ষের
Next articleদফায় দফায় আলোচনার পরে আরজি করে ৩ বিভাগের স্নাতকোত্তরের পড়ুয়ারা যোগ দিলেন কাজে