Friday, December 5, 2025

সিঙ্গুরে ডাকাত-কালীর পুজোয় এখনও চলে শতাব্দী প্রাচীন রীতি

Date:

Share post:

কেউ বলে ৫০০ বছর। আবার কারো মতে ৩০০ বছর। এই কালীর বয়স নিয়ে ভিন্ন মত দীর্ঘদিনের। বহু বছর আগের কথা। হুগলির (Hoogli) সিঙ্গুরে তখনও তেমন একটা জনপদ গড়ে ওঠেনি। ঘন জঙ্গলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। দিনের বেলাতেও এই পথ দিয়ে যেতে ভয় পেত মানুষ। তখন ঘন জঙ্গলের মধ‍্যে ছিল ডাকাতদের আস্তানা। তবে এই পুজোকে কেন্দ্র করে নানা কাহিনী প্রচারিত আছে। একদিন অসুস্থ রামকৃষ্ণ দেবকে দেখতে মা সারদাদেবী কামারপুকুর থেকে সিঙ্গুর হয়ে দক্ষিণেশ্বর যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে একটু পিছিয়ে পড়েছিলেন তিনি। সেই সুযোগে ডাকাত দল মা সারদাকে আটক করে। কথিত আছে তখনই মা সারদার পিছনে দর্শন দেন স্বয়ং মা কালী। তাই দেখে অপরাধ বুঝতে পেরে সারদাদেবীর পা ধরে কাঁদতে শুরু করে ডাকাতরা। রাত অনেক হয়ে যাওয়ায় ওই দিন পুরুষোত্তম পুরেই রাতে থাকেন মা সারদা। রাতে তাঁকে খেতে দেওয়া হয় চাল-কড়াই ভাজা। পরের দিন ডাকাতরাই তাঁকে দক্ষিণেশ্বরে ঠাকুর রামকৃষ্ণের কাছে পৌঁছে দেন। কেউ বলে গগন ডাকাত। আবার কারো মতে বিশে ডাকাতের দল তখন এই অঞ্চলের ত্রাস ছিল।

কথিত আছে, চালকেবাটী গ্রামের মোড়ল চাষের সামগ্রী নিয়ে হাটে যাওয়ার সময় সিঙ্গুরের পথে ক্লান্ত হয়ে গাছের তলায় ঘুমিয়ে পড়েন। তখন মা কালী তাঁকে স্বপ্নাদেশ দেন ঐ স্থানে মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে। পরে তিনি এক চালার ছোট মন্দির তৈরি করে দেন।মন্দির তো হল, পুজো কে করবে, কীভাবে চলবে পুজোর খরচ? , বর্ধমানের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মায়ের পুজোর জন‍্য জমি দান করেন। সেবাইতও রাখা হয়। সেই সেবাইতের বংশধরেরা এখনও পুজো চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম থেকেই পুজোয় ভোগ দেওয়া হয় চাল-কড়াই ভাজা আর কারণ দিয়ে। শুরুতে ছাগ বলি দেন সেবাইত ও রাজার প্রতিনিধিরা। পরে হয় অন‍্যদের মানসিক বলি। কথিত আছে, সেই সময় ডাকাতি করতে যাওয়ার অনুমতির জন‍্য পুজো-যজ্ঞ চলত। ঘটের উপর মায়ের পায়ের ফুল না পড়া পর্য‍ন্ত চলত পুজো। তাতে কাজ না হলে নরবলিও দেওয়া হত। বহু বছর ধরে সিঙ্গুরের এই কালী ডাকাত কালী নামেই পরিচিত।

আরও পড়ুন:খেলরত্ন নয়, অর্জুন পুরস্কার চাইছেন রবি, জানালেন ফেডারেশনের এক কর্তা

এখন মন্দির প্রাঙ্গন ঝাঁ চকচকে। সারা বছর প্রচুর ভক্ত সমাগম হয়। এই মন্দিরে মা কালীর কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রাচীন রীতি মেনে আজও এই প্রতিমার কোনও পরিবর্তন হয়না। চার বছর পর নবকলেবর হয়। তখন মূর্তি সংস্কার করা হয়। সারা বছর তামার ঘটের জল পাল্টানো হয় না। পুজোর দিন বর্গক্ষত্রিয় পরিবারের সদস‍্যরা গঙ্গা থেকে জল এনে দেন। তখন ঘট পরিবর্তন করা হয়। তখন মন্দিরে কোন মহিলার প্রবেশ নিষিদ্ধ। পুজোর নদিন আগে থেকে শুরু হয় চণ্ডীপাঠ।

 

spot_img

Related articles

SIR-র সময় বাড়াতে চায় কমিশন: উল্টো সুর রাজ্যের CEO-র!

রাজ্যে একের পর এক বিএলও মৃত্যু ও অসুস্থতার পরে বাংলার বিএলও-রা লাগাতার আন্দোলনের পথে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাঁদের...

Road to London: ভারত থেকে সড়ক পথে ১৬০০০ কিলোমিটার পাড়ি

এককালে নাকি কলকাতা থেকে লন্ডন বাস চলত। তবে সেসব সোনালি অতীত পেরিয়ে জাহাজের পরে, এখন বিমানের যুগ। কিন্তু...

বাগদানের আংটি উধাও, বিয়ে বিতর্কের পর প্রথমবার সমাজ মাধ্যমে এলেন স্মৃতি

বিয়ে নিয়ে জটিলতার মধ্যেই প্রথমবার সমাজ মাধ্যমে এলেন স্মৃতি মান্ধানা(Smriti Mandhana)। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই চর্চায় স্মৃতি-পলাশের সম্পর্ক। ...

সুপ্রিম নির্দেশের দুদিন পরেও চুপ কেন্দ্র! ফের মামলা করার পর শুক্রে দেশে ফিরলেন সোনালি

কেন্দ্রের ঔদ্ধত্যের চরম নিদর্শনের সাক্ষী বীরভূমের সোনালি খাতুন। সুপ্রিম কোর্টের এক দিন নয়, দুদিন ধরে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশে...