Sunday, November 9, 2025

মৃত্যুবাসর সাজিয়ে প্রিয়জনদের ডেকে বিদায় নিলেন সুস্মিতা!

Date:

Share post:

নিজের মৃত্যুবাসর নিজেই সাজানো। যাকে যা বলার, বার্তা দেওয়ার- তা সব নিখুঁতভাবে চিঠিতে লেখা। আর আগে থেকেই প্রিয়জনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে রাখা “ওই দিন, ওই সময় আমার বাড়িতে চলে এসো”। হ্যাঁ, আইনের চোখে এটা আত্মহত্যা। কিন্তু এরকম মৃত্যুবাসর সাজিয়ে যিনি বিদায় নিয়েছেন সেই সুস্মিতা রায়চৌধুরীর কাছে এটি “স্বেচ্ছামৃত্যু’।

পাঁচ-সাতদিন আগে থেকেই নিমন্ত্রণ চলছিল। সবাই ভেবেছিলেন তাঁদের প্রিয় মুনদি হয়তো কোনও সারপ্রাইজ দেবেন তাঁদের। হয়তো নতুন কোনও রান্না খাওয়াবেন। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কেউ বুঝতে পারেননি আড়াই মাস আগে যে মানুষটি ৬০ পূর্ণ করেছিলেন, তিনি ৩১ অক্টোবর, রবিবার নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করবেন।

সুস্মিতা কোনও দুরারোগ্য অসুখে আক্রান্ত ছিলেন না। ছিল না কোনও মানসিক যন্ত্রণা বা অবসাদ। তাহলে কেন এরকম সিদ্ধান্ত? কারণটি খুবই বিস্ময়কর। গত বছর জন্মদিনে ফেসবুক পোস্টে সুস্মিতা লিখেছিলেন, “আমার ইচ্ছে, আমার মরণ বাসরসজ্জা আমি নিজেই রচনা করব। এটা আমার খুব ছোটবেলার স্বপ্ন। এ বিষয়ে আমি খুবই রোম্যান্টিক। কোনও দুঃখ না, হতাশা, অবসাদ না। আমার প্রচন্ড ভালোবাসার জীবনকে আমি কিছুতেই স্বাভাবিক যাপনের বিরুদ্ধে আপোস করতে দেব না।”

আরও পড়ুন:উপনির্বাচনে গো-হারা, তথাগতর পর এবার সৌমিত্র-জয়ের নিশানায় বিজেপি নেতৃত্ব

ডানলপের কাছে বি-হাইভ গার্ডেনের ফ্ল্যাটে স্বামীর সঙ্গে থাকতেন সুস্মিতা রায়চৌধুরী। মৃত্যুর আগে খাওয়ার টেবিলে খামে ভরে পুলিশের জন্য চিঠি লেখা থাকে। নিজের আধার কার্ড। আরও কিছু নির্দেশ দেওয়া চিঠি বিভিন্ন জনের উদ্দেশ্যে। সঙ্গে আর্ট পেপারে লেখা রবীন্দ্রনাথের দামিনীর একটি কোটেশন।

রবিবার দুপুরে একতলার বাসিন্দা বোন সঞ্চিতাকে রোজকার মতো আদর করে যান মুন। তার আচরণে বিন্দুমাত্র অস্বাভাবিকতা দেখেননি সঞ্চিতা। সুস্মিতার সংসার ছিল চারতলায়। সমাজকর্মী হিসেবে যথেষ্ট পরিচিত ছিলেন তিনি।বন্ধুবান্ধবের সংখ্যা অগুন্তি। মৃত্যুর আগে ঘনিষ্ঠদের আলাদা আলাদা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ লিখেছিলেন। মেসেজ লেখার পর ফোন বন্ধ করে দেন সুস্মিতা। রবিবার রাতে পুলিশ সেই ফোন অন করার পরেই মেসেজগুলি পৌঁছতে থাকে। স্বামী, জন্যেও রেখে গিয়েছেন বার্তা। তাতে বলা ছিল, একা ঘরে থাকতে কষ্ট হলে কাকে কাকে ডেকে নিতে হবে। আর কয়েকদিন পরে সব সহ্য হয়ে যাবে।

সুস্মিতা লিখেছিলেন
‘সেই ছোট্টবেলা থেকে জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর কথা জানি। জীবনকে যতটা ভালোবাসি, মৃত্যুকেও ততটাই ভালোবাসি। মৃত্যুকে কোনওদিন ভয় পাইনি বলেই তো জীবনকে এতো গভীর ভাবে উপভোগ করতে পেরেছি।…ভিক্ষা না, মৃত্যুকেও আমি অর্জন করতে চাই। মৃত্যু আমার কাছে পালানো নয়। আমি মৃত্যুর প্রণয়প্রার্থী।”

আত্মহত্যার মতো স্বেচ্ছামৃত্যু আমাদের দেশের আইনে অপরাধ। তাই এই মৃত্যু কোনভাবেই গৌরবান্বিত করতে চান না কেউই। তবে শুধু মৃত্যুকে ভালবেসে কেউ এ ধরনের পদক্ষেপ করতে পারে তা ভেবে বিস্মিত সুস্মিতার প্রিয়জনরাও।

spot_img

Related articles

এপিকের সঙ্গে মোবাইল লিঙ্ক না থাকলে অনলাইনে ফর্ম নয়! কমিশনের নিয়মে ক্ষোভে ফুঁসলেন কল্যাণ 

নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশিকা ঘিরে ফের রাজনৈতিক বিতর্ক। রবিবার শ্রীরামপুর পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে ভোট রক্ষা শিবিরে অংশ...

ফাইনাল ম্যাচে শাহরুখের মন্ত্রেই ছাত্রীদের তাতিয়ে ছিলেন? অকপট স্মৃতিদের কোচ

ভারতীয় মহিলা দল বিশ্বকাপ জেতার পরই চক দে ইন্ডিয়ার কবীর খান হয়ে উঠেছেন অমল মুজুমদার(Amol Muzumdar)। কী বলে...

এসআইআর আতঙ্কে মৃতদের পরিবারের পাশে তৃণমূল: রাজ্যজুড়ে শোকাহত পরিবারগুলির ঘরে দলের জনপ্রতিনিধিরা 

এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যজুড়ে মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। কোথাও আত্মহত্যা, কোথাও আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু— ভয় ছড়িয়ে পড়েছে গ্রাম...

বাংলাভাষায় ১০ কোটিও খরচ নয়! বাঙালিবিদ্বেষী বিজেপির রবীন্দ্র-বঙ্কিম ভাগে তোপ গণমঞ্চের

বিজেপি আদতে বাঙালি বিদ্বেষী, তা সাম্প্রতিক সময়ে বারবার প্রত্যক্ষভাবে প্রমাণিত। সেই বিদ্বেষের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে দেশ বাঁচাও...