বেনজির ! কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে অস্তিত্বহীন ঘোষণা সরকারের

শ্রীনগরে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের দখল নিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। প্রথমে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। এরপর সোমবার ক্লাবের জমি এবং ভবনের সরকারি নথি বাতিল করে প্রশাসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

ফের সংবাদমাধ্যমের উপর সরকারি আক্রমণ কেন্দ্রের। জানা গিয়েছে , শ্রীনগরে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের দখল নিয়েছে জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন। প্রথমে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হয়। এরপর সোমবার ক্লাবের জমি এবং ভবনের সরকারি নথি বাতিল করে প্রশাসন নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। এদিন এক সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ক্লাব ভবনের নথি ও যাবতীয় এস্টেট বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।প্রশাসন এই পদক্ষেপের পক্ষে “সম্ভাব্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি”র দোহাই দিয়েছে।

কাশ্মীর প্রেস ক্লাবের কমিটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, সরকারের লক্ষ্য ছিল ক্লাবটি বন্ধ করা এবং “কাশ্মীরে সাংবাদিকদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে রাখা”।
কাশ্মীর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইশফাক তন্ত্রে বলেছেন, “মনে হচ্ছে চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল কাশ্মীর প্রেসক্লাব বন্ধ করে দেওয়া । এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, তারা উপত্যকার একমাত্র গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন সাংবাদিক সংস্থা কাশ্মীর প্রেস ক্লাব নামক ফোরামের মাধ্যমে অনুরণিত সাংবাদিকদের কণ্ঠস্বরকে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। তবে এটা আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে আমাদের সাংবাদিকরা এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে যথেষ্ট সক্ষম এবং পেশাদার। কাশ্মীরে সাংবাদিকতা উন্নতি লাভ করেছে এবং ভবিষ্যতেও তা বজায় থাকবে।”

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পরে, সরকার সেন্ট্রাল সোসাইটি অফ রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে ফের রেজিস্টার করতে বলা হ্য়। ক্লাব ২০২১ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণের জন্য আবেদন করেছিল। রেজিস্ট্রার অফ সোসাইটিজ ২৯ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রেশন পুনর্নবীকরণ করে। কিন্তু হঠাৎই ১৪ জানুয়ারি, জম্মু -কাশ্মীর পুলিশের সিআইডি বিভাগের একটি রিপোর্টের বরাত দিয়ে ক্লাবের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করে দেওয়া হয়। এবং রেজিস্ট্রেশন বাতিলের ২৪ ঘন্টা পরেই ১৫ জানুয়ারি মুষ্টিমেয় সাংবাদিক পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ক্লাব ভবনের দখল নেয়।ওই ঘটনার ৪৮ ঘন্টা পরেই সরকার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ৩০০’র বেশি সদস্যের কাশ্মীর প্রেস ক্লাবকে অস্তিত্বহীন ঘোষণা করে। ক্লাবকে বরাদ্দ করা ভবন ও প্রাঙ্গনের সরকারি স্বীকৃতি বাতিল করা হয়।

স্থানীয় সংবাদপত্র ‘কাশ্মীর ওয়ালা’র সম্পাদক ফাহাদ শাহ বলেছেন, “সাংবাদিকতা এই অঞ্চলে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে গত দুই বছরে, সাংবাদিকদের ক্রমাগত তলব এবং আটকে রাখা হয়েছে।” “সাংবাদিকদের বাড়িতে ও অফিসেও একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে কতটা নির্লজ্জভাবে ক্ষমতা ব্যবহার করা হচ্ছে এবং আইনগুলিকে লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জনগণকে এমন একটি লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য করার জন্য যা সরকার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।” তিনি বলেছেন, “বর্তমান সরকারের অধীনে কাশ্মীরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।”

কাশ্মীর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এবং কাশ্মীর চেম্বার অফ কমার্সের অনুসরণে প্রেসক্লাব হল সর্বশেষ স্বাধীন সামাজিক গোষ্ঠী, যেখানে অগস্ট ২০১৯ সাল থেকে জোর করে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে বাধা দেওয়া হয়েছিল। শনিবারের ঘটনার পর এডিটরস গিল্ড অফ ইন্ডিয়া থেকে শুরু করে ভারতের প্রায় সবকটি প্রেসক্লাব , সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও, সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি।

আরও পড়ুন:Punjab: ভগবন্ত মানকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করছে আপ

Previous articlePunjab: ভগবন্ত মানকেই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করছে আপ
Next articleকরোনা সংক্রমণের জেরে বন্ধ করে দেওয়া হলো খড়গপুর আইআইটি ক্যাম্পাস