হাইকোর্টে বিক্ষোভের পর কল্যাণের বিরুদ্ধে আদালতকে চিঠি ১৫৭ আইনজীবীর, বিতর্কে নেই তৃণমূল

রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সময় প্রকাশ্যে অসাংবিধানিক ভাষার প্রয়োগ করেছেন

বর্ষীয়ান আইনজীবী তথা শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন কলকাতা হাইকোর্ট চত্বরে। এবং এই বিক্ষোভ দেখালেন কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একটা বড় অংশ। যাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই আবার তৃণমূলপন্থী আইনজীবী বলেই পরিচিত। বিক্ষোভকারী আইনজীবীদের মধ্যে ছিলেন কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য এবং কার্যকরী কমিটির নির্বাচিত প্রতিনিধি। তাঁরা সকলেই কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, সিন্ডিকেট, ক্ষমতার অপব্যবহার, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সহ একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ করেন। একাধিক মহিলা আইনজীবীও কল্যাণ বন্দোপাধ্যায় ও তাঁর বৃত্তে থাকা আইনজীবীদের বিরুদ্ধে দুর্ব্যবহারেরও অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, আরও অভিযোগ, ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর সর্বক্ষেত্রে তৃণমূলের শাখা সংগঠনগুলি বিস্তার লাভ করলেও, শুধুমাত্র কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য কলকাতা হাইকোর্টে সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি তৃণমূলের আইনজীবী সেল। এবং রাজ্য সরকারের পক্ষে মামলা লড়েও একের পর এক ব্যর্থতাই সঙ্গী হয়েছে কল্যাণের। এদিনের এই ঘটনার পরই আসরে নেমে পড়ে বিরোধীরা। বিজেপির অমিত মালব্য হোক কিংবা বাম-কংগ্রেস শিবির কটাক্ষ করে বলতে থাকে, হাইকোর্টের এদিনের ঘটনা তৃণমূলের অন্দরে চলতি বিতর্কের জের। যদিও বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল শিবির থেকে জানানো হয়, এই ঘটনার সঙ্গে দল কিংবা শীর্ষ নেতৃত্বের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একান্তই আইনজীবীদের বিষয়। আদালতে আইনজীবী মহলের আভ্যন্তরীণ সমীকরণের প্রতিফলন।

তবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেই থেমে থাকেননি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীরা। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের ১৫৭ জন আইনজীবী সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ এনে সুপ্রিম কোর্ট ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছেন। যেখানে তাঁরা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানিয়েছেন।

আইনজীবীরা তাঁদের এই চিঠিতে শ্রীরামপুরের সাংসদকে নিয়ে অভিযোগ করে বলেছেন, দিনের পর দিন আদালতে সহ আইনজীবিদের প্রতি কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্ব্যবহার ও অসাংবিধানিক কথাবার্তায় সকলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। এমনকি, আদালত কক্ষে মামলা চলাকালীন বিচারপতিদের সঙ্গেও অত্যন্ত খারাপ ব্যবহারও করেন কল্যানবাবু। যা আইনজীবীদের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে। রাজনৈতিক নেতা ও সাংসদ হওয়ার সুবাদে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করতে সিদ্ধহস্ত তিনি। ২০১১ সালের পর থেকে সমস্ত সরকারি প্যানেলে নিজের ঘনিষ্ঠ আইনজীবীদের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। এক্ষেত্রে অনেক যোগ্য আইনজীবী বঞ্চিত হয়েছে। গোটা বিষয়টি কুক্ষিগত করে রেখেছেন তিনি।

হাইকোর্টের মহিলা আইনজীবীরা কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আচরণে দিনের পর দিন অসম্মানিত বোধ করেছেন। তাঁদের প্রতি দুর্ব্যবহারে সীমা ছাড়িয়েছে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুত্রকে কলকাতা হাইকোর্টে প্রাইভেট চেম্বার করে দিয়েছেন। অথচ অনেক যোগ্য আইনজীবীরা সেই সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

হাইকোর্টের পুরুষ ও মহিলা মিলিয়ে ১৫৭ জন আইনজীবী চিঠিতে আরও অভিযোগ তুলে লিখেছেন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় যে সকল আইনজীরা ওঠেন-বসেন, তারা অনেকেই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। এবং গত কয়েক বছরে কল্যাণ ঘনিষ্ঠ আইনজীবীরা আর্থিকভাবে ফুলে-ফেঁপে উঠেছেন। যা আইনজীবিদের ভাবমূর্তির জন্য ভালো দিক নয়।

তবে আইনজীবীদের পক্ষ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ একটি বিষয় এই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে তাঁরা লিখেছেন, রাজ্যের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে আসীন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনেক সময় প্রকাশ্যে অসাংবিধানিক ভাষার প্রয়োগ করেছেন, একজন বর্ষীয়ান আইনজীবী হিসাবে যা কার্যত সংবিধান ও আইনকে অপমান করার সামিল।

এছাড়াও সমাজে আইনজীবিদের প্রতি সাধারণ মানুষের সম্মান, শ্রদ্ধা, ভরসা, বিশ্বাস, গ্রহণযোগ্যতার জায়গা নষ্ট করেছেন সাংসদ তথা বর্ষীয়ান আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই অবিলম্বে কল্যান বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন করছেন কলকাতা হাইকোর্টের একঝাঁক আইনজীবী।

আরও পড়ুন- TMC Goa: শিয়রে নির্বাচন, দ্বীপরাজ্যে রাজ্য-যুব ও মহিলা কমিটির ঘোষণা তৃণমূলের

আরও পড়ুন- বারবার কেন দিল্লিতে ডেকে জেরা, ভর্ৎসনার মুখে ইডি

 

Previous articleTMC Goa: শিয়রে নির্বাচন, দ্বীপরাজ্যে রাজ্য-যুব ও মহিলা কমিটির ঘোষণা তৃণমূলের
Next articleSc EastBengal: নতুন কোচের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া লাল-হলুদ ব্রিগেড