এককালের দাপুটে নেতা এখন পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে হুইলচেয়ারে বন্দি

এক সময়ের দাপুটে সিপিএম নেতা তথা ২০ বছরের টানা বিধায়ক ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন বনমন্ত্রী বনমালী রায়ের সঙ্গী এখন হুইল চেয়ার । একটা সময় দাপিয়ে রাজনীতি করলেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে  হুইলচেয়ারই  তাঁর নিত্যসঙ্গী। কথা বলতে গেলে আটকে যায় ।  চেনা মানুষকে দেখলেও চিনতে পারেন না।  তবুও হুইলচেয়ারে বসেও স্বপ্ন দেখেন একদিন ফের বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসবে।

হুইল চেয়ারে শুয়ে আমতা আমতা করে বললেন, “মানুষ একদিন বুঝবে, ক্ষমতায় ফের বামফ্রন্ট আসবে।  আবার কৃষক সহ মেহনতি মানুষের কাজ হবে।

” তবে বনমালী রায়ের পরিবারের আক্ষেপ, এক টানা দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বিধায়ক, এবং তপশিলি উপজাতি কল্যাণ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ও বন পরিবেশ-পর্যটন দফতরের মন্ত্রী থাকার পরেও বর্তমানে তাঁর দুর্দিনে দলের কেউ খোজ খবর রাখেন না । এমনকি বনমালী রায়ের চিকিৎসার জন্যও এগিয়ে আসেননি দলের নেতা কর্মীরা।

এই নিয়ে বনমালী রায়ের বউমা শ্রাবণী রায় আক্ষেপের সুরে বললেন, “রাস্তায় দেখা হলে নেতারা শুধু মুখেই শশুরমহাশয়ের খোঁজ নেন।” কিন্তু এমন দুর্দিনে চিকিৎসার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সংকটে কেউ সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি।  চোখের জল ছলছল করতে করতে তিনি বলেন, “বামফ্রন্টের তো সেই দিন নেই, আর কী বলব”।

বনমালী রায়ের বাড়িতে আসা যাওয়া ছিল রাজ্য থেকে জেলার নেতৃত্বের। বাড়ির বৈঠকখানায় চলত দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সহ রাজনৈতিক আলোচনা। আজ সে সব অতীত। অভিযোগ, এক সময়ে তিনি যে সমস্ত দলীয় কর্মীদের রাত বিরেতে সাহায্য করেছেন তারাই আজ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। কোনো সূত্রে, বনমালী রায়ের অসুস্থতার কথা জানতে পেরে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বনমালী রায়ের বাড়িতে উপস্থিত হয়েছেন সিমিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। সঙ্গে এক ঝাঁক দলের নেতা কর্মী। এই টুকুই যা।

জানা গেছে, বনমালী রায় শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে ২৫ দিন ভর্তি ছিলেন। সে সময়েও সেভাবে দলীয় কর্মীরা কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি । এছাড়াও বনমালী রায়ের একমাত্র ছেলে দীপক রায়, শ্বাসকষ্ট জনিত কারণে শিলিগুড়ির একটি বেসরকারি নার্সিং হোমে এক সপ্তাহ ভর্তি থাকার পর বর্তমানে তিনি ডাক্তারের পরামর্শে বাড়িতে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থায় শয্যাশায়ী প্রাক্তন মন্ত্রী এবং তাঁর ছেলেকে দেখাশোনার দায়িত্ব একমাত্র তাঁর বউমা ও  নাতনির।

 

জানা গেছে বনমালী রায় পেশায় একজন কৃষক এবং গাদং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। ধূপগুড়িতে সিপিএম পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ চন্দ্র দে-র ছোট ভাই সুবোধ চন্দ্র দে-ও ঐ স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। তার সংস্পর্শেই তার দাদার সাথে পরিচয় হয়ে সিপিএম পার্টির প্রতি আকৃষ্ট হয় বনমালী রায়। প্রথম দিকে তিনি বামপন্থী কৃষক সংগঠন কৃষক সভার সদস্য ছিলেন। এর পর ১৯৬৯ সালে সিপিএম পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে ধূপগুড়ির কংগ্রেসের দাপুটে নেতা জগদানন্দ রায় তথা ধূপগুড়ির প্রাক্তন বিধায়ক মিতালী রায়ের বাবাকে হারিয়ে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন। জেতার পর তপশিলি উপজাতি কল্যান দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী হন। ১৯৮৭ এর পর তাকে বন ও পরিবেশ দফতরের রাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ দেওয়া হয় এবং সে সময় বন ও পরিবেশ দফতরের পূর্ণমন্ত্রী ছিলেন ডক্টর অম্বরীশ মুখোপাধ্যায়।

কিন্তু কয়েক বছর পর ডক্টর অমল মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পর  তাঁকেই মন্ত্রী করা হয় । পরবর্তীতে সিপিএমের বিধায়কের টিকিট লক্ষীকান্ত রায়কে দেওয়া হয় এবং তাঁকে ১৯৯৮ সালে জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি করা হয় । ২০০৩ সাল‌ পর্যন্ত তিনি ঐ দায়িত্বেই ছিলেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন একসময় ধূপগুড়ির  অনেক নেতা-কর্মী তাঁর সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেন। কিন্তু এখন আর তাদের কাউকেই দেখা যায় না। যদিও এই মুহূর্তে ভোট প্রচারে জেলায় রাজ্যের মন্ত্রী অরুপ বিশ্বাস রয়েছেন অরূপ বাবু বনমালী রায়ের স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে পেরে কলকাতায় পিজি হাসপাতালে নিয়ে এসে উপযুক্ত চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন  ধূপগুড়ি পৌরসভার উপপৌরপিতা রাজেশ কুমার সিং।

 

 

Previous articleইউক্রেন – রাশিয়ার যুদ্ধে মৃত ৫০ রুশ সেনা সহ ৪০ ইউক্রেন সেনা
Next articleEastBengal: ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে জমকালো অনুষ্ঠান, লাল-হলুদে উপস্থিত বসুন্ধরা গ্রূপের কর্ণধার সোবহান তানভীর