২৫ দিনে পড়ল রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ । আর এই যুদ্ধের আবহেই রাশিয়া থেকে ৩০ লক্ষ ব্যারেল অশোধিত তেল কিনল ভারত। যদিও ভারতের এই পদক্ষেপ আমেরিকাসহ ইউরোপের বাকি দেশগুলো খুব একটা ভালো চোখে দেখছে না । কিন্তু ভারতের তরফে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে পশ্চিমী দেশগুলিকে । দিল্লি জানিয়েছে যে ভারত এই ব্যাপারে মোটেও স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় । তাকে অন্য দেশের উপর নির্ভর করতে হয়। এর আগে ভারতে সবথেকে বেশি তেল সরবরাহ করতে ইরান। কিন্তু পারমাণবিক চুক্তি লঙ্ঘন করার অপরাধে আমেরিকা ইরানের ওপর তেল রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে । ফলে বেশ সমস্যায় পড়েছে ভারত। ভারতকে বিকল্প উৎসের খোঁজে করতেই হবে। তাই রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে ভারত।

আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা , ভারত এ ক্ষেত্রে কিছুটা ঘুরপথে আমেরিকাকে বার্তা দিয়েছে। কারণ আমেরিকা তেলের ব্যাপারে স্বাবলম্বী। তাকে অন্য কারোর উপরে ভরসা করতে হয় না । কিন্তু যে দেশগুলি থেকে ভারত তেল আমদানি করবে সেই দেশগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিলে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় ভারতকে। তাছাড়া এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম চড় চড়িয়ে বাড়ছে। সেক্ষেত্রে আগে থেকে যোগান না রাখলে ভারতের মতো একটি বহুল জনসংখ্যার দেশে নানাবিধ সমস্যা তৈরি হতে পারে । যোগান -সংকট দেখা দিলে দাম বেড়ে যাবে তেলের। আর তার জন্য চড়া মূল্য গুনতে হবে ভারতবাসীকেই। এজাতীয় কোনো সমস্যার সম্মুখীন যাতে না হতে হয় সেজন্যই ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনেছে । যদিও দিল্লির দাবি যে পরিমাণ তেল এদেশে প্রয়োজন , এটি সে তুলনায় কিছুই নয়। মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ। তাই এই সামান্য পরিমাণ তেল কেনা নিয়ে তাতে রাজনীতি না হয় পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে সেই অনুরোধ রাখা হয়েছে বিদেশ মন্ত্রকের তরফ থেকে।
তাছাড়া দিল্লির দাবি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই মস্কো থেকে নিয়মিতভাবে অপরিশোধিত তেল আমদানি করে চলেছে ইউরোপের একাধিক দেশ। সে ক্ষেত্রে যদি আমেরিকা কোনও নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে থাকে তাহলে ভারতের তেল কেনা নিয়ে প্রশ্ন তোলারও বিশেষ কোনো অধিকার আমেরিকার নেই । অর্থাৎ ভারত যে আর সব ব্যাপারে আমেরিকার দাদাগিরি সহ্য করতে চাইছে না এবং আমেরিকার প্রতিটি সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে নেবে না তা এই তেল কেনার মাধ্যমেই স্পষ্ট হয়ে গেল । আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ মহল মনে করছে বিশ্ব মানচিত্রে ভারত যে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে ওঠার চেষ্টা করছে, আন্তর্জাতিক মহলে নিজের স্বাধীন মত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে ভারতের এই পদক্ষেপে তা স্পষ্ট করে দিল।
