Monday, December 1, 2025

মহানন্দার মুক্তি আজ

Date:

Share post:

মহাশ্বেতাদেবীর জীবন দ্বারা অনুপ্রাণিত ছবি ‘মহানন্দা’র পরিচালক অরিন্দম শীলের স্বপ্ন সাকার হওয়ার এক যাত্রা। তাঁর অন্য অনেক ছবির মধ্যে বিশেষ। অতিমারিতে বাধা পড়লেও সে-বাধা কাটিয়ে বিধিনিষেধ সঙ্গে করে যে দুরূহ কর্মকাণ্ডের পর শ্যুটিং সম্পূর্ণ হয়েছে, আজ তা মানুষের সামনে আসতে চলেছে। ছবি ঘিরে পরিচালকের অন্যরকম প্রত্যাশা, আলাদা রকম ভাবনা। কথা বললেন প্রীতিকণা পালরায়

আরও পড়ুন:Weather Forecast: চৈত্রের দাবদাহ থেকে রেহাই, পাঁচ জেলায় বৃষ্টি

“একটাই আক্ষেপ মহাশ্বেতাদেবীর মতো মানুষকে নিয়ে যতটা চর্চা হওয়ার দরকার তা এ দেশে হয় না। একটাই প্রত্যাশা এ-ছবি দেখে বর্তমান প্রজন্ম যদি মানুষটা সম্পর্কে আগ্রহী হয়ে তাঁকে নিয়ে জানতে উদ্যোগী হয়। একটাই পাওনা, যদি ছবি দেখার পর তাদের মধ্যে কতিপয়ও মানুষটার লেখা কয়েকখানা বই পড়ে ফেলে আরও কিছুজনকে সে-বই পড়ার জন্য বলে। এ-ছবির সার্থকতা তবেই”— ‘মহানন্দা’ নিয়ে কথার শুরুতে একনিঃশ্বাসে কথাগুলো বললেন পরিচালক অরিন্দম শীল। এ-ও বললেন, “বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে মহাশ্বেতাদেবী একটা সাবজেক্ট। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের দেশে যাঁরা আদর্শ হন, তাঁদের আমরা তাকে তুলে দিতে ভালবাসি। জন্মদিন বা মৃত্যুদিনে তাক থেকে পেড়ে ফুল-বেলপাতা দিয়ে অর্চনা করি! কিন্তু সম্মান প্রদর্শন যে এভাবে হয় না, সেটা ভাবি না। মানুষগুলোর ভাবনা, কাজ— এগুলোর প্রতিফলন যদি নিজেদের জীবনে করা যেত, সম্মান প্রদর্শনের শ্রেষ্ঠ উপায় হত সেটাই। আমার দিক থেকে একটা চেষ্টা করেছি, সফল কতটা হয়েছি তা মানুষ বলবেন।”

‘মহানন্দা’কে মহাশ্বেতাদেবীর বায়োপিক বলতে ভীষণ আপত্তি অরিন্দমের। ‘মহানন্দা’ মহাশ্বেতাদেবীর আদর্শ, জীবনবোধ, সাহিত্য, সামাজিক কর্মকাণ্ডে এবং মানুষ মহাশ্বেতা এই সবকিছুর দ্বারা অনুপ্রাণিত। সামান্য কিছু কাল্পনিক ঘটনাবলি আছে। অকারণ বিতর্ক এড়াতেই এই ফিকশন মাধ্যমকে বেছে নেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া একটি মেয়ে যে মহাশ্বেতাদেবীকে নিয়ে রিসার্চ করতে চায়। সে আসে মহানন্দার কাছে। মহানন্দার সঙ্গে তার ইন্টার্যাকশন হয়। এটুকুই শুধু কাল্পনিক। “আসলে আমি এমন একটা ছবি বানাতে চাইছিলাম যার মাধ্যমে আমি তরুণ প্রজন্মকে কিছু আদর্শের কথা বলব। যে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশ যাচ্ছে তাতে জাতি হিসেবে আমরা এতটুকু এগোচ্ছি না। আমাদের সামনে তাই ঠিকঠাক আদর্শ দরকার যা আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ‘মহানন্দা’ নামকরণও করেছি যাতে নদীর মতোই এই আদর্শ প্রবাহমান হয়”— বললেন অরিন্দম। মহাশ্বেতাদেবীর ব্যক্তি জীবনের চেয়ে তাঁর কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত ঘটনাবলিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়ে ধরেছেন অরিন্দম। তবে মহাশ্বেতাদেবীর জীবনে তাঁর বাবা মণীশ ঘটকের প্রভাব, কাকা ঋত্বিক ঘটকের প্রভাব, স্বামী বিজন ভট্টাচার্যের প্রভাব, আবার শুধু মাত্র আদর্শের কারণে দাম্পত্য ভেঙে বেরিয়ে আসা, কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে তাঁর সংযোগ আবার সেই পার্টি থেকেও বেরিয়ে আসা— এ সবই ছুঁয়ে যাওয়া হয়েছে ছবিতে। এমনকী তাপসী মালিকের মৃত্যুর প্রতিবাদে গর্জে ওঠা সিঙ্গুর আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়াও বাদ পড়েনি।

“কোনও আঁতলামো না করে আমি একটা সহজ গল্প বলার চেষ্টা করেছি, যে গল্প মানুষকে অনুপ্রেরণা জাগাবে। অনেকেই হয়তো ‘হাজার চুরাশির মা’ পড়েনি, ‘অরণ্যের অধিকার’ পড়েনি, কিন্তু তারা যখন দেখবে বা জানবে একজন মানুষ জীবনভর প্রান্তিক মানুষদের জন্য লড়াই করে গেছেন, তাদের জন্য তাদের মধ্যে থেকেই অধিকার দাবি করেছেন নিশ্চিতভাবে একটা প্রভাব পড়বেই। আসলে মহাশ্বেতাদেবী একটা ভাস্ট সাবজেক্ট। মেটাফরিক্যাল ট্রিটমেন্ট-এর মাধ্যমে সেই বিস্তৃত জীবনকে যতটা সম্ভব বাঁধার চেষ্টা করেছি আমি”— জানালেন অরিন্দম। প্রায় দু-বছর রিসার্চের কাজ চলেছে। শুভেন্দু দাসমুন্সির অসাধারণ রিসার্চের পরেও স্ক্রিপ্ট লেভেলে প্রচুর কাটাছেঁড়া হয়েছে। কিন্তু তারও আগে, হঠাৎ মহাশ্বেতাদেবীর কথাই কেন ভাবলেন অরিন্দম, এ প্রশ্ন করায় জানা গেল চমকপ্রদ এক তথ্য। “সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত গার্গীর হাত দিয়ে আমার কাছে কিছু কাগজ পাঠান এবং বলে পাঠান, অরিন্দমকে বোলো, মহাশ্বেতাদিকে নিয়ে কিছু কাজ করা দরকার এবং আমার মনে হয় একমাত্র ওই পারবে এটা সম্ভব করতে। অশোকদার কেন এ-কথা মনে হল আমি জানি না কিন্তু আমি চিরকৃতজ্ঞ থাকব ওঁর এই ভাবনার জন্য। কারণ উনি না বললে আমি হয়তো মহাশ্বেতাদিকে নিয়ে ভাবতামই না। তারপর আমি আমার বন্ধু প্রডিউসার ফিরদৌসল হাসানকে বলতেই ও রাজি হয়ে যায় কারণ মহাশ্বেতাদির পরিবারের সঙ্গে ওর খুব ভাল যোগাযোগ ছিল একই অঞ্চলে থাকার সুবাদে।”
গার্গী রায়চৌধুরিকে দর্শক ফের পাবেন এক ব্যতিক্রমী চরিত্রে। অরিন্দম কোনও স্টারকে চাননি, চেয়েছিলেন এমন এক অভিনেতা যাকে ভাঙা-গড়া যায়। সন্দেহ নেই অভিনেত্রী হিসেবে গার্গী দর্শকদের মতোই যে-কোনও পরিচালকের প্রিয় পাত্রী। এ-ছাড়া আছেন দেবশঙ্কর হালদার বিজন ভট্টাচার্যের চরিত্রে। আর আছেন ইশা সাহা ও অর্ণ মুখোপাধ্যায়। বাকি নব্বইভাগ চরিত্রের অভিনেতাদের পরিচালক থিয়েটার-জগৎ থেকেই বেছেছেন। তাই পর্দায় একটা ফ্রেশ ব্যাপার থাকবে বলে তাঁর বিশ্বাস। বেশিরভাগ শ্যুটিং হয়েছে রামপুরহাটে। কিছু অংশ ঝাঁসিতে। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন বিক্রম ঘোষ। কণ্ঠ দিয়েছেন ইমন চক্রবর্তী, সাহানা বাজপেয়ী, তিমির বিশ্বাস। দুজনের কাছে ভীষণভাবে কৃতজ্ঞ অরিন্দম। একজন মেকআপ আর্টিস্ট সোমনাথ কুণ্ডু। অন্যজন প্রডিউসার ফিরদৌসল হাসান। এই সময়ে যে-অর্থ এই ছবিটির জন্য তিনি ব্যয় করেছেন তা বর্তমান সময়ে ইন্ডাস্ট্রিতে চট করে হয় না। বাকি অপেক্ষা মানুষের রায়ের জন্য।

spot_img

Related articles

বিয়ে তো হল, হানিমুন কবে? এবার উত্তর দিলেন দিলীপ ঘোষ

ঘটা করে সকলের নজর কেড়েই বিয়েটা হয়েছিল। সেই সময়ই অপকটে বলেছিলেন - বিয়ে হল। হানিমুনও (honeymoon) যথা সময়ে...

পিছোল এসআইআর-এর সময়সীমা! ‘তাড়াহুড়ো’র বিরোধীতা করে কমিশনকে আক্রমণ চন্দ্রিমা–পার্থর

এসআইআর প্রক্রিয়ার নির্ঘণ্ট নিয়ে তীব্র রাজনৈতিক চাপানৌতনের মধ্যে অবশেষে এক সপ্তাহ পিছিয়ে গেল খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ-সহ গোটা...

এসআইআর বড় বালাই! ৭০ বছর বয়সে ‘বাবা’ হলেন লালগোলার নূরাল শেখ

রাজ্যজুড়ে ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনী প্রক্রিয়া (এসআইআর) চলতেই এক অদ্ভুত ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে মুর্শিদাবাদের লালগোলা থানার দেওয়ানসরাই গ্রাম...

ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ প্রোটিয়াদের, জয়ের মধ্যেও ভারতের চিন্তা বোলিং

রাঁচিতে প্রথম একদিনের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৭ রানে জয় পেল ভারত(India vs South Africa)। ভালো ব্যাটিং করলেও...