রমজান মাসে রোজা ভাঙতে পারেন! মাথা মুড়িয়ে হিন্দু বাবার শ্রাদ্ধ আনোয়ারের 

হিন্দু বাবার মুখাগ্নি আগেই করেছিলেন আনোয়ার আলি। এবার মাথা মুড়িয়ে ঘাট কাজ ও শ্রাদ্ধ করলেন তিনি। মানুষের সেবায় রমজান মাসে রোজা ভাঙতে আপত্তি নেই আনোয়ারের।

 

বিজ্ঞান গবেষক সুজিত হালদার (Sujit Haldar) ক্যান্সারে কষ্ট পাচ্ছিলেন। স্ত্রী শিপ্রাকে নিয়ে শ্রীরামপুরের (Shrirampur) দে স্ট্রিটের একটি আবাসনে থাকতেন তিনি। একমাত্র মেয়ে চৈতালী বাগ (Chaitali Bag) থাকেন সাইপ্রাসে। করোনাকালে চিকিৎসা করানোর সময় নির্দিষ্ট গ্রুপের রক্ত না পেয়ে সমস্যার মুখে পড়েন হালদার দম্পতি। ওই সময় শ্রীরামপুর থানা এলাকার বাসিন্দা পেশায় মার্বেল মিস্ত্রি আনোয়ার আলির সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁদের। আনোয়ার রক্তের ব্যবস্থা করেন। তারপর থেকে পারিবারিক বন্ধনে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কলকাতায় সুজিতকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া নিয়ে আসা সমস্ত কিছুই আনোয়ার নিজে করেছেন। যে কোনো প্রয়োজন বা সমস্যা হলেই আনোয়ারই ভরসা হয়ে ওঠে তাদের। সেই থেকেই সুজিত আনোয়ারকে ছেলে বলে মনে করেন। শুধু তাই নয়, শিপ্রাকে বলেন, তাঁর মৃত্যুর পর যেন আনোয়ারই তার মুখাগ্নি করেন। গত ২৮ মার্চ বৃদ্ধের মৃত্যুর পর আনোয়ারকে দিয়ে মুখাগ্নি করে স্বামীর শেষ ইচ্ছা পূরণ করেন স্ত্রী। আনোয়ার বলেন, “চৈতালী আমাকে আনোয়ার ভাই বলে ডাকে।সে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে আমাকে ফোনে জানায় তার আসতে দুদিন লাগবে তাই আমি যেন বাবার শেষকৃত্য করি।” গত সোমবার ছিল সুজিত বাবুর ঘাট কাজ। শ্রীরামপুর তিন পয়সার ঘাটে ব্রাহ্মণ ডেকে ঘাট কাজ করেন আনোয়ার ও চৈতালী। হিন্দু সংস্কার মেনে মাথা মুড়িয়ে গঙ্গাস্নান করে ঘাট কাজ করেন আনোয়ার। পরদিন হয় শ্রাদ্ধানুষ্ঠান। সেখানেও সব আচার পালন করেন। রমজান মাস চলছে সারাদিন উপোস করে থাকেন এসময় আনোয়ার। ব্রাহ্মণকে বলে দেন সন্ধের আগে মুখে জলও তুলবেন না।

তবে মানুষের সেবায় রমজানে রোজা ভাঙতেও কিছু মনে করেন না আনোয়ার।

শুক্রবার, মুম্বই উড়ে যাবেন এক চার বছরের শিশুকে নিয়ে। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুটিকে টাটা ক্যান্সার রিসার্চ সেন্টরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবেন।আনোয়ার বলেন, “রোজা রাখলে কখন নামাজ পড়ব কখন রোজা ভাঙব ঠিক নেই তাই মাঝে মাঝে এমন কাজ পড়লে রোজা ভাঙি। আসলে মন্দিরে পুজো দেওয়া বা মসজিদে নামাজ পড়ার থেকে মানব দরদী হওয়া ভালো মনে করি। মানুষের পাশে থেকে কিছু ভালো কাজ যদি করতে পারি আমার জন্য কেউ যদি জীবন পায় তার থেকে বড় কি হতে পারে”।

আনোয়ারের কথা গত ২৫ বছর ধরে এই কাজ তিনি করে চলেছেন। প্রায় এক হাজার রোগীকে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতাল বাইরের রাজ্যেও নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। নিজে বিবাহ করেননি যদি এই সেবার কাজ করতে গিয়ে অশান্তি হয়।আনোয়ারের বাবা শেখ আনসার আলি ছেলের এই সেবার কাজে উৎসাহ দেন।

এই কাজ এত দৌড় ঝাঁপে কাজের ক্ষতি হয় না? আনোয়ার বলেন, মিস্ত্রিদের কাজ বুঝিয়ে দিয়ে বেরিয়ে পড়ি। টাকা-পয়সা চিরদিন থাকে না কিন্তু মানুষের ভালোবাসা থেকে যায়। ধর্ম ভুলে মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে শিখলে এত হানাহানি থাকত না।

 

 

 

 

Previous articleRohit Sharma: পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে মন্থর বোলিং-এর জন‍্য জরিমানা করা হল মুম্বই অধিনায়ককে
Next articleইমরান খানকে ‘দ্য কপিল শর্মা শো’-তে যাওয়ার পরামর্শ প্রাক্তন স্ত্রী রেহাম খানের