রাজনীতি যাঁর যাঁর ফুটবল সবার, ডায়মন্ডহারবার ফুটবল ক্লাবের আত্মপ্রকাশে বার্তা অভিষেকের

সোমনাথ বিশ্বাস

 

সম্প্রীতির বাংলায় তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলে থাকেন, “ধর্ম যাঁর যাঁর উৎসব সবার”! এবার বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে সেই একই বক্তব্য একটু অন্যভাবে শোনা গেল অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্ঠে। ডায়মন্ডহারবার ফুটবল ক্লাবের লোগো এবং জার্সির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে অভিষেক বললেন, “রাজনীতি যাঁর যাঁর ফুটবল সবার…।” ডায়মন্ড হারবারের ফুটবলপ্রেমী মানুষের উদ্দেশ্যে অভিষেকের বার্তা, এই ক্লাবে রাজনীতি চলবে না। তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস হোক কিংবা সিপিএম, যে রাজনৈতিক দলের সমর্থক বা সদস্যই হোন না কেন ক্লাবের দরজা সকলের জন্য খোলা। যে কেউ এই ক্লাবের সদস্য হতে পারবেন। যে কেউ খেলার সুযোগ পাবেন। তাই রাজনীতি যার যার ফুটবল সবার। স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, গীতা পাঠের চেয়ে ফুটবল খেলে অনেক বেশি ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা যায়। সেলুলয়েডের পর্দা হোক কিংবা প্রবাদপ্রতিম মান্না দে’র গানেও বারেবারে উঠে এসেছে বাঙালির নস্টালজিক ফুটবল। এদিন সে কথাও মনে করিয়ে দেন অভিষেক।

পয়লা বৈশাখের সকালে মহেশতলা বাটা স্টেডিয়াম মাঠে ক্লাবের আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের শুরুতেই বাংলা ফুটবলের রীতি মেনে খুঁটি পুজোয় বসেন অভিষেক। রীতিমতো কালীঘাট থেকে পুরোহিত এনে করা হয় বারপুজো। এরপর লঞ্চ করা হয় ক্লাবের অভিনব জার্সি ও লোগো। আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে পুরোপুরি কর্পোরেট কর্পোরেট মোড়া ছিল এই অনুষ্ঠান। ক্লাবের নামের সঙ্গে সুর মিলিয়ে দেওয়া হয় নতুন স্লোগান বা ট্যাগ লাইন, ”দমদার হারবার”।

তাঁর ও ডায়মন্ড হারবারবাসীর স্বপ্নের ক্লাবের শুভ সূচনা করে সাংসদ অভিষেক বন্দোপাধ্যায় বলেন, ”শুভদিনে যাত্রা শুরু করল আমাদের ক্লাব। সবার আশীর্বাদ নিয়ে পথ চলতে শুরু করল। ২০১৯ সালে ঘোষণা হয়েছিল এই ক্লাবের। ২০১৭ সাল থেকে এমপি কাপ শুরু হয়। প্ৰতিভার খোঁজ করতেই আমরা এই ক্লাব তৈরি করেছি। সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি। দল, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই সহযোগিতা করুন।”

কলকাতা লিগের প্রথম ডিভিশনে খেলতে চেয়ে আইএফএ-র কাছে আগেই আবেদন করেছিল ডায়মন্ড হারবার ক্লাব। এবার বাস্তবায়িত হচ্ছে সেই উদ্যোগ। ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতে নামবে ডায়মন্ড হারবার ক্লাব। তার আগে ৩৫ সেকেন্ডের টিজার উদ্বোধন হয়েছে। আকর্ষণীয় সেই টিজারে দেখা যাচ্ছে, ফুটবলে শট মারছেন অভিষেক। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। আজ পয়লা বৈশাখে বাটানগর ফুটবল গ্রাউন্ডে বারপুজোর আয়োজন করা হয়। এই মাঠ ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের হোম গ্রাউন্ড। এই শুভদিনে ক্লাবের নতুন জার্সির পাশাপাশি লোগোর উন্মোচন করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

ক্লাবের চিফ প্যাট্রন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। সচিব পদে রয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য। সভাপতি গৌরাঙ্গ বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের কোচ কৃষ্ণেন্দু রায়। তারা প্রত্যেকেই এদিনের অনুষ্ঠানে ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন বিধায়ক অশোক দেব, প্রাক্তন ফুটবলার তথা তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যসভার প্রাক্তন সংসদ তথা তৃণমূলের রাজ্য সাধারন সম্পাদক কুনাল ঘোষ, রাজ্যসভার সংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন, ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক পান্নালাল হালদার,প্রাক্তন ফুটবলার রহিম নবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সভাধিপতি শামিমা শেখ সহ বিশিষ্টজনেরা।

প্রথম বছরেই কলকাতা ফুটবল লিগের প্রথম ডিভিশনে খেলবে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব। লক্ষ্য আগামী দু’-এক বছরে মধ্যে প্রিমিয়ার ডিভিশন খেলা। অভিষেক জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আইএসএল খেলাও লক্ষ্য তাঁদের।

অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকা কুণাল ঘোষকে মজা করে অভিষেক বলেন, ‘‘মোহনবাগান সহ-সভাপতি হয়েছেন। এবার কিন্তু আপনার সঙ্গে খেলা হবে।’’ আসলে বাংলার ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিতে চান ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। অভিষেক বলেছেন, ‘‘এমপি কাপ করতে গিয়ে দেখেছি এখানে সুযোগ সুবিধার সমস্যা রয়েছে। এখানে খেলোয়াড়ের অভাব নেই। বাইরে থেকে লোক এসে এখান থেকে ফুটবলার নিয়ে যায়। আমরা ফুটবলারদের সব রকম সুযোগ সুবিধার দিকে খেয়াল রাখব। প্রতিভার প্রতি সুবিচার করা হবে।’’

প্রসঙ্গত, গত ১০ ডিসেম্বরে ডায়মন্ডহারবার স্টেডিয়ামে এমপি কাপড় উদ্বোধন করতে গিয়ে অভিষেক কথা দিয়েছিলেন খুব দ্রুত ডায়মন্ড হারবার থেকে একটি ক্লাব কলকাতা লিগে খেলবে। এবং তাঁর সেই প্রতিশ্রুতির চার মাসের মধ্যেই স্বপ্নপূরণ। সেদিনও তিনি বলেছিলেন, “বন্ধ থাক রাজনীতি। রাজনৈতিক বিভেদ। রাজনীতি রাজনীতির জায়গায় থাক, মাঠে হোক শুধু ফুটবল। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ফুটবলকে সামনে রেখে আসুন আমরা ভ্রাতৃত্বের, মৈত্রীর বন্ধনকে সুদৃঢ় করি। ফুটবল বাঙালির আবেগ। খেলায় কেউ জেতে কেউ হারে। যে ভাল খেলবে সে জিতবে। যে হারবে সে আগামী বছর খেলবে।” যেমন কথা, তেমন কাজ। আজ বাঙালির প্রিয় পয়লা বৈশাখে আনুষ্ঠানিকভাবে ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব নব কলেবরে আবির্ভূত হল।

 

Previous articleRanbir-Alia news: এবার কলকাতাতে বিয়ে হল রণবীর আলিয়ার
Next articleJhalda:কাউন্সিলর তপন কান্দু খুনে ‘আমাকে মিথ্যা কেসে ফাঁসানো হয়েছে’, দাবি কলেবরের