দিদিকে বালিগঞ্জের জয় উৎসর্গ, আসানসোলে কুৎসার সমুচিত জবাব দিয়েছে মানুষ: বাবুল সুপ্রিয়

আসানসোল লোকসভা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাবুল। জয়ের সংখ্যার নিরিখে কার্যত সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে প্রথমবারের জন্য আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে

উপনির্বাচন। তার উপর শহরাঞ্চল। মুসলিম সম্প্রদায়ের রমজান মাস। গরমকাল। এই ফলাফলের ওপর সরকার ভাঙা-গড়ার কোনো প্রভাব নেই। শিব মিলিয়ে হাইভোল্টেজ বালিগঞ্জ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪১ শতাংশ। তৃণমূল প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়র জয়ের ব্যবধান প্রায় ২০ হাজার।

প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বালিগঞ্জে ফের জয় ঘাসফুল প্রার্থীর। জয়ের ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কিন্তু বাবুল যে ক্লিন সুইপ করেছেন সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাসবিহারী কেন্দ্রের বিধায়ক এবং এই নির্বাচনে বাবুলের সেনাপতি তথা ক্যাপ্টেন দেবাশিস কুমার স্পষ্ট জানিয়েছেন, জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। তবে ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ তো হবেই। তবে ২০১৪ সালের পর থেকে যেভাবে বামেরা ভোট রামে গিয়েছিল, এখন তা ফেরৎ আসছে। এর বাইরে বামেদের ভালো ফল হওয়ার আর কোনও কারণ দেখছেন না দেবাশিস কুমার।

অন্যদিকে, প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় বললেন, “এই জয় দিদিকে উৎসর্গ করছি। আমি রাজনীতি থেকে সন্ন্যাস নিয়েছিলাম। দিদি আমাকে রাজনীতিতে ফিরিয়েছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। সিপিএম, বিজেপি যে ভাবে নোংরা ও কুৎসার প্রচার চালিয়েছে, একটা মিথ্যাচারের আবহ তৈরি করতে চেয়েছিল, মানুষ তার সমুচিত জবাব দিয়েছেন। আমাকে আশীর্বাদ করার জন্য মা-মাটি-মানুষকে প্রণাম জানাই।”

এরপরই কোনওদিন ভোটে না হারা বাবুলের সামনে প্রশ্ন ছিল, একুশের রাজ্য দখলের লড়াইয়ে দ্বিতীয়স্থান পাওয়া সিপিএম সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকাতেও কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে ফের লালদের দাপট। বাবুলের সোজাসাপ্টা উত্তর, ‘‘সিপিএম ও বিজেপি যে ভাবে নোংরা ও কুৎসার প্রচার চালিয়ে এলাকায় একটা মিথ্যাচারের আবহ তৈরি করতে চেয়েছিল, মানুষ তার জবাব দিয়েছেন। দিদি, অভিষেক’ভাই, সব দিক থেকে আমাকে সমস্ত রকম সাহায্য করেছেন। নিম্নমানের রাজনীতির বিরুদ্ধে আজকের মানুষের রায় দেখে আশা করি বিরোধীরা শিক্ষা নেবে।’’

তাঁর ছেড়ে দেওয়া আসানসোল লোকসভা নিয়েও প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বাবুল। জয়ের সংখ্যার নিরিখে কার্যত সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে প্রথমবারের জন্য আসানসোলে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছে। ঘাসফুল চিহ্নের প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা ৩ লক্ষেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছেন।

যা নিয়ে আসানসোলের প্রাক্তন সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলছেন, ‘‘আসানসোলের মানুষ প্রমাণ করে দিলেন, বাবুল সুপ্রিয় ওখানে কাজ করেছিল, সেই বাবুল সুপ্রিয়কেই ওঁরা জিতিয়েছিলেন। নিজের ক্ষমতায় ওখানে জিতেছিলাম। একে ভুল প্রমাণ করতে বিজেপির কুঁয়োর ব্যাঙগুলো এবং বাঙালি কাঁকড়া সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়েছিল। কিন্তু মানুষ লক্ষাধিক ভোটে শত্রুঘ্ন’জিকে জিতিয়েছেন। আসানসোলের মানুষের অভিমানটা খুব সঠিক। ওঁরা বলতেন, দলের সঙ্গে মতের মিল না হওয়ায় আপনি দল ছেড়েছেন, কিন্তু আপনি এমপি পদটা কেন ছাড়লেন? আমারও খারাপ লেগেছিল। সেই জন্য আমি মনে করি, এটা একটা পোয়েটিক জাস্টিস হল। শত্রুঘ্ন’জির সঙ্গে প্রায়ই কথা হয়। জমাটি মানুষ। শিরদাঁড়া সোজা মানুষেরাই বিজেপির বিরুদ্ধে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারে। উনি বার বার বলেন, তুমি হাতের তালুর মতো আসানসোলকে চেনো। আগামী দিনে আমরা দু’জনে মিলে দিদির নেতৃত্বে আসানসোলের সব কাজ করব। শত্রুঘ্ন’জির সঙ্গে মিলিত ভাবে লোকসভা ও বিধানসভায় অত্যন্ত ভাল কাজ করব।’’

আরও পড়ুন- চব্বিশের ভোটে খেলা ঘোরাবেন জানদার, শানদার, দমদার নেত্রী মমতাই: জয়ের পর শত্রুঘ্ন

Previous articleচব্বিশের ভোটে খেলা ঘোরাবেন জানদার, শানদার, দমদার নেত্রী মমতাই: জয়ের পর শত্রুঘ্ন
Next articleবালিগঞ্জে নৈতিক জয় দাবি বামেদের, ভোটারদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রবিবার মিছিল করবে সিপিএম