প্রাণহানির আশঙ্কা! দলের নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বিজেপি নেত্রীর পদত্যাগ

"আমার কোনোরূপ ক্ষতি বা প্রাণহানির ক্ষেত্রে আইনত দায় থাকবে জেলা সভানেত্রী সংঘমিত্রা চৌধুরী সহ বিজেপিতে তৃণমূলের অন্যতম সহযোদ্ধা শ্রী তুষার কান্তি ঘোষ মহাশয় ও তাঁদের অন্যান্য সঙ্গীরা যাদের নাম সযত্নে আমার লকারে গচ্ছিত থাকলো"

এবার রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলা দক্ষিণ কলকাতাতেই গেরুয়া শিবিরের অন্তর্কলহ প্রকাশ্যে চলে এলো। জেলা সভানেত্রী সংঘমিত্রা চৌধুরী সহ দক্ষিণ কলকাতার বেশকিছু নেতা-নেত্রীর বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক পদ থেকে পদত্যাগ করলেন তমসা চট্টোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: মালদায় বোমা ফেটে বিস্ফোরণে আহত ৫ শিশু

তাঁর পদত্যাগপত্রে জেলার দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে লম্বা চিঠিতে ভুরি ভুরি অভিযোগ এনে তমসা লিখেছেন, “বোলতার চাকে ঢিল মারায় আগামীতে আমার প্রাণ সংশয়ের আসংখ্যা উপেক্ষা করার নয়। তাই আমার কোনোরূপ ক্ষতি বা প্রাণহানির ক্ষেত্রে আইনত দায় থাকবে জেলা সভানেত্রী সংঘমিত্রা চৌধুরী সহ বিজেপিতে তৃণমূলের অন্যতম সহযোদ্ধা শ্রী তুষার কান্তি ঘোষ মহাশয় ও তাঁদের অন্যান্য সঙ্গীরা যাদের নাম সযত্নে আমার লকারে গচ্ছিত থাকলো।”

পদত্যাগপত্রে তমসা আরও বিস্ফোরক অভিযোগ করেছেন, দলীয় সংবিধানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কাজের থেকে কাছের মানুষকে প্রাধান্য দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

একনজরে তমসা চট্টোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক পদত্যাগ পত্র

মাননীয়া সংঘমিত্রা চৌধুরী মহাশয়া সমীপেষু,
জেলা সভানেত্রী দক্ষিণ কলকাতা (ভারতীয় জনতা পার্টি )

বিষয়: সভানেত্রী’র সংগঠন পরিপন্থী কার্যকলাপের প্রতিবাদে পদত্যাগ পত্র।

মহাশয়/মহাশয়া,

আমি তমসা চ্যাটার্জী, বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির সম্পাদিকার দায়িত্ব পালন করছি এবং এই পত্রের দ্বারা আমি আমার জেলা সম্পাদিকার পদ থেকে অব্যাহতির প্রার্থনা জানাতে বাধ্য হচ্ছি।

সাংগঠনিক ভাবে বঙ্গবিজেপির বঙ্গজয়ের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণের ভরকেন্দ্র কলকাতা। দক্ষিণ কলকাতা জেলা বিজেপির একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী হিসেবে দলীয় রীতি, সংবিধান মেনে দলকে তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া আমার প্রধান লক্ষ্য আর সেই কাজে সভানেত্রীর নাম নিয়ে আমায় (‘আমাদের’ শব্দটি ব্যক্তিগত পদত্যাগ পত্রে এড়িয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় বলে এড়িয়ে গেলাম ) কোনো এক অজ্ঞাত কারণে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বিগত দিনে আরো ৩জন জেলা সভাপতির নেতৃত্বে আমি দক্ষিণ কলকাতা জেলায় একজন দায়িত্বপূর্ণ কর্যকর্তা /পদাধিকারী রূপে আমার বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করেছি, দলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার যথাযোগ্য সম্মান আমাকে বঙ্গ বিজেপি দিয়েছে বলে আমি মনে করি। তাই শুধুমাত্র পদের লালসায় দলের পরিপন্থী কাজ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। দক্ষিণ কলকাতা জেলায় একজন মহিলা সভানেত্রীর আগমন আমাকে যতটা উদ্বুদ্ধ করেছিল আজ আমি একজন দলীয় কর্মী রূপে ততটাই হতাশ। দুঃখের সঙ্গে জানাতে বাধ্য হচ্ছি বর্তমান জেলা গঠন হওয়ার পর থেকে দলীয় সংবিধানকে একপ্রকার বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কাজের ওপর কাছের মানুষকে প্রাধান্য দেওয়ার একটা উন্মাদ প্রচেষ্টা চলছে। আমি একজন ‘গবেষণা’র ছাত্রী’ রাজনীতি আমার কাছে মানুষের সেবার মাধ্যম, দলটা আমার অনুপ্রেরণা। দলের প্রতি আমার দায়, দায়িত্ব, দায়বদ্ধতা’র ঊর্ধ্বে , নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে ‘বিজেপি’ অর্থ উপার্জনের হতে পারেনা। সম্পূর্ণ জেলা কমিটি বারংবার অভিযোগ জানানোর পরেও একই ঘটনা জেলায় অব্যাহত।

এই পত্রের মাধ্যমে দক্ষিণ কলকাতা জেলার কিছু ঘটনা যা একজন দলীয় কর্মী হিসেবে আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছে তা নিম্নলিখিত রূপে জানানো আমার কর্তব্য বলে আমি মনে করছি এবং আমি মনে করি এই ঘটনার পুরাবৃত্তি দলের পরিপন্থী ভূমিকা নেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।

•এই জেলা গঠিত হওয়ার পর থেকে কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দক্ষিণ কলকাতা জেলা সেইভাবে পথে নামেনি, নামতে চায়নি এবং বলাবাহুল্য যারা নামতে চেয়েছিল তাঁদের আন্দোলনে পথে নামতে দেওয়া হয়নি। বেহালায় গুলি কান্ড থেকে শুরু করে বগুটুই কান্ড অন্যান্য জেলা প্রতিবাদের ঝড় তুললেও মুখ্যমন্ত্রীর বাসস্থান দক্ষিণ কলকাতায়, জেলা বিজেপির আন্দোলনে অনীহা তৃণমূলকে প্রকাশ্যে অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছে, এতে যেমন হতাশ হচ্ছে নিচু তলার কর্মীরা তেমনি আঙ্গুল উঠছে জেলা কমিটির বিশ্বাসযোগ্যতায়। জেলা সম্পাদিকা রূপে যার দায় আমিও এড়িয়ে যেতে পারিনা।

•জেলা গঠনের পরথেকে এজেন্ডা বিহীন বহু বৈঠক হলেও, আজ পর্যন্ত আমরা প্রাক্তন জেলা কমিটি, দায়িত্বে থাকা প্রাক্তন মোর্চা কমিটি, মন্ডল কমিটি নিয়ে একদিনও বসিনি বা জেলা সভানেত্রী বসতে চাননি। পরিবর্তে তিনি সেক্রেটারিয়েট বডির সাথে কোনোরকম আলোচনা ছাড়াই তাঁর পছন্দের মোর্চা সভাপতি অলিখিত ভাবে ঘোষণা করে দিয়েছেন। যার প্রতিফলন মহিলা মোর্চা কিংবা আসন্ন সময় যুব মোর্চার প্রাক্তন সহসভাপতি অঙ্কিত দেবের ঔদ্ধত্বে প্রকাশ পায়।

•কাজের মান বিচারের পরিবর্তে এমন কিছু মানুষকে সাংগঠনিক দায়িত্ব দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে যাদের উপর বিভিন্ন সময় দল বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয় এক দ্বিতীয় বর্ষ শিক্ষিত স্বয়ংসেবক, বিজেপির বহু পুরানো কর্যকর্তার গায়ে হাত ওঠানো অঙ্কিত দেব কে যুব মোর্চার সভাপতি ঘোষণা করার লক্ষে প্রাক্তন যুব কমিটিকে একপ্রকার নিষ্ক্রিয় রাখা হয়েছে। মেটিয়াব্রুজ নির্বাচনে যুবর বৈঠকে প্রাক্তন বহু কর্যকর্তা কে খবর দেওয়া হয়নি শুধুমাত্র অঙ্কিত দেব কে বিশেষ সুবিধা পাইয়ে দিতে।

•দলীয় বৈঠক, জেলা কার্যালয়কে মোচ্ছবের মঞ্চে পরিণত করা হচ্ছে সভানেত্রীর একনায়কতন্ত্র মনোভাব বজায় রাখার লক্ষে। জেলা কমিটির সদস্যদের পদ অনুযায়ী জেলা নেত্রী টাকা তুলছেন, কেও দিতে দেরি করলে তাকে ফোন করে বলা হচ্ছে ‘বিল দিচ্ছি বাইরে থেকে টাকা তুলে দাও’ আর সেই টাকা দিয়ে জেলা অফিসে এগরোল, আর সিঙ্গারা উৎসব চলছে যেখানে সভানেত্রী ছাড়াও ওনার মেয়ে উপস্থিত থাকছে। শুধু এমনি সময় নয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে পদাধিকারী না হওয়া সত্ত্বেও সভানেত্রীর কন্যা উপস্থিত থাকছেন। প্রতিবাদ করলে শুনতে হচ্ছে (ধমকে দাও, চমকে দাও, মার খাইয়ে দাও) অসংবিধানিক কথাবার্তা যা বিজেপির মত দলের আদর্শবহির্ভূত কাজ বলে আমি মনে করি।

•২রা মে’র পর থেকে জেলার বহু কর্যকর্তা ঘরছাড়া, তাঁদের আক্রান্ত হতে হয়েছে এর পর ও নিচুতলার কর্মীরা দমে যায়নি, উচ্চ পদস্থ বহু কর্যকর্তা, নেতা দল ত্যাগ করলেও নিচু তলার কর্মীরা আজও মাঠে নেবে লড়াই করতে চায়। সেই নিচু তলার কর্মীদের বারংবার সভানেত্রীর দ্বারা অপমানিত হতে হচ্ছে, তাঁদের বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের নিষ্ঠাকে পদদলিত করে তাঁদের অসম্মান করা হচ্ছে যা আমি একজন কর্মী হিসেবে মানতে নারাজ। রাসবিহারী মন্ডল-১ এর সভাপতি নিয়ে আলোচনার সময় মুন্না সোলকারের নাম ওঠায় সেভানেত্রী বলেন “তুষার কান্তি ঘোষের সঙ্গে ওর কিছু সমস্যা তাই ওকে করা যাবে না ” তুষার কান্তি ঘোষ হলো সেই মানুষ যিনি রাসবিহারী বিধানসভার প্রার্থী না হতে পারায় তৃণমূলের সাথে মিলে দলকে হারানোর প্রধান কান্ডারি যে অভিযোগ আমার নয় স্বয়ং প্রার্থী ডঃ সুব্রত সাহা ও তাঁর টিমের। তিনি এখানেই থেমে থাকেননি পৌরসভা নির্বাচনে যিনি তৃণমূলের প্রবীর মুখার্জী কে বিশেষ সুবিধা করে দিতে গৌরাঙ্গ চ্যাটার্জীকে ওই ওয়ার্ড থেকে টিকিট করে দেন, যার স্ত্রী তৃণমূলের মঞ্চে বলেছিলেন একটাও ভোট বিজেপি কে নয়। আমার ওয়ার্ড- ৮৪ এ যিনি অনবরত সমস্যা তৈরী করে গেছেন। অঞ্চলের তৃণমূলের চিহ্নিত গুন্ডা কুমার সাহা যিনি ওনার বাল্যকালের বন্ধু বটে তাঁর বিষয় আমার তরফ থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মহাশয়কে বলায় যিনি আমার ওয়ার্ড অফিসে ঝামেলা করান লোকাল কিছু লোকের মাধ্যমে। নির্বাচনের দিন বরংবার ‘বুথ যামিং’ ‘বুথ দখলের’ অভিযোগ জানানোর পরেও উনি আমাকে কমিশনকে জানাতে বাধা দেন। আজ যিনি রাজ্য মিডিয়ার ইনচার্জ।

•বালিগঞ্জ উপনির্বাচন যা বিজেপির জন্য সন্মান ধরে রাখার লড়াই ছিল সেখানে সভানেত্রীর ভূমিকা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন করেছে আমাকে। নির্বাচনে সম্পূর্ণ জেলাকে কাজ করতে না দেওয়া, একটা নির্বাচনে মাত্র ৪টি স্ট্রিট কর্নার সর্বোপরি নির্বাচনের কয়েকদিন আগে হটাৎ সভানেত্রীর নির্বাচনী হোয়াটস্যাপ গ্ৰুপ ত্যাগ করায় যে বার্তা কর্মীদের কাছে পৌছায় তা সঠিক নয়।

সমস্যার তালিকা দীর্ঘ সেটাকে দীর্ঘায়িত না করে আমি আমার পত্রের ইতি টানছি। উপরিউক্ত সমস্ত বিন্দু আমি আমার সজ্ঞানে ও পুণ্য দায়িত্বের সঙ্গে লিখলাম এবং এর দায়ভার গ্রহণ করলাম।জেলার প্রতি আমার অনেক শুভকামনা থাকলো। কর্মজীবন ও রাজনৈতিক জীবনে আমার গায়ে দাগ লাগাতে আমি অপ্রস্তুত। তাই আমার এই পদত্যাগ পত্র গ্রহণ করলে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

বিঃদ্রঃ : এই পত্রের মাধ্যমে বোলতার চাকে ঢিল মারায় আগামীতে আমার প্রাণ সংশয়ের আসংখ্যা উপেক্ষা করার নয়। তাই আমার কোনোরূপ ক্ষতি বা প্রাণহানির ক্ষেত্রে আইনত দায় থাকবে জেলা সভানেত্রী সংঘমিত্রা চৌধুরী সহ বিজেপিতে তৃণমূলের অন্যতম সহযোদ্ধা শ্রী তুষার কান্তি ঘোষ মহাশয় ও তাঁদের অন্যান্য সঙ্গীরা যাদের নাম সযত্নে আমার লকারে গচ্ছিত থাকলো।

ধন্যবাদান্তে,
তমসা চ্যাটার্জী
সম্পাদিকা বিজেপি (দঃ কঃ),
মিডিয়া প্যানেলিস্ট (বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ )
৮৫৮২৯৬০৯৬৫

Forwarded to:
ডঃ সুকান্ত মজুমদার, সাংসদ, রাজ্য সভাপতি বিজেপি (পঃবঃ)
শ্রী অমিতাভ চক্রবর্তী, সাধারণ সম্পাদক সংগঠন বিজেপি (পঃবঃ)