Wednesday, December 24, 2025

শুধু স্টার নন, বড় মনের মানুষ ছিলেন আমার ‘মাস্টারমশাই’

Date:

Share post:

জয়িতা মৌলিক: তাঁর কাছে যখন আবৃত্তি শিখতে যাই, তখন কোনও ধারনাই ছিল না বাচিকশিল্পী হিসেবে পার্থ ঘোষ (Partha Ghosh) কোন মাপের মানুষ। তখন তিনি নক্ষত্র, আর আমার বয়স সাড়ে তিন। সেই সময় নিজে পড়ে কবিতা মুখস্থ করতে পারতাম না। মাস্টারমশাই ক্লাসে পড়ে শুনিয়ে দিতেন, বাড়িতে মা।সেইভাবেই ক্লাসে পিতৃস্নেহ আগলে রেখেছিলেন। প্রথম বড় স্টেজ পারফরম্যান্স করেছিলাম তাঁর সঙ্গেই। অসম্ভব দক্ষতা ছিল স্বরের উপর। একই সঙ্গে নীচের ‘ধা’ থেকে উপরের ‘ধা’ পর্যন্ত গলা চলত তাঁর। সরগম দিয়ে বললাম এই কারণেই, যে মাস্টারমশাইও মনে করতেন সরগম একজন বাচিকশিল্পী কণ্ঠকে তৈরি করে দেয়।

জানি আবৃত্তির শিক্ষক বা গুরুকে মাস্টারমশাই বলাটা একটু অদ্ভুত। কিন্তু আমি তাই বলতাম, তাই শেখানো হয়েছিল। বয়স বেড়েছে অনেক। কিন্তু কোনও দিনই তিনি ‘পার্থদা’ নন, আমার কাছে মাস্টারমশাই। কঠিন অসুখে পড়লেন আমার মা। চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে হবে ভেল্লোর। বাড়িতে ছুটে এলেন মাস্টারমশাই। দেখা করলেন। বাবাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা বললেন, “কোনও দরকার হলে বলুন, আমি প্রস্তুত হয়েই এসেছি”। সেদিন আমার বাবার আর্থিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু ওনার এই পরোপকারের ইচ্ছেটা মুগ্ধ করেছিল আমাদের পুরো পরিবারকে। বহুদিন যোগাযোগ ছিল তাঁর সঙ্গে। নিয়মিত ক্লাসে হয়তো আর যাওয়া হয়নি। কাজের চাপে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু তাও যেখানে দেখেছেন ঠিক চিনতে পেরেছেন। আমি বলে নয়, যেকোনো ছাত্রছাত্রীকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন তিনি। এক একটা ক্লাসে প্রত্যেককে আলাদা করে শেখাতেন। ভুল ধরিয়ে দিতেন। সবচেয়ে বেশি জোর দেন উচ্চারণ আর কবিতা মুখস্থ করার উপর। কারণ তিনি বলতেন, দেখে কবিতা পাঠ হয়, আবৃত্তি হয় না। কত বড় মাপের বাচিকশিল্পী ছিলেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না সেই সময় পার্থ ঘোষ গৌরি ঘোষ ছিলেন স্টার। শুধু তাঁদের নামেই হল ভর্তি হয়ে যেত।

বাচিকশিল্পীই নন, ছিলেন বেতার শিল্পী। গল্প দাদুর আসর তাঁর সবচেয়ে জনপ্রিয় রেডিও শো। “ছোট্ট বন্ধুরা, কেমন আছ?”- তাঁর এই দুটো শব্দ শোনার জন্য রেডিও-তে কান পাততো ছোটরা, সঙ্গে বড়রাও। আর রেডিওর আর একপাশে বসে আমার মনে হত-, এ আমার মাস্টারমশাইয়ের কণ্ঠস্বর। গৌরী ঘোষের সঙ্গে ‘কর্ণ কুন্তী সংবাদ’- এর কর্ণ যেমন তাঁর বাচনভঙ্গীতে জীবন্ত হয়ে উঠত, একইভাবে জুটি বেঁধে বলতেন ‘প্রেম’। “আমি বিদ্রোহী রণক্লান্ত/ আমি সেইদিন হব শান্ত”- অবলীলায় বলে যেতেন পার্থ ঘোষ। ইদানিং অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গত অগাস্টে স্ত্রী গৌরী ঘোষ চলে যাওয়ার পরে শূন্যতা আরও বেশি করে গ্রাস করে। 31 ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন পালন হয়। বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। কালের নিয়মে সবাইকে চলে যেতে হবে। তবু কিছু মানুষের চলে যাওয়া ব্যক্তিজীবনেও বড় দাগ রেখে যায়।

 

spot_img

Related articles

উৎসবেও অব্যাহত উন্নয়ন: বুধে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী

বছর শেষে উৎসবে মাতোয়ারা গোটা বাংলা। অন্যদিকে বিধানসভা নির্বাচন আসন্ন। এই পরিস্থিতিতে কোনও ভাবেই উৎসবের আনন্দে থমকে যেতে...

জনজাতি এলাকায় বেআইনি দখলদারি, উচ্ছেদের দাবি তুলতেই অসম পুলিশের গুলি, মৃত ২

বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে উপজাতি বা জনজাতির মানুষের অধিকার যে একেবারেই রক্ষিত হয় না তার প্রমাণ আগেও মিলেছে। ফের...

তাম্রলিপ্ত পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন অবৈধ, পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ হাইকোর্টের

তাম্রলিপ্ত পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচন নিয়ে বড়সড় পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের। চেয়ারম্যান চঞ্চল কুমার খাঁড়ার নির্বাচন পদ্ধতিকে অবৈধ ঘোষণা করল কলকাতা...

ফের রক্তাক্ত কোচবিহার: দিনহাটায় গুলিবিদ্ধ তৃণমূল নেতা

ফের দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্য কোচবিহারে। দিনহাটার (Dinhata) বাড়ি থেকে বেরোতেই গুলি চালানো হয় তৃণমূল নেতা মিঠুন রাজভরকে লক্ষ্য করে।...