Wednesday, December 3, 2025

কুড়মালি ভাষায় বিয়ের কার্ড ! চমক দিলেন কবি অভিমন্যু

Date:

Share post:

আর কয়েকদিন পর তাঁর নতুন জীবন। প্রিয় সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে শুভ লগনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন দুজন – অভিমন্যু মাহাতো এবং অপর্ণা মাহাতো (Abhimanyu Mahato & Aparna mahato)। তাঁদের বিয়ের কার্ডে অভিনবত্বের ছোঁওয়া। নিজের ভাষাকে ভালবেসে বিয়ের কার্ড কুড়মালি ভাষায় (Kurmali Language) লিখে আজ আলোচনার কেন্দ্রে অভিমন্যু মাহাতো (Abhimanyu Mahato)।

পুরুলিয়ার (Purulia)বাসিন্দা, কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়(Kolkata)। সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ সেই স্কুল কলেজ থেকেই। ইতিমধ্যেই বাংলায় কবিতা লিখে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন। প্রতিদিনের কাজের ব্যস্ততা সামলে কলম নিয়ে সাহিত্য চর্চায় এতটুকু গাফিলতি নেই তাঁর। ভাষাকে ভালবাসেন, তাই মাতৃভাষাকে সবার সামনে তুলে ধরতে চান। আদি জনজাতির ভাষা ‘ কুড়মালি’ কে এবার নিজের নব জীবনের অঙ্গীকারের সাক্ষী করতে চেয়ে অভিনব কান্ড ঘটিয়েছেন। নিজের বিয়ের কার্ডে বাংলা হরফে ব্যবহার করেছেন কুড়মালি ভাষা, আর তাতেই হোঁচট খাচ্ছেন কার্ড প্রাপকরা। বিয়ের কার্ডে যে লেখা ‘হুবেকবিহা’, এর অর্থ হল শুভ বিবাহ।

কুড়মালি ভাষা আদি জন জাতির ভাষা। যে ভাষাকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Government of West Bengal)। এই ভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ছত্তিশগড়, বিহার-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রচলিত এই কুড়মালি ভাষা। সারা ভারতে আদি এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি । কুড়মি জনজাতিদের মাতৃভাষা কুড়মালি। বাংলাদেশেও কুড়মালি ভাষাভাষীরা রয়েছেন। যদিও ভারত সরকার এই ভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি এখনও। অভিমন্যু জানাচ্ছেন, আশির দশক থেকেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষত্রিয় আদিবাসী ভাষা বিভাগে কুড়মালি পড়ানো হয়। পরবর্তীকালে ওড়িশার কোলহান ও ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু স্কুলে তো নবম শ্রেণি থেকে কুড়মালি ভাষা পড়ানো হয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দুটি কলেজে স্নাতকস্তরে এই ভাষার পঠনপাঠন শুরু হয়েছে, পাশাপাশি সিধু-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সেও আছে এই ভাষা। এই কুড়মালি ভাষার নিজস্ব কোনও লিপি নেই। অঞ্চল বিশেষে বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া ও ওড়িশি হরফ ব্যবহৃত হয়।

শুধু ভাষা নয় এই জনজাতির বিয়ের নিয়মটাও বেশ আলাদা। অভিমন্যু- অপর্ণার বিয়েতে থাকবেন না কোনও পুরোহিত, প্রথাগত মন্ত্রচারণ হবে না। প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে ছামড়াতল মানে বিবাহস্থানে চারহাত এক হবে বর কনের। এই জনজাতির নিয়ম মেনে গাছের সঙ্গে বিয়ে হবে পাত্র পাত্রীর। আমগাছের সঙ্গে বিয়ে হবে পাত্রর এবং পাত্রীর বিয়ে হবে মহুল গাছের সঙ্গে। ঠিক যেভাবে স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যের খেয়াল রাখেন, দায়িত্ব নেন সেভাবেই এই গাছ দুটিও মাহাতো পরিবারের সদস্য হয়ে উঠবেন। প্রকৃতিকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাসের শেষেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন অভিমন্যু মাহাতো এবং অপর্ণা মাহাতো।



spot_img

Related articles

রায়পুরে বৃষ্টি নাকি পাটা পিচে প্রচুর রান, অনুকূল আবহাওয়ায় চনমনে মেজাজে ভারত

ফের টস হারল ভারত। এই দিয়ে টানা কুড়ি বার। প্রথমে বল করা সিদ্ধান্ত নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা (Ind vs...

রাজ্যে ফের পারদ পতন! বুধে নিম্নমুখী তাপমাত্রা 

পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আর ঘূর্ণিঝড় শীতের ইনিংসের সাময়িক বাধা দিলেও হাওয়া অফিসের (Weather Department) পূর্বাভাস মতোই বুধবার থেকে তাপমাত্রার...

দিল্লি নয়, সোনালিকে বীরভূমে ফেরানোর সুপ্রিম নির্দেশ! কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন শীর্ষ আদালতের

সুপ্রিম কোর্টে সোনালি বিবি (Sonali Bibi Case in Supreme Court) মামলায় বড় নির্দেশ দিলেন প্রধান বিচারপতি সূর্যকান্ত।সোনালি খাতুন...

আজ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম একাদশে এক্সপেরিমেন্টের পথে গম্ভীর! 

ঘরের মাটিতে প্রোটিয়াদের কাছে টেস্ট সিরিজের চুনকাম হওয়ার পর প্রথম একদিনের ম্যাচে (Ind vs SA) রো-কো (Rohit Sharma-...