Thursday, December 25, 2025

কুড়মালি ভাষায় বিয়ের কার্ড ! চমক দিলেন কবি অভিমন্যু

Date:

Share post:

আর কয়েকদিন পর তাঁর নতুন জীবন। প্রিয় সঙ্গীকে সঙ্গে নিয়ে শুভ লগনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন দুজন – অভিমন্যু মাহাতো এবং অপর্ণা মাহাতো (Abhimanyu Mahato & Aparna mahato)। তাঁদের বিয়ের কার্ডে অভিনবত্বের ছোঁওয়া। নিজের ভাষাকে ভালবেসে বিয়ের কার্ড কুড়মালি ভাষায় (Kurmali Language) লিখে আজ আলোচনার কেন্দ্রে অভিমন্যু মাহাতো (Abhimanyu Mahato)।

পুরুলিয়ার (Purulia)বাসিন্দা, কর্মসূত্রে থাকেন কলকাতায়(Kolkata)। সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ সেই স্কুল কলেজ থেকেই। ইতিমধ্যেই বাংলায় কবিতা লিখে সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কারও পেয়েছেন। প্রতিদিনের কাজের ব্যস্ততা সামলে কলম নিয়ে সাহিত্য চর্চায় এতটুকু গাফিলতি নেই তাঁর। ভাষাকে ভালবাসেন, তাই মাতৃভাষাকে সবার সামনে তুলে ধরতে চান। আদি জনজাতির ভাষা ‘ কুড়মালি’ কে এবার নিজের নব জীবনের অঙ্গীকারের সাক্ষী করতে চেয়ে অভিনব কান্ড ঘটিয়েছেন। নিজের বিয়ের কার্ডে বাংলা হরফে ব্যবহার করেছেন কুড়মালি ভাষা, আর তাতেই হোঁচট খাচ্ছেন কার্ড প্রাপকরা। বিয়ের কার্ডে যে লেখা ‘হুবেকবিহা’, এর অর্থ হল শুভ বিবাহ।

কুড়মালি ভাষা আদি জন জাতির ভাষা। যে ভাষাকে ইতিমধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার (Government of West Bengal)। এই ভাষার ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম, ছত্তিশগড়, বিহার-সহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রচলিত এই কুড়মালি ভাষা। সারা ভারতে আদি এই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা প্রায় চার কোটি । কুড়মি জনজাতিদের মাতৃভাষা কুড়মালি। বাংলাদেশেও কুড়মালি ভাষাভাষীরা রয়েছেন। যদিও ভারত সরকার এই ভাষাকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়নি এখনও। অভিমন্যু জানাচ্ছেন, আশির দশক থেকেই ঝাড়খণ্ডের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষত্রিয় আদিবাসী ভাষা বিভাগে কুড়মালি পড়ানো হয়। পরবর্তীকালে ওড়িশার কোলহান ও ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু হয়েছে। ঝাড়খণ্ডের বেশ কিছু স্কুলে তো নবম শ্রেণি থেকে কুড়মালি ভাষা পড়ানো হয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দুটি কলেজে স্নাতকস্তরে এই ভাষার পঠনপাঠন শুরু হয়েছে, পাশাপাশি সিধু-কানহু-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর কোর্সেও আছে এই ভাষা। এই কুড়মালি ভাষার নিজস্ব কোনও লিপি নেই। অঞ্চল বিশেষে বাংলা, হিন্দি, অসমীয়া ও ওড়িশি হরফ ব্যবহৃত হয়।

শুধু ভাষা নয় এই জনজাতির বিয়ের নিয়মটাও বেশ আলাদা। অভিমন্যু- অপর্ণার বিয়েতে থাকবেন না কোনও পুরোহিত, প্রথাগত মন্ত্রচারণ হবে না। প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে ছামড়াতল মানে বিবাহস্থানে চারহাত এক হবে বর কনের। এই জনজাতির নিয়ম মেনে গাছের সঙ্গে বিয়ে হবে পাত্র পাত্রীর। আমগাছের সঙ্গে বিয়ে হবে পাত্রর এবং পাত্রীর বিয়ে হবে মহুল গাছের সঙ্গে। ঠিক যেভাবে স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যের খেয়াল রাখেন, দায়িত্ব নেন সেভাবেই এই গাছ দুটিও মাহাতো পরিবারের সদস্য হয়ে উঠবেন। প্রকৃতিকে নিজেদের জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাসের শেষেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন অভিমন্যু মাহাতো এবং অপর্ণা মাহাতো।



spot_img

Related articles

এক দশক পর শীতলতম বড়দিন পেল বাংলা!

যিশু জন্মদিনের সকালে (Christmas morning) কলকাতার তাপমাত্রা (Kolkata temperature) নামলো ১৩.৭ ডিগ্রিতে। শীতের আমেজে জমজমাট বড়দিনের আবহাওয়া। দক্ষিণবঙ্গে...

মধ্যরাতে কর্নাটকের ট্রাক-বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঝলসে মৃত্যু অন্তত ১০ জনের

বড়দিনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কর্নাটকে। বেসরকারি একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষের (bus truck accident) ফলে বাসে আগুন ধরে যাওয়ায়...

ক্রিসমাসে রক্তাক্ত ঢাকা, চার্চ টার্গেট করে বিস্ফোরণে মৃত ১

বড়দিনের উৎসব শুরু হবার আগেই বুধবার সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণে রক্তাক্ত বাংলাদেশের ঢাকা (Blast in Dhaka, Bangladesh)। মগবাজার ফ্লাইওভারে...

ক্রিসমাসে ঝলমলে পার্কস্ট্রিট, সান্টা টুপি মাথায় বড়দিনের সকালে পিকনিক মুডে বাঙালি

দেখতে দেখতে বছর প্রায় শেষ হতে চলল। ক্রিসমাসের মধ্য দিয়েই যেন বর্ষবরণের আনন্দ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। বড়দিনের...