প্রথম ছবিতেই চমক, বহু পুরস্কারে ভূষিত সৌম্যর স্বল্প দৈর্ঘ্যের বাংলা ছবি ‘নন্দিনী’

পরিচালকের এটি ডেবিউ ফিল্ম। এর আগে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে একটি শো-রিল করে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন সৌম্য। ভাইরাল (Viral) হয়েছিল তাঁর ‘কোয়ারেন্টান উইথ রে’।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

পুরাণের সবচেয়ে প্রাচীন আর সফল প্রেমগাঁথা (love story) শিব-পার্বতীর প্রেম। শিবের ধ্যান ভঙ্গ করে পার্বতীর তাঁকে স্বামী রূপে বরণ। তাঁদের বিয়ে, পিতা হিমালয় ও মা মেনকার দুশ্চিন্তা, তাঁদের সংসার, দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে মেয়ের ঘরে আসা, আবার স্বামীর ঘরে ফেরা- সবটাই বাঙালির জীবনে আজও প্রাসঙ্গিক। আর সেই কাহিনীকেই এই যুগের আঙ্গিকে সাজিয়েছেন পরিচালক সৌম্য চট্টোপাধ্যায় (Soumya Chatterjee) তাঁর ‘নন্দিনী- এ টেল অফ হোম কামিং’ (Nandini A Tale of Home Coming) ছবিতে।

এটাই পরিচালকের প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবি। আর প্রথমকাজেই বাজিমাৎ। দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভালে (Festival) সৌম্যর ছবি দেখানো হয়েছে, একাধিক বিভাগে পুরস্কৃত হয়েছে।

প্রতিবার পিতৃগৃহে আসেন উমা। যাঁর আরেক নাম নন্দিনী। ওই চারদিন দেবীকে বরণ করে ঘরে তুলে আদর যত্ন করা হয়। আবার দশমীতে জলে বিসর্জনও দিয়ে দিতে হয়। সেই মা, সেই কন্যারূপী দুর্গা যেন বাংলার ঘরেরই মেয়ে।

পরিচালকের এটি ডেবিউ ফিল্ম। এর আগে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে একটি শো-রিল করে বেশ পরিচিতি পেয়েছিলেন সৌম্য। ভাইরাল (Viral) হয়েছিল তাঁর ‘কোয়ারেন্টান উইথ রে’। এরপর ঋত্বিক ঘটক থেকে সৃজিত সবার ছবি নিয়েই ‘কোয়ারেন্টান উইথ’ সিরিজ করেন তিনি। স্যোশাল মিডিয়ায় খুবই জনপ্রিয় হয় সৌম্যের এই মিম ভিডিওগুলি। তবে, ‘গৃহবন্দি’ থাকা এই ভিডিওতে সৌম্য তাঁর ডাক নাম ‘বান্টি‘ ব্যবহার করেছন। নন্দিনী সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ”এই ছবির সব চরিত্রগুলির সবকটা শেড গ্রে। কোনও ব্ল্যাক বা হোয়াইট নেই।” বাস্তবে সবার মধ্যেই কিছু না কিছু ভাল বা খারাপও থাকে। কেউ পুরো ভাল বা পুরো খারাপ হয় না। এই বিষয়টাই এই ছবিতে দেখানোর চেষ্টা করেছেন তিনি। এই ছবিতে কোনও হিরো বা ভিলেন নেই। প্রত্যেকটি চরিত্রই খুব জীবন ঘেঁষা, বাস্তবসম্মত। বলা ভালো সিস্টেমই এখানে ভিলেন।

ছবিটির গল্প সম্পর্কে পরিচালক বলেন, দুর্গাপুজোর সময় একটি মেয়ের ঘরে ফেরার গল্প। যে গল্পটা খানিকটা সেই শিব-পার্বতীর প্রেম আর বিয়ের গল্পের মতো। মেয়েটি বাড়ির অমতে ভালবেসে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যায় এবং দীর্ঘ সময় পর আবার পুজোর সময় বাড়ি ফেরে। তাঁর এই ফেরার পর কী হল সেটাই ক্রমশ প্রকাশ্য।

এই ছবিটি ইতিমধ্যেই বেশ চর্চিত কারণ টনিক, ‘অপরাজিত’র সময়ে যখন বাংলা ছবির দর্শক আবার হলমুখী তখন একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি পেয়ে গিয়েছে অনেকগুলি সম্মান। সেগুলি হল, টেগর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২২ এর বেস্ট ডেবিউ ফিল্মমেকার এবং বেস্ট শর্ট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড। সেরা লেখক, সেরা ভাবনা, সেরা বাংলা ছবির জন্য ইন্ডিয়ান সিনে ফিল্ম ফেস্ট ২০২২। বেস্ট অ্যাসপায়ারিং ডিরেক্টর,বেস্ট স্টোরি, বেস্ট প্রমিসিং ফিল্ম হিসেবে রয়্যাল পিকক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২২, বেস্ট স্ক্রিন প্লে এবং বেস্ট প্রমিসিং শর্ট ফিল্মের জন্য গোয়া ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ২০২২। এছাড়া মনোনীত হয়েছেন ইন্ডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড , গ্রেট ইন্ডিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অ্যাওয়ার্ড ছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি অ্যাওয়ার্ডের জন্য।

ছবিটিতে অভিনয় করেছেন অলিভা ভট্টাচার্য, দেবাংশি পাল, দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, জয়িতা চৌধুরী, অচিন্ত্য দত্ত। ছবির সঙ্গীতের দায়িত্বে ছিলেন ভেদান্ত, তৃষিত, সুপ্রিয়। গান গেয়েছেন ভেদান্ত গৌতম, প্রিয়াঙ্কা বসু। আবহ সৃজিত রাহা। ছবিটির চিত্রনাট্য, পরিচালনা, গল্প-সহ বাকি কাজ সামলেছেন পরিচালক নিজেই।



Previous articleওড়িশার বাস দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর, মৃতদের দ্রুত ময়নাতদন্তের নির্দেশ
Next articleকাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিকের মৃত্যুদণ্ডের দাবী NIA-এর