“কেকে সম্পর্কে ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই”, বিতর্কিত ফেসবুক লাইভ ডিলিট করলেন রূপঙ্কর

জনপ্রিয় গায়ক কেকে-কে নিয়ে ফেসবুক লাইভ করেছিলেন বাংলার বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রূপঙ্কর বাগচী। রূপঙ্করের এমন কিছু মন্তব্য যা ভালভাবে নেননি কেকে’র ভক্তরা। এর পরেই কেকে-র আকস্মিক প্রয়াণ। ঘটনাপ্রবাহে নেটিজেনদের চোখে কার্যত “খলনায়ক” হতে হয় রূপঙ্করকে। ট্রোলিং তো বটেই তাঁর পরিবারের কাছে আসতে থাকে খুনের হুমকিও। রূপঙ্কের এই বক্তব্যের যেমন বিরোধিতা করেন ইমন চক্রবর্তী সোমলতা আচার্যসহ অন্যান্য শিল্পীরা। উল্টোদিকে ঠিক তেমনি পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সঙ্গীত শিল্পী নচিকেতা। বিষয়টি অন্য ইস্যু বিতর্ক বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় মন্তব্য করেছিলেন সাংবাদিক-রাজনীতিবিদ কুণাল ঘোষ-সহ আরও অনেকে।

সবমিলিয়ে এই কদিনে বিতর্কের ঝড় বয়ে গিয়েছে এই ক’দিনে। মানসিকভাবে রূপঙ্কর নিজেও বিপর্যস্ত। ঠিক সেই পরিস্থিতিতে আজ, শুক্রবার কলকাতা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন রূপঙ্কর। যদিও তিনি নিজে একটি লিখিত বয়ান এনে সেটা নিজেই পাঠ করেন। এবং সবশেষে বলেন, “আমি আজ আপনাদের কারও সঙ্গে আলাদা করে কথা বলছি না। পরে নিশ্চয় বলব। কিন্তু আজ সেই দিন নয়। আপনাদের কাছে মার্জনা চাইছি আগাম।” ফলে এদিন সাংবাদিকদের কোনও প্রশ্ন করার সুযোগ তিনি দেননি। তবে সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে তিনি সদ্য প্রয়াত কেকে-র পরিবার ও তাঁর ভক্তদের বার্তা দিতে চাইলেন যে, তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এবং রূপঙ্কর এদিন প্রথমেই কেকে-র পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করেন।

কলকাতা প্রেসক্লাবে নিজের লেখা যে বয়ান সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরলেন, তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে তুলে ধরা হলো–

 

রূপঙ্কর বাগচী: প্রথমেই প্রয়োজন কেকে-র পরিবারের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করছি। আমার যে ভিডিওটি গত ক’দিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়া ও তার বাইরে বিরামহীন উত্তেজনার উপাদান হয়েছে এখানে পৌঁছানোর আগে সেটি আমি ফেসবুক থেকে ডিলিট করলাম । পরলোকগত গায়কের পরিবারের কারও সঙ্গে আমার পরিচয় নেই। কিন্তু আপনাদের মাধ্যমে মুম্বইবাসী তাঁদের আবার জানাচ্ছি যে আমি আন্তরিক দুঃখিত। কেকে আর যেখানেই থাকুন, ঈশ্বর যেন ওকে শান্তিতে রাখেন।

আমার সংগীত জীবনে এইরকম বিভীষিকার মুখোমুখি হতে হবে ভাবিনি, যেখানে ওড়িশায় বসে করা একটি ভিডিও পোস্ট এমন পরিস্থিতি তৈরি করবে যা আমার গোটা পরিবারকে ঠেলে দেবে চরম আতঙ্ক দুর্ভাবনা এবং মানসিক নিপীড়নের মধ্যে। যেখানে আমার বাড়ির বাইরে নিরাপত্তা রক্ষায় পাহারা দেবে টালা থানার পুলিশ। নিয়ত হুমকি যাবে আমার স্ত্রীর ফোনে। গায়ক হিসেবে দেশ-বিদেশে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। তাদের আবেগ অনুবাদ করেছি এত বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে। স্বীকৃতি পেয়েছি নানা স্তরে। মুহূর্তের অসতর্কতাযে এমন গনগনে এবং মারমুখী আবেগ বয়ে আনবে কেউ জানতো? এত ঘৃণা। এত আক্রোশ । এত বিরুদ্ধতা। কিন্তু অনেকটাই তৈরি হল আমার বক্তব্য আমি ঠিকমতো গুছিয়ে বলতে না পারায়।

প্রয়াত কেকে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত কোনও বিদ্বেষ নেই।
ঢাকার প্রশ্নও ওঠে না। আমি শুধু ওর কনসার্ট নিয়ে তৈরি হওয়া উন্মাদনা লক্ষ্য করে বলতে চেয়েছিলাম বাঙালি গায়কদের জন্যও আপনারা এইরকম দরদ দেখান। ব্যক্তিগতভাবে ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবং আপনাদের শুভেচ্ছায় গায়ক হিসেবে আমার ব্যক্তিগত কোনও হতাশা নেই। কিন্তু বাঙালি গায়ক হিসেবে সমষ্টিগত বিপন্নতা রয়েছে। ইদানিং আরও বেশি করে বারবার মনে হয় দক্ষিণ বা পশ্চিম ভারত যেভাবে তার শিল্পীদের স্বার্থরক্ষার্থে ঝাঁপিয়ে পড়ে, আমরা যেন সেটা করতে দ্বিধাগ্রস্ত। শিল্প সাহিত্য সঙ্গীত সবেতেই প্রাদেশিক পারফর্মার যেন কঠিন খাদের ধারে দা
এক অস্তিত্বের সংকটে দাঁড়িয়ে। তাই আমি একাই কথা বলতে চাইনি। একটা সমষ্টির কথা বলতে চেয়েছিলাম।

একইসঙ্গে তাই আরও কিছু সহযোদ্ধার নাম করেছিলাম যাদের ট্যালেন্ট আমার মতো জাতীয় পর্যায়ের। পরে মনে হয়েছে নামগুলো বলার আগে জিজ্ঞাসা করে নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আবার বলি একক ভাবে ইস্যুটা দেখিনি। কেকে-র মতো ভারত বিখ্যাত পারফরমারের নামটা নিছক প্রতীক ছিল। নিছক উপলক্ষ। লক্ষ্য কখনো তিনি ছিলেন না। থাকার প্রশ্নও নেই।

কে জানতো চরম দুর্ভাগ্য কেকে-র জন্য এইভাবে ওঁৎ পেতে রয়েছে। একজন প্রথিতযশা শিল্পী কলকাতার মঞ্চে গাইতে এসে এভাবে প্রাণ হারালেন সেটা খুব হৃদয়বিদারক।”

Previous articleঅপেক্ষার অবসান! বঙ্গে এল বর্ষা, জানাল হাওয়া অফিস
Next articleবিমানবন্দর এবং উড়ানে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, নির্দেশ দিল্লি হাইকোর্টের