বিজেপির মন্তব্যের প্রতিবাদ বাংলায় কেন? দিল্লি যান: অবরোধে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী

"আমাকে খুন করলে খুশি হবেন? আমি সামনে আছি। কিন্তু বাংলার সংহতি নষ্ট করবেন না"- মমতা।

পয়গম্বর নিয়ে দিল্লিতে বিজেপি নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে হাওড়া ডোমজুড়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে কিছু মানুষ বিক্ষোভ দেখান। তার জেরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে যান চলাচল। তীব্র গরমে চূড়ান্ত দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন সাধারণ মানুষ। বৃহস্পতিবার, এই নিয়ে নবান্নে জরুরি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay) বলেন, বিদ্বেষ সৃষ্টি করছে বিজেপি (BJP) । তার জেরে শান্ত বাংলাতে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছেন কেউ কেউ। প্রতিবাদের নামে রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগে ফেলছেন। তিনি বলেন, চাইলেই পুলিশ (Police) দিয়ে অবরোধ হঠিয়ে দেওয়া যেত। কিন্তু তিনি কোনও অশান্তি চান না। সে কারণে শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ তুলে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন মুখ্যমন্ত্রী। একইসঙ্গে প্রশ্ন তোলেন, বিজেপির বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের জন্য বাংলায় অশান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন! প্রতিবাদ করতে হলে দিল্লি (Delhi) যান। বিজেপিশাসিত রাজ্য গুজরাট, উত্তরপ্রদেশে গিয়ে প্রতিবাদ করুন। বাংলার মানুষ ঐক্য-শান্তি-সংহতির মধ্যে বাস করেন। তাঁরা এধরনের মন্তব্যকে সমর্থন করে না। তাঁদেরকে কেন দুর্ভোগের মধ্যে ফেলা হচ্ছে! যাঁরা অবরোধের জেরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে আছেন, তাঁরা কী দোষ করেছে? অবরোধের জেরে দাঁড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্স। গাড়িতে অনেক বৃদ্ধ অসুস্থ মানুষ থাকতে পারেন। কোনও একটা দুর্ঘটনা ঘটে গেলে, তার দায় কার? অবরোধের রাজনীতি করলে মানুষ ভুল বোঝে। অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে খুন করলে খুশি হবেন? আমি সামনে আছি। কিন্তু বাংলার সংহতি নষ্ট করবেন না”।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, বিজেপির কিছু নেতা-নেত্রীর বিদ্বেষমূলক মন্তব্য করছেন। তাঁদের গ্রেফতার করা উচিত। “বাংলায় এই ধরনের মন্তব্য করলে তাকে গ্রেফতার করা হত।” অবরোধে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি অবরোধের রাজনীতি সমর্থন করেন না। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হয়। তিনি কখনই সেটা চান না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “প্রতিবাদ করতে হলে, রাস্তা অবরোধ করবেন না। থানায় ডায়েরি করুন। রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি লিখুন। নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল করুন।” ওয়েসির নাম না করে মমতা বলেন, “আমি জানি হায়দারাবাদের নেতার উস্কানিতেই এসব চলছে। বাংলায় দাঙ্গা তাণ্ডব করতে দেব না।”

সব ধর্মের কাছে মুখ্যমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন। তাঁর মতে, কোনও ধর্মের সম্পর্কে কটূক্তি করা উচিত নয়। “আমরা ধৈর্য নিয়ে অনেক কিছু সহ্য করি, তার মানে এই নয় যে আমরা কড়া পদক্ষেপ করব না।” – স্পষ্ট বার্তা মমতা।

সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যেই নাখোদা মসজিদের ইমামের পাঠানো আবেদন শোনান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে ইমাম বলেন, বাংলায় সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রয়েছে। বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রতিবাদ নিশ্চয়ই হবে, তবে সেটা অবরোধ করে বাংলার মানুষকে দুর্ভোগে ফেলে নয়। এটা কখনই সমর্থন করেন না তাঁরা। মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানিয়ে দেন, যে সংগঠনের নাম করে কয়েকজন এই অবরোধে আন্দোলন করছেন, সেই সংগঠনের নেতার কোনও সমর্থন নেই।


Previous articleদেশের অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ অব্যাহত, ফের পড়ল ডলারের তুলনায় টাকার দাম
Next articleকথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী: পূর্ব বর্ধমানে চাকরি পাচ্ছেন রেণু খাতুন