বাবার পা নেই। কোনও কাজ করতে পারেন না। চার বছর আগে সবজি বেচতেন । কিন্তু এখন আর কোনও কাজ করতে পারেন না। সংসারে রোজগেরে বলতে একমাত্র মা। দিনরাত সংসার সামলে তারপর বাকি সময়টুকু বিড়ি বাঁধেন। কিন্তু বিড়ি বেঁধে আর কতটুকু আয় হয়? তবু সেই টাকাতেই সংসার চলে। সোমনাথের পড়াশোনা চলে।

বাঁকুড়ার গোয়েঙ্কা হাই স্কুলের ছাত্র সোমনাথ অবশ্য বরাবরই মেধাবী। সোমনাথের পড়াশোনার প্রতি মারাত্মক আগ্রহ দেখে স্কুলের শিক্ষকরা তাকে বিনা পয়সায় পড়িয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাযর আগে পাঁচটি বিষয়ে টিউশনি ছিল সোমনাথের। স্কুলেরই শিক্ষকরা পড়াতেন তাকে। বিনা পয়সায় । এ বছরের উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্র সোমনাথ জীবনে যতই বাধা আসুক পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান । অন্য কোনও চাকরি নয় শিক্ষক হতে চান।সোমনাথ। বিশেষ করে ভূগোলের শিক্ষক। কারণ সোমনাথ মনে করেন শিক্ষকরাই সমাজের শিরদাঁড়া। শিক্ষকরাই সমাজ গড়ে তোলেন। যে শিক্ষকদের প্রাণভরা সাহায্যে সোমনাথ আজ এতদূর এগিয়ে আসতে পেরেছেন। সেই শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানাতেই হয়তো সোমনাথের শিক্ষকতা পেশার প্রতি এত ভালোবাসা। স্কলারশিপ জোগাড় করে, এর -তার থেকে সাহায্য নিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়া শেষ করেছেন সোমনাথ । কিন্তু এর পরে কী হবে? কীভাবে পড়াশোনা চালাবেন ছেলের ? এখন তো আরো বেশি খরচ। মায়ের অবশ্য এখন এটাই চিন্তা । ছেলে পড়তে চায় । কিন্তু কীভাবে? তাই এতটুকুও লজ্জা না করে, ভনিতা না করে , বলেই দিলেন কেউ যদি একটু সাহায্য করেন বড় ভালো হয় । আসলে অভাবের সংসারে লজ্জা পাওয়ার মতো পরিসর কোথায়? গ্রামে গ্রামে এরকম আরো অনেক সোমনাথ জন্ম নিক। বড় । এগিয়ে আসুক । জীবন যুদ্ধে হার না মেনে সেরার শিরোপা ছিনিয়ে নিক। তবেই তো বাংলা এগোবে। বিশ্বের দরবারে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পাবে বাংলা।
