বিধানসভায় পাশ হল পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সংশোধনী বিল

বিধানসভা ভবন

এবার থেকে কল্যানীর বিধান চন্দ্র কৃষি বশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী(chief minister)। এই উদ্দ্যেশ্যে শুক্রবার বিধানসভায়(Assembly) পশ্চিমবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় সংশোধনী বিল গৃহীত হল। আর এই বিল পেশকে কেন্দ্র করে সরকার পক্ষের হাত ধরে বিধানসভায় বহুদিন পরে ফিরে এলো সৌজন্যেরর রাজনীতি। বিজেপির(BJP) মনোজ টিগ্গা, মিহির গোস্বামীদের সঙ্গে করমর্দন করলেন ফিরহাদ হাকিম, নির্মল ঘোষরা। বর্ষিয়ান শোভনদেবের(Shovondev Chatterjee) আশীর্বাদ নিলেন হরিণঘাটার বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার।

গত অধিবেশনে সাসপেন্ড হওয়ার পর, বৃহস্পতিবার বিজেপির সাত বিধায়কের উপর থেকে সাসপেনশন উঠে গিয়েছে। শুক্রবার ফের বিধানসভার অধিবেশনে যোগ দেন বিজেপির চিফ হুইপ বা মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা এবং বিধায়ক মিহির গোস্বামীরা। জানা গিয়েছে, এ দিন তাঁদের দেখা মাত্রই এগিয়ে যান তৃণমূলের চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ। মনোজ, মিহিরের সঙ্গে করমর্দন করেন তিনি। তাঁদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করেন রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এই সৌজন্যের রাজনীতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে নির্মল ঘোষ এবং মনোজ টিগ্গা দু’জনেই জানান, রাজনীতি বিধানসভার বাইরে। বরং মিলে মিশে হাউজ চালাতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। শুক্রবার কৃষি দফতরের আচার্য সংক্রান্ত বিল নিয়ে বলতে ওঠেন বিজেপি বিধায়ক অসীম সরকার। বিল পাশের পর অসীম সরকারের সঙ্গে কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। তাঁদের মধ্যে কিছুক্ষণ বাক্যালাপ হয়। এরপর অসীম সরকারকে শোভনদেববাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেখা যায়। বর্ষিয়ান বিধায়কের আশীর্বাদ নেন তিনি।

এই বিষয়ে হরিণঘাটার বিধায়ক বলেন, “যাঁরা শান্ত-সুষ্ঠু ভাবে বিধানসভাকে পরিচালনা করতে সাহায্য করেন, তাঁদের প্রত্যেকের পায়ে হাত দিয়ে আমি প্রণাম করতে পারি। তিনি যে দলরই হন।” এখানেই শেষ নয়, নৈহাটির পার্থ ভৌমিকের অনুরোধে গানও করেন অসীমবাবু। নূপুর শর্মার মন্তব্যকে ঘিরে যখন অশান্ত দেশ, তখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান শোনান বিজেপি বিধায়ক। তৃতীয় তৃণমূল সরকার গঠনের পর, শাসক-বিরোধী দ্বন্দ্বে বারবার উত্তপ্ত হয়েছে রাজ্য বিধানসভা। কিন্তু শুক্রবার সেখানে যে সৌজন্যের রাজনীতি দেখা গেল, তা এ যাবৎকালে নজিরবিহীন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এর আগে বিলটি আলোচনার জন্য উত্থাপন করে কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেন কৃষি ক্ষেত্রকে। কেউ পন্ডিত হলেই ভাল শিক্ষক বা প্রশাসক হন না। তেমনি শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে তিনি ভালো আচার্য হন না। যিনি আচার্য হবেন তাঁকে ভালো প্রশাসকও হতে হবে। এই দুইয়ের নিরিখেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও দিক থেকেই কম বলে তিনি মনে করেন না।

বিলের বিরোধিতা করে বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক বলেন, সরকার বলছে রাজ্যপালের দায়িত্ব কমানোর জন্যই এই বিল আনা হয়েছে। কিন্তু এমন কি হলো যাতে রাজ্যপালের দায়িত্ব বেড়ে গেল এবং মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব কমে গেল? রাজ্যপালের বদলে কোনও কৃষক পরিবার থেকে কাউকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করা হোক। তিনি আরো জানান কৃষিজমি দিনে দিনে কমছে। সেই কারণে কৃষির উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলেও জানান তিনি। তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক অপূর্ব সরকার এই বিলকে সমর্থন জানিয়ে বলেন ভারতের বেশকিছু রাজ্যও এই পদক্ষেপ করছে। মুখ্যমন্ত্রী কৃষকদের উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। রাজনীতির ময়দানে মুখ্যমন্ত্রী যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা বাস্তবায়ন করেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকার গায়ের জোরে কৃষি বিল পাস করেছিল। পরে তা বাধ্য হয়েছে প্রত্যাহার করতে। বিলের বিরোধিতা করে বিজেপি বিধায়ক বঙ্কিম চন্দ্র ঘোষ জানান, মুখ্যমন্ত্রী সকলের। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতীকের উপর দাঁড়িয়ে তিনি নির্বাচনে জিতেছেন। ফলে তাঁর রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা থাকবেই। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রীকে আচার্য না করে সমাজের বিশিষ্ট কাউকে আচার্য পদে বসানোর দাবি তুলেছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিকরণ হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতি রাজনৈতিক প্রভাবে চলছে। ‌আলোচনার পর ধ্বনি ভোটে বিলটি পাস হয়।

আরও পড়ুন- ‘অগ্নিপথ’প্রকল্প নিয়ে অশান্তির আগুন বাড়ছে, কাঠগড়ায় মোদি-রাজনাথ

 

 

 

Previous article‘অগ্নিপথ’প্রকল্প নিয়ে অশান্তির আগুন বাড়ছে, কাঠগড়ায় মোদি-রাজনাথ
Next article২১ জুলাইয়ের প্রস্ততি বৈঠক: কর্মীদের ৯ দফা নির্দেশ দিলেন অভিষেক