সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একহাত নেওয়ার পর এবার সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে(Sujan Chakraborty) আইনি নোটিশ পাঠালেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ(KunalGhosh)।

শুক্রবার কুণাল ঘোষের আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তীর তরফে বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে যে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সারদা মামলায় আদালতের তরফে কুণাল ঘোষকে রেহাই দেওয়ার বিষয়ে সুজন চক্রবর্তী যে মন্তব্য করেছেন তা পুরোপুরি মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং দেশের বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি অপমানজনক মন্তব্য। এই ধরনের মন্তব্য করার জন্য আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে নিজের বক্তব্য ফিরিয়ে নিতে হবে ও নিঃস্বার্থভাবে সুজন চক্রবর্তীকে ক্ষমা চাইতে হবে। যদি তিনি তা না করেন সেক্ষেত্রে ৭২ ঘন্টা পর ওই সিপিআইএম নেতার বিরুদ্ধে আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে স্পষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে চিঠিতে।
উল্লেখ্য, সারদার যে মামলায় ২০১৩ সালে গ্রেফতার করা হয়েছিল কুণাল ঘোষকে, বৃহস্পতিবার সেই মামলা থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাঁকে। শুধু কুণাল নন, ওই মামলা থেকে রেহাই পেয়েছেন সারদা-কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেন ও দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও। তবে কুণাল ঘোষের এই রেহাই প্রসঙ্গে তাঁকে কটাক্ষ করেন বর্ষীয়ান বাম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, শাসক দলের নেতা বলে স্বাভাবিক নিয়মেই কুণালের বিরুদ্ধে হওয়া মামলা তুলে নেওয়া হয়েছে। তার এই কটাক্ষের কড়া জবাব দিতে ছাড়েননি কুণাল ঘোষ। পাল্টা সোশ্যাল মিডিয়ায় সুজনকে তোপ দাগেন কুণাল। এবার সুজন চক্রবর্তীকে আইনি নোটিশ পাঠালেন তিনি।

এদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় সুজন চক্রবর্তীকে উদ্দেশ্য করে কুণাল ঘোষ যা লেখেন…

সুজন চক্রবর্তী, মিথ্যাচার করবেন না, ভেবে বলুন-

বিধানসভায় শূন্য পাওয়া দলের নেতা এবং সিপিএম রাজ্য সম্পাদক হতে না পারায় অবসাদগ্রস্ত সুজন চক্রবর্তী আমার সারদার একটি মামলা থেকে অভিযোগমুক্ত হওয়া সম্পর্কে বলেছেন আমি তৃণমূলের মুখপাত্র, তাই ” পুলিশের মামলা তো উঠে যাওয়ারই কথা।”

অল্পবয়সে সাদা চুল। তাই সবজান্তা হাবভাব। চোখে আঙুল দাদাও বলা যায়।

মামলা উঠে গেল? এত বড় মিথ্যে বললেন?

মামলা ছিল। আর তার চার্জশিটও এখনকার নয়। 2013/14 সালের। তখনকার নথিতেই বিচার প্রক্রিয়া চলছে। এখন কোনো নথি বদলায় নি।
এই মামলাগুলিতে আমি লড়ছি, এবং আইনি প্রক্রিয়াতেই রেহাই পেয়েছি। কেউ কোনো মামলা তুলে নেয়নি।
এর কদিন আগে, আমার আত্মহত্যার চেষ্টার মামলাতেও সব পদ্ধতি মেনে রাজ্য সরকার চেষ্টা করেছে আমাকে দোষী প্রমাণ করতে। এবং আদালত আমাকে দোষী বলে রায় দিয়েছেন। বিচারক মনোজ্যোতি ভট্টাচার্য আমাকে দোষীই বলেছেন। মানবিক কারণে শাস্তি দেননি। সেটাও আইনি পথে।

গতকাল সারদার মিডিয়া কর্মীদের বেতন সংক্রান্ত মামলায় একইভাবে আইনি লড়াই হয়েছে। আমার আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী ডিসচার্জ পিটিশন দিয়েছেন। এবার, আমি যদি সত্যিই সারদার কোনো আর্থিক লেনদেনে জড়িত না থাকি, তাহলে কি জোর করে আমাকে শাস্তি দেবে কোর্ট? মনে রাখুন, চার্জশিটের সময়টা 2013/14। আমার তো বটেই, এমনকি বাকিদের ক্ষেত্রেও পুলিশ যদি তখনকার তাড়াহুড়োয় যথাযথ তথ্যপ্রমাণ না দিয়ে থাকে এবং মামলাটি বিচারের উপযোগী না হয়, কোর্ট রায় দেন, তার সঙ্গে মামলা তুলে নেওয়ার কী সম্পর্ক? কোর্ট প্রতিটি নথি নিয়ে প্রকাশ্যে বিশ্লেষণ করেছেন। তারপর রায় দিয়েছেন।

মামলা তুলে নিয়েছে পুলিশ? আপনি মিথ্যা বলছেন।

আপনার জেলা, আপনার শ্বশুরমশাইয়ের জেলায় সারদার জন্ম। সুদীপ্ত সেনের আদালতকে দেওয়া বয়ানে আপনাদের পার্টির নামও আছে। আপনাদের গণশক্তি ও ডায়ালে চিটফান্ডের বিজ্ঞাপন ভরা। আপনি আজ বড় বড় কথা বলছেন? মিথ্যাচার করছেন?

মনে আছে, বউবাজারে রশিদ খানের বাড়িতে বিস্ফোরণ। আর ডি এক্স। শতাধিক হতাহত। সিপিএম নেতাদের যোগ। রশিদ গ্রেপ্তার। আপনারা রশিদযোগে আপনার ছয় শীর্ষনেতা নেত্রীকে শাস্তি দিলেন, কিন্তু পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তই করল না। এরকম অজস্র উদাহরণ। আজকাল সব কম্পিউটারে। তখন কাগজ আর চিরকুটের জমানায় কত কী পাল্টে গেছে, তবে মানুষ ভোলেননি।

আপনি এখন মামলা তোলার যে কথা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ। আপনি আগে কৈফিয়ত দিন আপনাদের জমানায়, শ্বশুর জামাইয়ের দাপটযুগে, আপনার জেলায় সারদা ডালপালা ছড়ালো কী করে?

পুনশ্চ: আপনার গণশক্তিও এই মামলার প্রতিবেদনে একবারও লেখেনি যে পুলিশ মামলা তুলে নিয়েছেl আপনার কি সব কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়েছে?
আরও পড়ুন- রাজ্যবাসীকে জলে ডুবিয়ে ত্রিপুরার ভোট প্রচারে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা