অদম্য জেদ আর ইচ্ছের কাছে কোনও কিছুই বাধা হতে পারে না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা স্বপ্নের উড়ানকে কোনও ভাবেই বাধা দিতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মান (International Bengali Literary Honor) পেয়ে দুর্গাপুরের (Durgapur) দেবস্মিতা যেন সেই কথাই আবার প্রমান করে দিলেন।

পশ্চিম বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে জন্ম দেবস্মিতা নাথের ( Debosmita Nath) । জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসি (Cerebral palsy) নামক দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত তিনি। আর চার পাঁচটা বাচ্চার মত স্বাভাবিক নিয়মে তাঁর বড় হয়ে ওঠা হয়নি। কিন্তু তাঁর প্রতিভার গুণে তিনি বিকশিত হয়েছেন সবার মাঝে। তিন বছর বয়সে প্রথম কথা বলতে শিখে, চার বছর বয়সেই আবৃত্তি করে সকলের মন জয় করে নেওয়া। সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ জন্মেছিল শৈশবেই। শারীরিক সমস্যা কে পিছনে ফেলে মা-বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম ,স্নেহ- ভালবাসার জোরে, মানসিক শক্তিতে বলিয়ান হয়ে দেবস্মিতার যাত্রা শুরু হয় কবিতার জগতে। ছোট থেকেই বেতার-টেলিভিশনে আবৃত্তির অনুষ্ঠান করতে থাকা মেয়েটি আজ জিতে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক পুরস্কার। খ্যাতনামা আবৃত্তিশিল্পীদের কাছে প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে ওঠেন দেবস্মিতা। মাত্র ১৩ বছর বয়সে সারা বাংলা আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করা থেকে শুরু করে, ১৭ বছর বয়সে কবিতার অডিও সিডি (Audio CD) প্রকাশ পাওয়া। ইচ্ছা শক্তির উপর ভর করে নিজের প্রতিভার জোরে এগিয়ে চলেছেন দেবস্মিতা। জেলা থেকে রাজ্য একাধিক সাহিত্য সম্মান তাঁর ঝুলিতে। এবার আন্তর্জাতিক সম্মান পেয়ে খবরের শিরোনামে তিনি। বিশ্ব বাংলা সাহিত্য – সংস্কৃতি সম্মান থেকে শুরু করে কলকাতা বইমেলায় (International Kolkata Book Fair) কবি ও বাচিক শিল্পী হিসেবে সম্মাননা পাওয়া, আন্তর্জাতিক বঙ্গ সাহিত্য সম্মান থেকে ভারত ও বাংলাদেশ মৈত্রী সম্মান – এই সব কিছুই তাঁর প্রতিভাকে কুর্নিশ জানায়। সম্প্রতি ‘নেপাল – ভারত দলিত মৈত্রী আন্তর্জাতিক সম্মান’ এবং আন্তর্জাতিক বাংলা সাহিত্য সম্মান পেয়েছেন দেবস্মিতা নাথ। নিজের পড়াশুনা আর অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের পড়াশোনা শেখান তিনি, চলে আবৃত্তির ক্লাসও। এভাবে সমাজের বুকে দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছেন দুর্গাপুরের দেবস্মিতা।
