চিটফান্ড কাণ্ডে বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে সোচ্চার তৃণমূল

কলকাতা-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়। এদিন একই সময়ে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরের বাইরে এবং হলদিয়া ও কাঁথিতে দুটি পৃথক মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়

কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকা খাঁচাবন্দি তোতাপাখি ও বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে সিবিআই ও ইডির নিরপেক্ষ তদন্ত ও রাজ্যের সমস্ত প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেস ও দলের ছাত্র-যুব সংগঠন এবার সোচ্চার হয়ে পথে নামলো। কলকাতা-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার দুই জায়গায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিলের আয়োজন করা হয়।

এদিন একই সময়ে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরের বাইরে এবং হলদিয়া ও কাঁথিতে দুটি পৃথক মিছিল এবং সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সুদীপ্ত সেনের বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পর শুভেন্দু-সহ বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতেই এই বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক তৃণমূলের।

সিজিও কমপ্লেক্স সংলগ্ন সভার উদ্যোক্তা ছিল তৃণমূলের ছাত্রযুব সংগঠনের নেতৃত্ব। এই সভা থেকে আওয়াজ তোলা হয় সিবিআই-ইডির পক্ষপাত ও বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে। লক্ষ্য ছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যেভাবে বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে কাজ করছে তার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলা।

এদিনের এই প্রতিবাদ সভা থেকে ঝাঁঝালো বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ, বালিগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক বাবুল সুপ্রিয়, তৃণমূল যুবসভানেত্রী সায়নী ঘোষ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃনাঙ্কুর ভট্টাচার্য, যুবনেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য, ছাত্রনেতা সুদীপ রাহা, সুপ্রিয় চন্দ্র, কোহিনুর মজুমদার-সহ আরও অনেকে।

এদিনের সভার মূলবক্তা কুণাল ঘোষ সিবিআই-ইডি সহ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি যাতে বিজেপির শাখা সংগঠনের ভূমিকায় কাজ না করে যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত করে নিজেদের ঐতিহ্য, সুনাম ও ব্র্যান্ডের প্রতি সুবিচার করতে পারে সেই আবেদন রাখার পাশাপাশি শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি আশ্রিত যেসকল নেতা বিভিন্ন কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, তাদের যেন আদালত পর্যন্ত টেনে আনতে পারে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলি, সেই দাবি রাখেন।

 

এদিনের সভা থেকে যা বললেন কুণাল ঘোষ

আজকের সিবিআই দফতরের বাইরে এই সমাবেশের
বিষয়টি কোনও ব্যক্তি নয়, বিষয়টি নীতির। বিষয়টি কুৎসার নয়, বিষয়টি বৈষম্যের। আপনারা জনাব, বহু মানুষ, বহু আমানতকারী থেকে বহু চিটফান্ডের কর্মচারীরা বিপদে। একটি সময় চক্রান্তকারীরা অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করে, অন্যায়ভাবে অন্যদের ফাঁসিয়ে বলতো আইন আইনের পথে চলবে। অজগর সাপের মতো জড়িয়ে মামলার ধারা দেওয়া হয়েছিল।

আমাদের সিবিআই অফিসাররা অনেকেই খুব দক্ষ। আমি তাঁদের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু দিল্লি থেকে কন্ট্রোল করা হয় সিবিআই-ইডিকে। আমরা এই নীতির বিরুদ্ধে। হিমন্ত বিশ্বশর্মার নাম সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের প্রথম চিঠিতে ছিল। কিন্তু গ্রেফতার হয়নি। আর বিজেপিতে গিয়ে ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে গেল। সিবিআই দেখতে পাচ্ছে না। শুভেন্দুর নাম সুদীপ্ত সেনের চিঠিতে। বিজেপিতে গিয়ে ওয়াশিং মেশিনে পরিষ্কার হয়ে গেল। আদালত নিয়ে কোনও কথা বলবো না। কিন্তু যারা গ্রেফতার হয়নি, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে সমস্ত চিটফান্ডের ষড়যন্ত্রকারী ও সুবিধাভোগীকে।

কোথায় গেল নারদে অভিযুক্ত শুভেন্দু। প্রয়াত মন্ত্রী বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায় সকালে বাড়িতে গিয়ে তুলে আনলো। আর একই মামলায় এফআইআর-এ নাম থাকা শুভেন্দু ছাড় পেয়ে গেল। মুকুল রায়, শোভন চট্টোপাধ্যায়রা যখন বিজেপিতে ছিল ডাকেনি। যতগুলি চিটফান্ড মামলা রয়েছে, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে। বিজেপির কোলে বসে যারা দোল খাচ্ছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। কোর্ট পর্যন্ত টেনে আনতে হবে। সিবিআই অফিসারেরা জানেন, কারা অভিযুক্ত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য বাধা পাচ্ছেন। আমাদের জনমত গড়ে তুলতে হবে।

শুভেন্দু বাঁচতে, গ্রেফতারি এড়াতে বিজেপিতে গিয়েছে। আদি বিজেপিরা ভেবে দেখুন এই চোর, গদ্দার, ক্রিমিনালের নামে জয়ধ্বনি দেবেন?

রাজ্যপাল শুভেন্দুকে সুরক্ষা দিচ্ছে। আমরা মঙ্গলবার ডেপুটেশন দেবো রাজ্যপালকে। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে সুদীপ্ত সেনের বয়ান, চিঠি রাজ্যপালের হাতে তুলে দেবো। দেখি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে তিনি পাঠান কিনা। পদক্ষেপ নেন কিনা দেখবো। সুদীপ্ত সেন আর শুভেন্দুকে হেফাজতে নিয়ে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে হবে।

সিবিআইকে অনুরোধ, কেন্দ্রীয় সরকার আর বিজেপির কাছে মাথা নত করবেন না। নিজেদের সুনাম ফিরিয়ে আনুন। শুভেন্দু-সহ বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুন। আপনাদের সম্মান করি। আমাদের ব্র্যান্ড সম্মানজনক। তার মর্যাদা রক্ষা করুন।

এদিনের সভা থেকে যা বললেন বাবুল সুপ্রিয়

১৫.১২.১৯৭০ ওই একইদিনে শুভেন্দুর জন্মদিন জানার পর একদিন পরে জন্মদিন পালন করি। নিজেকে একবারে জোকারে পরিণত করেছে।

এটা কী ধরণের নিয়ম। শুভেন্দুর বাবা-ভাই বসে আছে। সাহস করে পদত্যাগ করে সরে দাঁড়াতে পারছে না কেন? রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরিস্কার। সিবিআই প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট করে। কিন্তু বিজেপির হয়ে কাজ করবে কেন সিবিআই? শুভেন্দু, হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে ডাকা হয় না কেন?

শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউতকে ইডি নোটিশ ধরানোর মধ্যেই প্রমাণ হয় এজেন্সি বিজেপির হয়ে কাজ করছে।

শুভেন্দু কোনওদিন লম্বা রেশের ঘোড়া নয়। আমি সাহস দেখিয়ে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছি। আর শুভেন্দু ভয়েতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়েছে। কীভাবে নারদা ভিডিও ক্লিপ থেকে উধাও হয়ে গেল শুভেন্দু?

সুদীপ্ত সেন নিজে বয়ান দিয়েছে শুভেন্দুর বিরুদ্ধে। রাজ্যপাল যদি নিজেকে সত্যি সংবিধানের রক্ষাকর্তা হয়ে থাকেন, তাহলে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন সেটা দেখার বিষয়। রাজ্যপাল রাজভবনকে বিজেপি দফতর বানিয়ে দিয়েছে।

ছাত্রযুবদেরকে বলবো, একলক্ষ আয়না শুভেন্দুর বাড়িতে পৌঁছে দাও। বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে আয়না দেখুক। আর ওই আয়নার পিছনে অমিত শাহের পায়ে হাত দেওয়া ছবিটা যেন লাগানো থাকে।

এদিনের সভা থেকে যা বললেন সায়ণী ঘোষ:

কিছু দুর্বৃত্ত বাংলাকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু গদ্দার মির্জাফর নেতা সিন্ড্রমে ভুগছিলেন বিধানসভা ভোটের আগে। তাদের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী একজন। উনি লিডার অফ অপজিশন নয়, লিডার অফ গদ্দার বলি আমি। আসলে বাপ দেখেনি ছাগল, মুরগি দেখেই পাগল। আর বিজেপির দুই ভাই, ইডি আর সিবিআই। সবাই সবকিছু বুঝে গেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত করা সিবিআয়ের কাজ। যেখানে সুদীপ্ত সেন বলছে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এবং তোয়ালে মুড়ে টাকা নিয়েছে তাকে ডাকা হচ্ছেনা কেন?

এছাড়াও এদিন কাঁথিতে রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরির নেতৃত্বে শুভেন্দু-সহ বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এবং হলদিয়ায় মানুষ ভূঁইয়া, শিউলি সাহা ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি মিছিল ও সমাবেশ হয়।

উল্লেখ্য, শুক্রবার সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের সংবাদমাধ্যমের সামনে এমন বিস্ফোরক স্বীকারোক্তির পর তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। এই মর্মে সারদাকর্তা আগেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি এবং কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে তাঁর দ্বিতীয় চিঠি দিয়েছেন। আর এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শুভেন্দুকে গ্রেফতারের দাবিতে সরব হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। এবার বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে চলেছে তৃণমূল।

এরপর মঙ্গলবার, বেলা ১১.৩০ মিনিটে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সারদাকর্তা সুদীপ্ত সেনের থেকে প্রতারণা ও ব্ল্যাকমেল করে টাকা নেওয়ার ইস্যুতে অভিযোগ জানাতে এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের হস্তক্ষেপ দাবি করেন রাজভবনে যাবে তৃণমূলের ৮ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল। যার নেতৃত্বে থাকবেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এছাড়াও প্রতিনিধিদলের বাকি সদস্যরা হলেন মানস ভূঁইয়া, তাপস রায়, কুণাল ঘোষ, শশী পাঁজা, ফিরোজা বিবি, অর্জুন সিং, সায়নী ঘোষ।

আরও পড়ুন- অন্ধকারে কাটিয়ে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর গ্রামে অবশেষে এলো বিদ্যুতের খুঁটি

 

 

 

 

 

 

Previous articleIndia Team: টি-২০ সিরিজের শেষ ম‍্যাচে ৭ উইকেটে হার হরমনপ্রীতদের
Next article‘তোমার পাশে আছি’, রেনুকে জড়িয়ে ধরে সাহস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী