তৃণমূল প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ম্যারাথন সাক্ষাতের পর ধনকড়ের বিতর্কিত টুইট নিয়ে ফের তুঙ্গে সংঘাত। মঙ্গলবার রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বাধীন তৃণমূলের ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠকের পর রাজ্যপাল জাগদীপ ধনকড় একাধিক বিভ্রান্তিকর টুইট করেন। যার সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠকের সেই অর্থে কোনও সম্পর্ক নেই বলেই অভিযোগ তৃণমূলের। বৈঠকের একটি অংশ বিশেষ তাঁর টুইটে তুলে ধরেন রাজ্যপাল এবং তার ফলে একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ বৈঠকের কার্যত সুর কেটে যায়।
যা নিয়ে বুধবার ফের পাল্টা টুইট করেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা প্রতিনিধি দলের ও অন্যতম সদস্য কুণাল ঘোষ। জগদীপ ধনকড়ের পক্ষপাতমূলক আচরণের নিন্দা করেন কুণাল। টুইটে তিনি লেখেন, “তৃণমূলের প্রতিনিধি দল রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বৈঠক করে। দীর্ঘসময় বৈঠক হয় রাজভবনে। রাজ্যপাল সকলের। রাজ্যপালের চেয়ার সম্মানের। কিন্তু আমরা দেখলাম, আমরা বুঝলাম রাজভবনে আমাদের সঙ্গে রাজ্যপালের আসনে বসা আসলে একজন বিজেপি বিজেপি নেতার সঙ্গে কথা হয়েছে।
রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতায় তাঁর টুইটটি বিকৃত ও অসম্পূর্ণ ছিল। একটি সূত্র বলছে, বিজেপির তরফে জগদীপ ধনকড়কে বলা হয়েছে ব্রাত্য বসুকে চিঠি লিখতে। চিঠির বয়ানে থাকবে, কেন তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নেবেন না।”
Request to Hon’ble @jdhankhar1
Kindly allow us for a joint media briefing with you.
Otherwise only to cover up the allegations against BJP, you are spreading wrong message unilateraly about our meeting.If both side are making discussions public, then why not in a joint way? pic.twitter.com/gfjsqXZDR2
— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) June 29, 2022
অপর একটি টুইটে কুণাল ঘোষ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের কাছে অনুরোধ করেছেন, মঙ্গলবার তৃণমূল প্রতিনিধিদের সঙ্গে যে দীর্ঘ বৈঠক রাজভবনে হয়েছে, তা নিয়ে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করার। টুইটে কুণাল লেখেন, “অনুগ্রহ করে আপনার সঙ্গে একটি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করার জন্য আমাদের অনুমতি দিন। অন্যথায় শুধুমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য আপনি আমাদের বৈঠক নিয়ে একতরফাভাবে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছেন। দুই পক্ষই যদি প্রকাশ্যে আলোচনা করে, তাহলে যৌথভাবে কেন সাংবাদিক বৈঠক নয়?”
.@AITCofficial met the Chair of Governor & there we had a talk with a BJP person.
Under political compulsion his tweet was distorted and incomplete.
Now sources say, he has been told by BJP to write a letter to Bratya Basu informing why he will not take any action against BJP.— Kunal Ghosh (@KunalGhoshAgain) June 29, 2022
প্রসঙ্গত, চিটফান্ড কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত শুভেন্দু অধিকারী-সহ বিজেপি আশ্রিত অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে আন্দোলনে সুর চড়িয়েছে রাজ্যের শাসক দল। তারই অঙ্গ হিসেবে মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তৃণমূলের ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল। দীর্ঘ বৈঠকের পর ব্রাত্য বসুর নেতৃত্বে ওই প্রতিনিধি দল স্মারকলিপি দেন রাজ্যপালকে। আবার সেই বৈঠকে আলাপচারিতার মধ্যে রাজ্যপালও তাঁর কিছু বক্তব্য তুলে ধরেন তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের কাছে।
এরপর প্রতিদিন দল চলে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই রাজ্যপাল একাধিক টুইট করেন। তাঁর একটি টুইটে তিনি বলেন, “সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করতে হবে শাসক দলের মন্ত্রীদের। আইনের শাসন মানতে হবে, শাসকের আইন নয়। আইনের শাসন নিশ্চিত করুক রাজ্য সরকার।” আরও একটি টুইটে রাজ্যপালের সংযোজন, ”সিন্ডিকেট-মাফিয়ারাজকে কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আক্রান্তদের আর্থিক সাহায্যের ক্ষেত্রেও তোষণ রাজনীতি বন্ধ করতে হবে।” অপর একটি টুইটে রাজ্যপাল বলেন, “৩ বছর পর তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি দল রাজভবনে এলো।” যদিও কোনও টুইটে রাজ্যপাল এদিনের বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু নিয়ে বিশেষ আলোকপাত করেননি।”
খুব স্বাভাবিক রাজ্যপালের এমন একচোখা আচরণে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। আর সেই কারণেই রাজ্যপালের টুইট নিয়ে পাল্টা সুর চড়ায় তৃণমূলও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ পাল্টা টুইটে লেখেন, “রাজ্যপালের ট্যুইট পক্ষপাতমূলক, বিজেপির মতো কথা। বিকৃত এবং রাজনীতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ট্যুইট কাম্য নয়। তৃণমূলের দাবি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে একটিও কথা লেখেননি তিনি।”
পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কুণাল ঘোষ বলেন, “রাজ্যপাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে টুইট করেছেন। মূল বিষয়ের বাইরে গিয়ে কথা বলেছেন। তৃণমূল রাজভবনে নিজেদের দাবি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওনার টুইট দেখে মনে হচ্ছে, উনি তৃণমূলের কাছে গিয়েছেন নিজের আর্জি নিয়ে। রাজ্যপালের টুইট একেবারেই পক্ষপাতমূলক, বিকৃত টুইট। বিজেপির ভাষায় কথা বলছেন। রাজ্যপাল শুধু বিজেপির নয়। রাজভবন যেন বিজেপির পৈতৃক সম্পত্তি। রাজ্যপাল ওনাদের অভিভাবক। কার বা কাদের নির্দেশে বা ভালোসাজার জন্য এই টুইট করলেন, সেটা উনি বলতে পারবেন। উনি টুইট ব্যাধিতে আক্রান্ত। ওনার টুইটে শুধু বিজেপির কথার প্রতিফলন ঘটছে। দীর্ঘ বৈঠকের যে আলোচনা সেটা ব্যাঘাত করলেন উনি।”