সন্ধ্যা রায়, অভিনেত্রী

আমার স্বামী। আমি আর ওঁর সম্পর্কে কী বলব! আমার অতি আপনার জন। ভারতীয় হিন্দু নারীর কাছে তাঁর স্বামী কোন জায়গায় থাকে আপনারা জানেন। তাঁরা স্বামীর বাইরে কিছু জানেন না। আমার কাছেই উনি একসময় তাই ছিলেন। সেই আপন মানুষটা আজ আর নেই। তবে খুব অল্প কথায় বলব যে নিঁখুতমানের পরিচালক ছিলেন। একাধারে অত্যন্ত সহজ এবং অত্যন্ত কঠিনও। সহজ কথা,সহজ অভিনয় দিয়ে একটা গল্পকে কী স্টাইলে পরিবেশন করতে হয়। মানুষের ঘরের কাছের চরিত্র করে,তুলতে হয় ছবির চরিত্রগুলোকে সেটা ওঁনার নখদর্পণে ছিল।
দারুণ মানুষ ছিলেন। দারুণ ভাল কাজ করতেন। অনেক ছাত্রছাত্রীকে উনি অভিনয় শিখিয়েছিলেন। তাঁরা প্রত্যেকে নিজের পায় দাঁড়িয়েছে। মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় উনি। সবাই ওনাকে শ্রদ্ধা করেন, ভালবাসেন। উনি অনেকের কাছে অভিভাবকের মতোই ছিলেন।

উনি ওঁনারটা বলে বুঝিয়ে দিতেন। ওঁর স্টাইলটাই বলতেন। এরপর তাঁর মধ্যে থেকে যদি কোনও শিল্পীর নিজস্ব কোনও স্টাইল বেরিয়ে আসত উনি থামাতেন না। আমার ক্ষেত্রেও একইরকম ভাবেই কাজটা করতেন। বলে দিতেন কী চাইছেন, কতটা চাইছেন এরপর আমি যদি কখনও ওনার বলার ওপরে কিছু করে থাকি উনি থামাননি সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। আমার মতো করে করতে দিয়েছেন অবশ্যই সেটা ওঁনার ঠিকঠাক মনে হলে তবেই সেই পূর্ণ স্বাধীনতা উনি সবাইকে দিয়েছেন। আমি আর উনি কাজের ক্ষেত্রে একে অপরের পরিপূরক ছিলাম। খুব নির্ভর করতেন। শুধু যে আমার উপর তা নয় যাঁরা ওঁর সহকর্মী ছিলেন তাঁদের উপরেও খুব নির্ভরশীল ছিলেন। আমার কাছে উনি অনেক নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দায়িত্ব দিতেন। আমাকে যতটুকু দিয়েছেন আমি সেটা যথাযথ ভাবে পালন করার চেষ্টা করেছি। উনি বলে দিতেন কী করতে হবে। আমি নিজেও নিজের মতো করে করেছি, উনি বাঁধা দেননি।


মৌসুমী থেকে মহুয়া বা দেবশ্রী দেবশ্রী শুরু করে তাপস, তাপস থেকে শুরু করে অয়ন সবাই এইভাবেই ওঁর ছত্রছায়ায় নিজেদের মেলে ধরতে পেরেছিল। তাঁদের ট্যালেন্ট সামনে এসছিল। তাঁরা প্রত্যেকে নাম করতে পেরেছিল। শুধু একজন ভালো মানুষই নন খুব রসিক মানুষ ছিলেন। সবার সঙ্গে সহজ সাবলীল সম্পর্ক গড়ে ফেলতে পারতেন। প্রতিটা বিষয় ওঁর নজর থাকত। কোন কিছু রেডি না করে শুটিংয়ে নামতেন না। সবটা আগে থেকে পরিকল্পনা করে তবে এগতেন।
