Monday, November 10, 2025

ব্রিটিশ শাসনেও এমন পরাধীনতা ছিল না, রাষ্ট্রপতিকে অবহেলা, “অসংসদীয়” শব্দ বিতর্কে তোপ অভিষেকের

Date:

কেন্দ্রীয় সরকার ও শাসক দল বিজেপির অঙ্গুলিহেলনে সংসদের অধিবেশনে বেশ কিছু ইংরেজি ও হিন্দি শব্দগুচ্ছের উপর আচমকা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে লোকসভার সচিবালয়। আঞ্চলিক ভাষাতেও ওইসব শব্দ প্রয়োগ করা যাবে না বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অধিবেশনে কোন কোন শব্দ প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হল, তার একটি দীর্ঘ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যা নিয়েই সরব বিরোধীরা। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তকে “লজ্জার” বলে তোপ দেগেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ‘‘ব্রিটিশ শাসনেও দেশের মানুষ এত পরাধীন ছিল না।”

অভিষেকের কথায়, “খুব লজ্জার বিষয়। আপত্তিরকর বিষয়। ব্রিটিশ শাসনেও দেশের মানুষ এত পরাধীন ছিল না। ওনারাই সব ঠিক করে দেবেন কে কী বলবে, কে কী খাবে, কে কী পড়বে, কে কীভাবে পুজো করবে? তাহলে আর সংসদ রেখে কী লাভ? নির্বাচন করে সংসদে জনপ্রতিনিধি পাঠিয়ে কী দরকার? ওনারাই সবকিছু করুক!”

প্রসঙ্গত, আগামী ১৮ জুলাই থেকে শুরু হবে সংসদের বাদল অধিবেশন। আসন্ন অধিবেশনে নিষিদ্ধ শব্দগুচ্ছ গুলির তালিকা– ‘বিশ্বাসঘাতকতা’, ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’, ‘লজ্জাজনক’, ‘নির্যাতন’, ‘নাটক’, ‘ভণ্ডামি, ‘নৈরাজ্যবাদী’, ‘শকুনি’, ‘স্বৈরাচারী’, ‘বিনাশপুরুষ’, ‘খলিস্তানি’, ‘জয়চাঁদ’, ‘তানাশাহি’, জুমলাজীবী’, ‘বাল বুদ্ধি’ , ‘কোভিড স্প্রেডার’, ‘স্নুপগেট’, ‘অ্যাশেমড’, ‘বিট্রেড’ শব্দের প্রয়োগ। অভিষেক সংবাদ মাধ্যমের সামনে এখান থেকে বেশকিছু শব্দগুচ্ছ তুলে ধরে বলেন, “আপনারাই বলুন, এগুলি অসংসদীয়?”

একইসঙ্গে জাতীয় প্রতীক বিতর্কেও এদিন মুখ খোলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, “জাতীয় প্রতীকের উদ্বোধন কেন রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে করানো হল না? আসলে মুখে দলিত, আদিবাসীদের, তপশিলিদের রাষ্ট্রপতি করা হচ্ছে বলে প্রচার করলেও বিজেপি আসলে এই পদকে সম্মানই করে না। মর্যাদা দেয় না। ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপতিকে ডাকা হয় না রাম মন্দিরের উদ্বোধনেও। কেন রাষ্ট্রপতিকে ডাকা হয়নি? তপশিলি জাতি, উপজাতিদের কথা মুখে বললেও আসলে তাঁদের অবহেলা করে এই সরকার।”

এরপরই অভিষেকের সংযোজন ভারতবর্ষের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার থেকেও খারাপ হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকে গ্যাস, কেরোসিনের দাম যেভাবে বেড়েছে, তাতে না গ্যাসে না কেরোসিনে, মানুষ কোনওটাতেই রান্না করতে পারছে না। তাই জাতীয় প্রতীক বিতর্কের চেয়েও মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের বিষয়গুলি দেশের সাধারণ মানুষের কাছে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো নিয়ে তৃণমূল লড়াই করবে। আমরা মাঠে ময়দানে প্রতিবাদ করবো। একুশে জুলাই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে দিক নির্দেশিকা নিয়ে লড়াই আরও জোরদার হবে।”

আসলে দিল্লির কাছে নিজেদের নম্বর বাড়াতে গিয়ে সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা মিথ্যাচার করে বাংলার নাম বদনাম করছে, এদিন সে প্রসঙ্গ তুলে অভিষেক বলেন, “সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা তো নিজেরাই বলে বেড়াচ্ছেন টাকা নাকি মোদিজির টাকা। তাই আটকে দিয়েছে। ফলে বাংলার সঙ্গে বঞ্চনার কথা তো বিজেপির নেতারাই স্বীকার করে নিচ্ছেন। সব জায়গায় গিয়ে মিটিং করে বলবো এদের দ্বিচারিতা। বিজেপির নেতারা এখন যা বলছে, আমরা একথা অনেক আগেই বলেছি। বাংলার প্রাপ্য টাকা দিক কেন্দ্র। কেন্দ্রের পঞ্চায়েত প্রতিমন্ত্রীও বলছেন, বাংলায় কোনও দুর্নীতি নেই। কেন্দ্রের টিমও বলছে দুর্নীতি নেই। তাই যতই চেষ্টা করুন বাংলা আপনাদের তল্পিবাহক হবে না। বাংলাকে ভাতে মারা যাবে না, যতদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, যতদিন তৃণমূল আছে বাংলার গায়ে আঁচড় লাগতে দেওয়া হবে না।”

এদিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ক্রস ভোট প্রসঙ্গ উঠতে, অভিষেকের ছোট্ট জবাব, “আমরা দরজা খুললে বাংলায় বিরোধী দলের তকমাই চলে যাবে বিজেপির। তাই ওরা যত কম এসব বলে তত ওদের জন্য মঙ্গল।” নাম না করে শিশির অধিকারী ও দিব্যেন্দু অধিকারীকেও তোপ দাগেন অভিষেক। দিল্লির কাছে নম্বর বাড়াতে চায় বলেই অধিকারী পরিবারের এই দুই সদস্য তৃণমূলের টিকিটে জিতে সাংসদ হয়েও দিল্লিতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিতে চান। এটাই তাঁদের কাছে অভিপ্রেত। যাঁরা দিল্লি গিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরে এসেছেন। আর এরা দিল্লির কাছে নিজের মেরুদন্ড বন্ধক দিচ্ছেন, বক্তব্য অভিষেকের।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকেলে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কে একুশে জুলাই উপলক্ষ্যে দূরের জেলাগুলি থেকে আসা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ও প্রতিনিধিদের জন্য যে অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করা হচ্ছে তা পরিদর্শনে আসেন অভিষেক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী সুজিত বসু, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায়, বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী, সব্যসাচী দত্ত, দেবরাজ চক্রবর্তী-সহ নেতৃত্ব।

সেন্ট্রাল পার্ক পরিদর্শনের পর অভিষেক বলেন, “দু’বছর পর ফের ধর্মতলায় হচ্ছে একুশে জুলাই সমাবেশ। তাই বাড়তি উৎসাহ, উদ্দীপনা রয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসবেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা নিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু হবে। কোভিড বিধি মেনেই সমস্ত ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে। সিসিটিভিতে নজরদারি চলবে। সেই প্রস্তুতি দেখতেই এসেছিলাম। এবার একটু আগেই জেলাগুলি থেকে মানুষ আসবেন। ১৭ তারিখের মধ্যে শেষ হবে অস্থায়ী ক্যাম্প।”

আরও পড়ুন- দেশের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার থেকেও ভয়ানক, এজেন্সির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুললেন অভিষেক

 

 

 

 

Related articles

ধর্মীয় বই কিনতে গিয়ে ২ কোটি টাকার প্রতারণার ফাঁদে কলকাতা ইসকন! গ্রেফতার ১ 

ধর্মীয় বই কেনার অর্ডার দিতে গিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হল কলকাতা ইসকন। অভিযোগ, অর্ডার অনুযায়ী...

বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের সৌজন্যে হারানো পুলিশের চাকরি ফিরে পাচ্ছেন বাবা

কয়েকদিন আগেই আইসিসি একদিনের বিশ্বকাপ(ICC World Cup)  জিতেছে ভারতীয়  মহিলা দল। মেয়েদের সাফল্যে গর্বিত মা-বাবারা। তবে বিশ্বকাপজয়ী মেয়ের...

গ্যাস-সমস্যায় নিঃশ্বাসের পরীক্ষা: যুগান্তকারী আবিষ্কারে বিশ্বে স্বীকৃতি বাঁকুড়ার চিকিৎসকের

একটি সাধারণ সমস্যা, যাতে জর্জরিত বর্তমান যুবসমাজ থেকে শিশুরা পর্যন্ত। গ্যাস বা গ্যাসট্রাইটিসের মতো সমস্যা নির্ধারণ করার জন্য...

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগে বাড়তে পারে আসন সংখ্যা, জানালো এসএসসি 

রাজ্যের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের ফলাফল ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। প্রকাশিত ফল অনুযায়ী,...
Exit mobile version