একুশের মঞ্চেই শুভেন্দু বলেছিলেন “বিজেপি বহিরাগত”, অতীতের ভিডিও তুলে খোঁচা কুণালের

তৃণমূলের সবচেয়ে বড় জনসমাবেশ একুশে জুলাইয়ের মঞ্চকে দফায় দফায় আক্রমণ শানিয়ে চলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। অথচ শেষ একুশে জুলাইয়ের জনসমাবেশে স্বশরীরে উপস্থিত থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে একেবারে চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছিলেন এই শুভেন্দু। বর্তমান বিজেপি নেতার অতীতের সেই ভাষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরে একুশে জুলাইয়ের আগের রাতে নীতিহীন শুভেন্দুর পাল্টি খাওয়ার ছবিটা পাশাপাশি আয়নায় তুলে ধরলেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ।

২০১৯ সালে একুশে জুলাইয়ের মঞ্চে ভাষণের সেই ভিডিওতে শুভেন্দুকে বলতে শোনা যাচ্ছে, বিজেপি একটি বাহারি দল। এরা বাংলার সংস্কৃতি বোঝে না। পাশাপাশি বিজেপিকে বহিরাগত বলে তোপ দেগেছিলেন খোদ শুভেন্দু অধিকারী। সেদিন একুশের মঞ্চ থেকে শুভেন্দু বলেছিলেন, “আমরা চাই তৃণমূল কর্মীরা চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী দিন থেকে উন্নয়নের লড়াইতে ফিরে যাক। আর যারা উন্নয়ন করে না, ভারতবর্ষকে বেচে দিয়েছে, শেষ করে দিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আজকে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উন্নয়নকে অস্ত্র করে, মানুষকে নিয়েই হবে সেই আন্দোলন—এটাই আমাদের প্রার্থনা।”

লক্ষ জনতার উদ্দেশে শুভেন্দু সেদিন বলেছিলেন, “আমি আপনাদের কাছে বলব, এই যে ভারতীয় জনতা পার্টির নেতারা, তাঁরা বাংলার সংস্কৃতি জানেন না। সংস্কৃতি যদি জানতেন, তাহলে ‘১৮ সালের দুর্গাপুজোতে মা দুর্গার পুজোতে কালীঠাকুরের ছবি লাগিয়ে দুর্গা মাইকি জয় বলতেন না।” এখন যখন বিজেপির শুভেন্দু মা কালীর ছবি গলায় ঝুলিয়ে রাজভবনে যান তখন অনেকেরই হয়তো পুরনো সেই দিনের কথা মনে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, সেদিন শুভেন্দু বলেছিলেন, “এরা যদি বাংলার সংস্কৃতি জানত, তাহলে বীরভূমে গিয়ে শান্তিনিকেতনকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্থান বলত না। এরা যদি বাংলার সংস্কৃতি জানত তাহলে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙত না। আর এদের নেতা বলত না, বিদ্যাসাগর সহজপাঠ লিখেছিলেন।” বিজেপিকে ‘বাহারি’ তোপ দেগে তিনি বলেন, “এই বাহারিদের বিরুদ্ধে বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে জননেত্রীর (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) আদর্শে দীক্ষিত হয়ে এগোতে হবে।”

তার চেয়েও চমকপ্রদ বিষয় হলো তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণের শেষে যে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দেন তাকে বরাবর কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে শুভেন্দু সহ বিজেপি নেতাদের। তাদের অভিযোগ, তৃণমূল বাংলাদেশের স্লোগান ধার নিয়েছে, এবার পশ্চিমবাংলাটাকে পশ্চিম বাংলাদেশ বানাবে। অথচ তিন বছর আগে একুশে জুলাই এর মঞ্চে শুভেন্দু তাঁর বক্তব্য শেষ করেছিলেন “জয় বাংলা” স্লোগান দিয়ে।

অতীতের সেই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর বর্তমান বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী প্রসঙ্গে রাজনৈতিক মহলের দাবি, একেবারে ভোল বদলের চরমসীমা। আসলে দিল্লির নেতৃত্বের কাছে নম্বর বাড়াতে শুভেন্দু তার অতীত ভুলেছে। বর্তমানে ‘ফাঁকা কলসি বাজে বেশি’ টাইপ আচরণ করে চলেছেন। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ অবশ্য আগেই জানিয়েছেন, “সারদা নারদা থেকে বাঁচতে গলায় বকলেস পড়ে বিজেপি পার্টি অফিসের সামনে ঘুরঘুর করছেন শুভেন্দু।” এবার এই ভিডিওর সঙ্গে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “ওওওওওওও শুভেন্দু….
21 জুলাই, 2019। ধর্মতলায় কোভিডের আগে শেষ প্রকাশ্যসভায় শুভেন্দুর ভাষণ। বাকি আরও আমার কিছুদিন আগের পোস্ট এবং বিশ্ব বাংলা সংবাদের পোস্টে খুঁজলেই পাবেন।
শুধু অন্যের পুরনো ভিডিও ছাড়লে হবে? বিজেপি, এগুলোও দেখো…”

আরও পড়ুন- একুশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে মমতার হুঙ্কার, কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মঞ্চ

Previous articleএকুশের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখে মমতার হুঙ্কার, কেন্দ্রের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মঞ্চ
Next articleবিদ্যুতের খরচে লাগাম টানতে সরকারি আধিকারিকদের স্যুট না পরার নিদান শেখ হাসিনার