প্রয়াত হলেন বোলপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক পদ্মশ্রী প্রাপ্ত জনদরদী চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee Passed Away)। বোলপুরে ‘এক টাকার ডাক্তার’ নামেই খ্যাত ছিলেন ডা: সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। গরিব মানুষের সাহায্যার্থে এক টাকায় চিকিৎসা করতেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্য জনিত রোগের কারণে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার সকাল ১১ টা ২৫ মিনিট নাগাদ মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় কেবলমাত্র এক টাকায় রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়েছেন বছরের পর বছর, এমনটাই নয়। এর পাশাপাশি তাঁর জনপ্রিয়তা, বীরভূমবাসীর মনে তাঁর বিশেষ জায়গা তৈরি হওয়ার পিছনে ছিল তাঁর একাধিক গুণ। খুব অসুবিধায় না পড়লে কোনও ভাবেই চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখেননি চিকিৎসক সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়। গত বছর এপ্রিল মাসে তিনি একবার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই সময় বেশ কয়েকদিন বন্ধ ছিল তার চেম্বার। পরে সুস্থ হয়ে উঠে আবারও তিনি নামেন তাঁর মহান এই কর্মযজ্ঞে।
চিকিৎসা ক্ষেত্রে ডা: সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান অনস্বীকার্য।
প্রায় ৫৮ বছর ধরে এক টাকায় চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে গিয়েছেন সাধারণ মানুষকে। বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ জেলার প্রান্তিক এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ দীর্ঘ বহু বছর ধরে এক টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা করাতেন।
ডাক্তার সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্বভারতীর কর্ম সমিতির রাষ্ট্রপতির মনোনীত সদস্য ছিলেন। রাজনৈতিক জীবনে বরাবরই কংগ্রেস ঘরানার মানুষ। বীরভূম জেলার কংগ্রেসের সভাপতি ছিলেন এবং ১৯৮৪ সালে বোলপুরের কংগ্রেসের বিধায়কও ছিলেন তিনি। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়, লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের পারিবারিক চিকিৎসক ছিলেন সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১৯ সালের জুন মাসে যখন এনআরএস হাসপাতালে জুনিয়র চিকিৎসকদের ওপর হামলা হয় সেই সময়ে রাজ্যজুড়ে চিকিৎসকেরা ধর্মঘটে সামিল হন। কিন্তু সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় সেইসময় ধর্মঘটী চিকিৎসকদের পাশে থেকেও চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ রাখেননি একদিনও। তিনি জানিয়েছিলেন, ‘ডাক্তারদের উপর হামলা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। তবে ডাক্তারদের কর্মবিরতিকেও সমর্থন করি না। প্রতিবাদের পথ অন্য হওয়া উচিত। কারণ মুমূর্ষপ্রায় রোগীরা তো নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই ডাক্তারের হাত ধরেন।’
তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বীরভূমবাসী।