Thursday, December 25, 2025

কলকাতা পুলিশের সাফল্য: চিকিৎসকের লক্ষ লক্ষ টাকা জালিয়াতি অনলাইনে, টাকা সহ পাকড়াও তিন অভিযুক্ত

Date:

Share post:

সারা জীবন মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন যিনি, সেবাধর্মকে পরম ধর্ম মেনে আজীবন রোগীদের কথা চিন্তা করতে করতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা এক টাকার ডাক্তারবাবুও (Doctor)রেহাই পেলেন না। জীবনের অন্তিম লগ্নে পৌঁছে জালিয়াতির শিকার হতে হল তাঁকেও। এক অত্যন্ত হৃদয় বিদারক এই ঘটনায় পুলিশের (Kolkata Police) সদর্থক ভূমিকা চোখে পড়ার মতো। গত জুলাই মাসে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে ছলে গেছেন ‘এক টাকার ডাক্তার’ ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Sushovan Banerjee)। কিডনির সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে ৮৪ বছর বয়সে জীবনাবসান হয় তাঁর। সেই মাসেই তাঁর মেয়ে যিনি নিজেও পেশায় ডাক্তার সেই ডাঃ মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় (Dr. Mandira Banerjee)বাবার অসুস্থতার কারণে একটি হিমো-ডায়ালিসিস মেশিন (Hemo-dialysis machine) কেনার চেষ্টা করছিলেন। অনলাইন সার্চ করে ‘রাধে কিডনি ইকুইপমেন্ট’ নামক এক সরবরাহকারীকে খুঁজে বের করেন তিনি, যার ঠিকানা গুজরাটের আহমেদাবাদ । বেশ কয়েক দফা কথোপকথনের পর তাঁর নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে বিক্রেতার অ্যাকাউন্টে মোট ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা কয়েক কিস্তিতে জমা করেন ডাঃ মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সেই ঘটনার সূত্রপাত গত ১৩ জুলাই। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিছুতেই হিমো-ডায়ালিসিস মেশিন ডেলিভারি হচ্ছিল না। এরপর ইনভয়েস থেকে যোগাযোগের নম্বর খুঁজে তিনি জানতে পারেন বিক্রেতা অবৈধ ভাবে এই মহিলার ফোন নম্বর ব্যবহার করেছেন। বুঝতে পারেন পুরোপুরি প্রতারিত হয়েছেন তিনি। এরপরই মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ডাঃ মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর তাঁর কেস সোজা চলে যায় ইস্ট সাবার্বান ডিভিশনের সাইবার শাখার কাছে। তদন্তকারী অফিসারেরা প্রথমেই যেসব ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েছিল সেখান থেকে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। ওইসব ব্যাঙ্কের নোডাল অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাইবার সেল। পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট খতিয়ে দেখা যায়। অবশ্য ততক্ষণে সেইসব অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা পাচার হয়ে গেছে। এবং দ্বিতীয়বার জমা পড়েছে অন্যান্য আরও কিছু অ্যাকাউন্টে। সঙ্গে সঙ্গেই যেসব ব্যাঙ্কে টাকা জমা পড়েছিল, সেগুলির এবং অ্যাকাউন্টগুলির মালিককে খুঁজতে তৎপর হয়ে ওঠে সাইবার শাখা। এই কেসে তিনটি নাম উঠে আসে মিলন মানসুখভাই ভদোদরিয়া, কৃত্তিকা রবীন্দ্র কুমার, এবং রবীন্দ্র কুমার সুতার। তিনজনেই আহমেদাবাদের বাসিন্দা। এরপর ইস্ট সাবার্বান ডিভিশনের মনিটরিং সেল-এর সাহায্যে প্রযুক্তিগত তথ্য ও অন্যান্য খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করে তিন অভিযুক্ত সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আহমেদাবাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় মানিকতলা থানার পুলিশের একটি দল। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য সূত্রের সহায়তায় ১ অগাস্ট ভদোদরিয়া ও সুতারকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে আসেন মাণিকতলা থানার আধিকারিকরা, এবং সাইবার শাখার সাহায্যে উদ্ধার করা হয় পুরো টাকাটাই। ডাঃ সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায় আজ আর নেই, কিন্তু ডাক্তারকন্যা ডাঃ মন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সব টাকা ফেরত পেয়েছেন। ধন্যবাদ জানিয়েছেন কলকাতা পুলিশকে। এত দ্রুত কেসের নিষ্পত্তি করার জন্য।

spot_img

Related articles

এক দশক পর শীতলতম বড়দিন পেল বাংলা!

যিশু জন্মদিনের সকালে (Christmas morning) কলকাতার তাপমাত্রা (Kolkata temperature) নামলো ১৩.৭ ডিগ্রিতে। শীতের আমেজে জমজমাট বড়দিনের আবহাওয়া। দক্ষিণবঙ্গে...

মধ্যরাতে কর্নাটকের ট্রাক-বাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঝলসে মৃত্যু অন্তত ১০ জনের

বড়দিনে ভয়াবহ দুর্ঘটনা কর্নাটকে। বেসরকারি একটি বাসের সঙ্গে ট্রাকের সংঘর্ষের (bus truck accident) ফলে বাসে আগুন ধরে যাওয়ায়...

ক্রিসমাসে রক্তাক্ত ঢাকা, চার্চ টার্গেট করে বিস্ফোরণে মৃত ১

বড়দিনের উৎসব শুরু হবার আগেই বুধবার সন্ধ্যায় ককটেল বিস্ফোরণে রক্তাক্ত বাংলাদেশের ঢাকা (Blast in Dhaka, Bangladesh)। মগবাজার ফ্লাইওভারে...

ক্রিসমাসে ঝলমলে পার্কস্ট্রিট, সান্টা টুপি মাথায় বড়দিনের সকালে পিকনিক মুডে বাঙালি

দেখতে দেখতে বছর প্রায় শেষ হতে চলল। ক্রিসমাসের মধ্য দিয়েই যেন বর্ষবরণের আনন্দ অনুষ্ঠানের সূচনা হয়ে যায়। বড়দিনের...