বাবা দিনমজুর। সংসারে দিন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। বছর দুয়েকের ছোট্ট ভাইয়ের মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল কিশোর দাদার। কিন্তু অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করলে গুণতে হবে প্রায় হাজার খানেক টাকা। আর হাসপাতালের অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে মৃত ছোট্ট ভাইকে কোলে নিয়ে গ্রামের বাড়ির পথে হাঁটা দিল ১০ বছর বয়সী দাদা। সম্প্রতি যোগী সাম্রাজ্য উত্তরপ্রদেশের বাঘপতে (Uttarpradesh Baghpat) এমনই এক মর্মান্তিক ভিডিও সামনে এসেছে। ভাইরাল ভিডিও (Viral Video) দেখে রীতিমতো চোখে জল নেটাগরিকদের। বিষয়টিকে এত সহজে মেনে নিতে পারছেন না কেউই। দুর্ঘটনায় একদিকে যেমন কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে সৎমাকে (Step Mother), ঠিক তেমনই নিস্তার পাচ্ছে না যোগী সরকারও (Yogi Adidtyanath Government)।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৃত শিশুর নাম কালা কুমার (Kala Kumar)। গত শুক্রবার বাঘপতে দিল্লি-সাহারানপুর হাইওয়ের (Delhi Saharanpur Highway) শিশুর টানা কান্নায় বিরক্ত হন সৎমা সীতা। রাগে অন্ধ হয়ে শিশুটিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে দেন সৎমা। তারপরই গাড়ির তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হয় বছর দুয়েকের কালা কুমারের। দুর্ঘটনার পর দেহ হাসপাতালে পাঠানো হলেও ঘটনাস্থেলেই শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেই জানিয়ে দেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। অন্যদিকে ঘটনাস্থল থেকে অভিযুক্ত সৎমাকে গ্রেফতার (Arrest) করে পুলিশ। যদিও সৎ মায়ের দাবি, শিশুর ক্ষতি করার কোনও উদ্দেশে তিনি এমন কাজ করেননি। রাগে, অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ধাক্কা দেন শিশুটিকে। পরে কালার দেহ ময়নাতদন্তের (Post Mortem) জন্য জেলা হাসপাতালে (District Hospital) পাঠানো হয়। আর হাসপাতাল থেকে ফেরার সময় এমন মর্মান্তিক ছবি সামনে আসে। যেখানে দেখা যায় ছোট ভাই কালাকে নিয়ে গ্রামের বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় বড় ভাই সাগর কুমার।

তবে মৃতের পরিবারের অভিযোগ, বারবার কাকুতি-মিনতি সত্ত্বেও হাসপাতালের কেউই একটি অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবস্থা করে দেয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায় তাঁদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য হাসপাতালে হাজার টাকা জমা দিতে হবে। কিন্তু বাবা প্রবীণ কুমার পেশায় দিনমজুর হওয়ার কারণে সেই টাকা জমা দেওয়া হয়নি। তবে নিজেদের অবস্থানে নাছোড় অবস্থান নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। টাকা না দিলে অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করা সম্ভব নয় বলে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়।

আর এমন মর্মান্তিক দৃশ্য সামনে আসতেই নিন্দার ঝড় ওঠে সব মহলেই। উত্তর প্রদেশের যোগী সরকারের দিকে আঙুল তুলে একাংশের অভিযোগ, পয়সা না দিতে পারলেও একজন মৃত ছোট্ট শিশুকে কী মানবিকতার (Humanity) খাতিরেও গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হল না? যোগীর রাজ্যে এটাই কি উন্নয়নের কভার ইমেজ? তবে অনেকেই সৎমায়ের কুৎসিত মনোভাবের তীব্র নিন্দা করে বলেন, এ কেমন মা? একজন মা কী করে তাঁর সন্তানের উপর এমন জঘন্য আচরণ করতে পারেন! নিন্দায় সরব নেটিজেনরা।

আরও পড়ুন- “এই প্রধানমন্ত্রীকে মানি না”, তৃণমূলের ছাত্রসমাবেশে মোদিকে তুলোধনা সায়নীর
