দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের (India Gate) সামনে বসেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর (Netaji Subhash Chandra Bose) পূর্ণাবয়ব মূর্তি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক ভাবে মূর্তিটি উন্মোচন করলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি বসতে চলেছে ইন্ডিয়া গেটের সামনে। যে ছাউনির তলায় আগে অমর জওয়ান জ্যোতি ছিল, সেখানেই বসান হয়েছে মূর্তিটি। তাঁর আবরণ উন্মোচন করার পর ইন্ডিয়া গেটের মূল অনুষ্ঠান মঞ্চে নিজের বক্তব্য পেশ করার সময় নেতাজিকেই অখন্ড ভারতের আদর্শ হিসেবে তুলে ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)।
২ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোর গ্রানাইট পাথর খোদাই করে তৈরি হয়েছে নেতাজি মূর্তি। এই মূর্তিটির ওজন প্রায় ৬৫ হাজার কেজি, উচ্চতা ২৮ ফুট। মূর্তির আবরণ উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেই নেতাজি কন্যা। তিনি আগেই জানিয়েছিলেন এই অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে তিনি সমর্থন করেন না। পাশাপাশি নিজের ইচ্ছে মতো কেন্দ্রীয় সরকারের এইভাবে সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তির আবরণ উন্মোচনের বিষয়টিকেও তিনি ভাল চোখে দেখেননি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) আজ নেতাজি ইন্ডোরে জানান, তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার আমন্ত্রণ জানান হয়নি। যার ফলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেননি। এদিন নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যে বাংলার কথা উঠে আসে। নিজের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর বাসভবনে যাওয়ার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান অখন্ড ভারতের আদর্শ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। দেশ নেতাজীর আদর্শ মেনে চললে আরও অনেক উন্নত হত বলে মন্তব্য করেন মোদি। শুধুমাত্র সুভাষচন্দ্র বসুই নন স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর পূর্তির কথা উল্লেখ করে, ভারতের গর্বের কারণ যেসব মনীষীরা, তাঁদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
রাজপথের নাম পরিবর্তিত হয়ে কর্তব্য পথ হয়েছে আজই। মোদির মতে এই ঘটনাই প্রমাণ করে দাসত্বের মানসিকতা থেকে মুক্তির পথে চলতে শুরু করেছে ভারত। ব্রিটিশ শাসনের কোন চিহ্নই আগামীতে ভারতে থাকবে না এমনটাই ঘোষণা তাঁর। তিনি জানান ‘কর্তব্যপথ’ দেশের কালচারাল ইনফ্রাস্ট্রাকচারের বড় উদাহরণ। সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামো গত উন্নয়নের প্রসঙ্গও তুলে ধরেন তিনি। আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে কর্তব্যপথের শ্রমিকদের পরিবারকে আমন্ত্রণ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন শ্রম থেকেই স্বপ্ন তৈরি হয় তাই শ্রমিক এবং মজুরদের উদ্দেশ্যে বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে। যেভাবে সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিকাঠামোগত উন্নয়নের প্রসঙ্গত তুলে এদিন নিজের বক্তব্য পেশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, তাতে রাজনৈতিক মহলের ধারণা নিজের দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং ব্যর্থতাকে আড়াল করতেই স্বপক্ষে যুক্তি খাঁড়া করে দেশবাসীর মন ঘোরাতে চাইলেন মোদি। অনেকেই বলছেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি এভাবে উন্মোচন করে তিনি কি যথার্থ সম্মান দিতে পারলেন দেশনায়ককে তা নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থেকেই যায়।