Wednesday, November 5, 2025

দুর্গাপুজোয় সপ্তমীর অনুষ্ঠান শুরু হয় নবপত্রিকা বা কলাবউকে স্নান করানোর মাধ্যমে। পুজোর দিনগুলোয় নবপত্রিকাকে দেখা যায় কাপড় দিয়ে ঢাকা অবস্থায় গণেশের পাশে থাকতে। সপ্তমী থেকে দশমী, এই চার দিন তাঁরও পুজো হয়। নবপত্রিকার বিসর্জনেও আলাদা নিয়ম রয়েছে। কিন্তু, কী এই নবপত্রিকা?

নবপত্রিকা শব্দের অর্থ নয়টি গাছের পাতা। তবে, দুর্গাপুজোর নবপত্রিকাতে থাকে নয়টি উদ্ভিদ। সেগুলো হল কদলী বা কলা, কচু, হরিদ্রা বা হলুদ, জয়ন্তী, বিল্ব বা বেল, দাড়িম্ব বা ডালিম, অশোক, মানকচু ও ধান। যাকে একসঙ্গে সংস্কৃতে বলা হয়, ‘রম্ভা কচ্চী হরিদ্রাচ জয়ন্তী বিল্ব দাড়িমৌ। অশোক মানকশ্চৈব ধান্যঞ্চ নবপত্রিকা।

’নবপত্রিকার আচারে কলাগাছের সঙ্গে আটটি মূল ও পাতা-সহ উদ্ভিদ একসঙ্গে একজোড়া বেল-সহ শ্বেত অপরাজিতার লতা দিয়ে বেঁধে লালপেড়ে সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর মতো সাজানো হয়। বেলদুটি দিয়ে মহিলাদের স্তনযুগলের মতো করা হয়। তারপর সিঁদুর দিয়ে গণেশের ডান দিয়ে দাঁড় করিয়ে পুজো করা হয়। যাকে বলা হয় কলা বউ।

নবপত্রিকার এই নয়টি উদ্ভিদকে দেবী দুর্গার নয়টি রূপের প্রতীক হিসেবে কল্পনা করা হয়। এর মধ্যে কলাগাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী রূপে ব্রহ্মাণীকে, কচুর অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে কালিকাকে, হলুদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে উমাকে, জয়ন্তী গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে কার্তিকীকে, বেল গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে শিবাকে, দাড়িম্ব গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে রক্তদন্তিকাকে, অশোক গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে শোকরহিতাকে, মানকচু গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে চামুণ্ডাকে, ধান গাছের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে লক্ষ্মীকে পুজো করা হয়। যাকে একত্রে বলে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’। সংস্কৃতে বলা হয়, ‘রম্ভাধিষ্ঠাত্রী ব্রহ্মাণী, কচ্বাধিষ্ঠাত্রী কালিকা, হরিদ্রাধিষ্ঠাত্রী উমা, জয়ন্ত্যাধিষ্ঠাত্রী কার্তিকী, বিল্বাধিষ্ঠাত্রী শিবা, দাড়িম্বাধিষ্ঠাত্রী রক্তদন্তিকা, অশোকাধিষ্ঠাত্রী শোকরহিতা, মানাধিষ্ঠাত্রী চামুণ্ডা ও ধান্যাধিষ্ঠাত্রী লক্ষ্মী।’ এই নবদুর্গার পুজোমন্ত্র হল, ‘নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গায়ৈ নমঃ’।
অনেকে নবপত্রিকাকে মনে করেন গণেশের স্ত্রী। কিন্তু, তা একেবারেই নয়। হিন্দু লোকাচারে স্ত্রী থাকেন স্বামীর বাঁ দিকে। কিন্তু, নবপত্রিকা থাকে গণেশের ডান দিকে। দেবীপুরাণে কিন্তু নবদুর্গার কথা থাকলেও নবপত্রিকার কোনও উল্লেখ নেই। মার্কণ্ডেয় পুরাণেও নেই। কালিকাপুরাণে আবার সপ্তমীতিথিতে পত্রিকা পূজার কথা থাকলেও নবপত্রিকার উল্লেখ নেই। তবে, কৃত্তিবাসী রামায়ণে রামচন্দ্রের নবপত্রিকা পূজার উল্লেখ আছে। তাই গবেষকরা মনে করেন, নবপত্রিকার পূজা আসলে শস্যদেবীর পূজা। যেখানে শস্যকেই বধূরূপে দেবীর প্রতীক হিসেবে পূজা করা হয়। আর, সেই থেকেই এসেছে কলাবউ স্নানের প্রথা।

Related articles

দিনে দুপুরে স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ! অসমে বাড়ছে ক্ষোভ

পথে-ঘাটে বেরোনো বিজেপি শাসিত অসমে কতটা বিপজ্জনক মেয়েদের জন্য, ফের একবার প্রমাণিত হল। রোজকার স্কুলের রুটেও নিরাপদ নয়...

মেয়ের কৃতিত্বে চোখে জল মায়ের, পছন্দের পদেই বিশ্বজয়ীকে বরণের পরিকল্পনা

রিচা ঘোষের( Richa Ghosh) সাফল্যে উচ্ছ্বাসে ভাসছে গোটা শিলিগুড়ি।  বিশ্বজয়ীর মেয়েতে বরণ করে নেওয়ার অপেক্ষায় গেটওয়ে অফ পাহাড়।...

এআইএফএফ-ফিফা অ্যাকাডেমিতে বাংলার রাজ, অভিনন্দন ক্রীড়ামন্ত্রীর

ভূমিপুত্রদের তুলে আনার লক্ষ্য নিয়েই ক্ষমতায় আসার পর বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি(Bengal Football Academy) তৈরি করে তৃণমূল সরকার। তৃণমূল...

হরিয়ানায় ভোটচুরি, ব্রাজিলীয় মডেলের ছবিতে ২২টি কার্ড! বিজেপির বিরুদ্ধে মারাত্মক অভিযোগ রাহুলের

SIR-এর নামে ভোটার তালিকা থেকে বিরোধীদের নাম বাদ আর নিজেদের লোকেদের নাম ঢোকানোর ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি (BJP)। নিজেদের...
Exit mobile version