Thursday, December 18, 2025

কার্নিভালই বিসর্জনে দুর্ঘটনা এড়ানোর পথ

Date:

Share post:

দেবাশিস বিশ্বাস

মালনদীতে বিসর্জনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কেন এই দুর্ঘটনা? সেটা ভাবা বেশি জরুরি। রাজ্য জুড়ে গ্রাম-গঞ্জে যে ভাবে বিসর্জন নামক পর্বটি হয় তা প্রত্যক্ষ করলে অনেকেই ঘবড়ে যাবেন। শত নয়, সহস্র লোকের ভিড়, অতি অপরিসর জায়গা, তার মধ্যে নানা বাজি (রংমশাল থেকে চকলেট বোম)। তার মধ্যে সিদ্ধি বা অন্যান্য মাদক সেবন করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে উদ্দাম নৃত্য, ছোট নদীর চরে তীব্র ভিড়। এর সঙ্গে রয়েছে পুজো কমিটির মধ্যে প্রতিযোগিতা। সব আমলে এটা হয়েছে। কারণ এই দিনটার জন্য বহু মানুষ গ্রাম-গঞ্জে সারা বছর অপেক্ষা করেন।
এর পাশাপাশি আছে প্রকৃতির খেয়াল। উত্তরবঙ্গের (North Bengal) তরাই, ডুয়ার্স ছাড়াও ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া এসব জায়গায় বেশ কিছু ছোট ছোট নদী আছে। যেখানে সারা বছর তেমন জল থাকে না কিন্তু বর্ষায় ফুলে ফেঁপে ওঠে। বন্যা ও হয়। জল বাড়ে রাত ভোর বৃষ্টি হলে, এলাকা প্লাবিত হয়, রাস্তা ঘাট ডুবে যায়। এটা সাধারণ বান। আবার বৃষ্টি থামলে জল দ্রুত নেমেও যায়। কিন্তু কিছু বাণ আসে একেবারেই আচমকা। অতি অল্প সময়ে প্রবল প্লাবন। এটাকে “পাগলা বান”, “ঝটকা বান”, “হরপা বান” বলা হয়। ঝাড়গ্রামের দুলুং, তরফেনি ইত্যাদি নদীতে দেখি। হরপা খুব ই কম আসে। এই পাগলা বান আসলে যদি কেউ নদীর কাছে থাকলে বিপদ ভয়ানক হতেই পারে। তবে গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ দারুণ সাঁতার জানেন বলে তেমন বিপর্যয় হয় না। আর তাঁরা জলে একটা আওয়াজ শুনে আন্দাজও করতে পারেন। জঙ্গলমহলেও বহু ছোট সেতু আছে ওই নদীর উপর দিয়ে, যার উপর দিয়ে সারা বছর বাস-লরি যাতায়াত করে। কিন্তু বানের সময় রাস্তা উপচে যায় জলে, তখন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। আবার জল নেমে গেলে চলে। কিন্তু পাগলা বান আসলে সব হিসেব গুলিয়ে যায়। আমি নিজে পাগলা বানে একটা ১০ চাকার বড় লরিকে পুরো ভেসে যেতে দেখেছিলাম।
মনে রাখতে হবে, পাগলা বান সাধারণত বর্ষাকালেই হয়। বছরের অন্য সময়ে তেমন দেখা যায় না। দুর্ভাগ্য এই বছর দুর্গাপুজোও (Durga Pujo) বর্ষাতেই হয়েছে। তাই বিপদ একটা ছিল। তা সত্বেও মিলিয়ে নেবেন ওই জায়গায় সামনে বছর ও বিসর্জন হবেই।

বরং ভাবা উচিত নির্দিষ্ট বিসর্জনের জায়গায় ঘাট ভালো ভাবে বানানো হোক, সেখানে বিপদ মোকাবিলার ব্যবস্থা রাখা হোক, প্রচুর মানুষ যেন আসতে পারেন সে ব্যবস্থা রাখা হোক। রাখা হোক ডুবুরি, অ্যাম্বুল্যান্স। এরকম কিছু জায়গায় শোভাযাত্রা (কার্নিভাল) করেই সব প্রতিমা বিসর্জনের ব্যবস্থা হোক। আমার মতে, কার্নিভাল বন্ধ করার মধ্যে কোনও বাহাদুরি নেই। হয়তো ওই কার্নিভালই সমাধানের পথ।

 

spot_img

Related articles

নোটিশ পাঠানো শুরু! প্রবীণ-অসুস্থ ভোটারদের বাড়িতে শুনানির ভাবনা নির্বাচন দফতরের

ইতিমধ্যেই রাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে শুনানির নোটিশ পাঠানোর প্রক্রিয়া। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচন...

মানহানির অভিযোগে প্রাক্তন স্ত্রীর বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ কুমার শানু

সংগীতজগতে দীর্ঘ চার দশকের সাফল্যের কাহিনি থাকলেও ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্কে ফের শিরোনামে কিংবদন্তি গায়ক কুমার শানু। প্রাক্তন স্ত্রী...

বড়দিন ও বর্ষবরণে আইনশৃঙ্খলা আঁটসাঁট, পুলিশের ছুটিতে নিষেধাজ্ঞা রাজ্য জুড়ে 

বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে শুরু হয়ে গেল বড়দিনের উৎসব। কলকাতার অ্যালেন পার্ক থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উৎসবের...

বাজেয়াপ্ত যুবভারতীর সিসিটিভি ফুটেজ, নজরে শতদ্রু ঘনিষ্ঠরা

যুবভারতীতে মেসি(Messi) ইভেন্ট চরম বিশৃঙ্খলায় তদন্ত শুরু করেছে রাজ্য সরকার গঠিত সিট(SIT)। যুবভারতীর (Yubha bharati) যাবতীয় সিসিটিভি ফুটেজ...